পাকিস্তানে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীত্ব ভাগাভাগি
কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জিতেছে।
নির্বাচনের আগে দলের প্রধান ইমরান একের পর এক জেলে যাওয়ার পর দলের প্রার্থীরা ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য হয়, পিটিআইকে দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি এবং তাদের দলীয় প্রতীক ‘ব্যাট বল’ কেড়ে নেওয়া হয়।
এইভাবে, সরকার কর্তৃপক্ষ তাদের পিছনে ঠেলে দিলেও, তারা পেছন থেকে এসে তাদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেছে, ঘোষিত ফলাফলে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা সংসদে সর্বাধিক সংখ্যক আসন জিতেছে।
ইমরান খানের সমর্থনপুষ্ট স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি আসন ৯৭ টি । আর অন্যান্যরা এর চেয়ে অনেক কম আসন পেলেও শুধুমাত্র ইমরানখানকে থামানোর জন্যই পিপিপি এবং পিএমএল-এন জোটবদ্ধ ভাবে প্রধানমন্ত্রীত্ব ভাগাভাগি করেই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পাকিস্তানে ক্ষমতা ভাগাভাগি সরকার গঠনের পথে হাতছে। তবে এই জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে এখনো কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি দুই দল। পিপিপি শর্ত দিয়েছে যে দলীয় প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রী করা হলেই তারা পিএমএল-এনকে সমর্থন করবে। এদিকে পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরিফও প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে নারাজ। সর্বশেষ খবর হল নওয়াজ এবং বিলাওয়াল এখন প্রধানমন্ত্রীত্ব ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই খবর দিয়েছে Jio TV।
খবর অনুযায়ী, পিএমএল-এন এবং পিপিপি নেতারা আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠনে একমত হয়েছেন। আর এই পাঁচ বছরের মধ্যে আড়াই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন পিএমএল-এন ও পিপিপি প্রার্থীরা। রোববার রাতে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম। সেই আলোচনার পর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষই ‘পাকিস্তানকে বাঁচাতে’ সম্মত হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে কোনো সমাধান হয়েছে কি না তা স্পষ্ট করা হয়নি।
সূত্রের বরাত দিয়ে জিও টিভি জানিয়েছে যে পিএমএল-এন দলই প্রথম সরকার গঠনের জন্য পিপিপিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায়।
পিএমএল-এন নেতারা বলেছেন যে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং এমকিউএম-পাকিস্তান দলের সাথেও যোগাযোগ করছেন। দলটি প্রধানমন্ত্রীর আসনটি নওয়াজ শরিফের জন্যই রাখতে চায়। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি বিলাওয়ালকে এই পদ দেওয়ার কথা বলেছেন। আলোচনা তখন অন্য পর্বে প্রবেশ করে। সেখানে দুই দল সম্ভাব্য সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে। এরপর আড়াই বছর পর পর ক্ষমতা ভাগাভাগির সিদ্ধান্ত হয়।
রবিবার লাহোরের বিলাওয়াল হাউসে বৈঠক হয়। পিপিপির পক্ষে আসিফ আলি জারদারি ও বিলাওয়াল ভুট্টো উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে পিএমএল-এনের পক্ষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, আজম নাজির তারার, আয়াজ সাদিক, আহসান ইকবাল, রানা তানভীর, খাজা সাদ রফিক, মালিক আহমেদ খান, মরিয়ম আওরঙ্গজেব এবং শেজা ফাতিমা উপস্থিত ছিলেন। পিপিপি এবং পিএমএল-এন প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে।
এর আগে পিএমএল-এন এবং এমকিউএম-পি দলের নেতারাও রাজনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয়েছেন। পিএমএল-এন দাবি করেছে, এই দলটিও সরকারে যোগ দিচ্ছে। ওই আলোচনায় দুই দলের নেতা ছিলেন নওয়াজ শরিফ ও খালিদ মকবুল সিদ্দিকী। তবে মকবুল সিদ্দিকী পরে সরকার গঠনের বিষয়ে রাজি হননি। এদিকে জেইউআই-এফ প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমানের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন নওয়াজ শরিফ। সূত্র জানায়, তারাও সম্ভবত সরকারে যোগ দিতে রাজি হয়েছে। JUI-F PML-N এর সাথে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (PDM) নামে একটি জোট গঠন করেছিল এমনকি যখন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তারা সরকার গঠন করে। এটি আবার ঘটলে, এটি হবে পিডিএমের দ্বিতীয় মেয়াদ।
উল্লেখ্য যে ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২৬৬ টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২৬৫ টি আসনে নির্বাচন হয় এবং একটি আসন স্থগিত করা হয়। ফলাফলে দেখা গেছে যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই-এর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বাধিক ৯৬ টি আসনে জয়ী হয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫টি আসন পেয়েছে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন। বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৪টি আসন পেয়েছে।
কিন্তু সর্বোচ্চ আসন পেয়েও ক্ষমতার বাইরেই রয়েছেন ইমরান খান। কারণ তার দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। আবার পিএমএল-এন বা পিপিপির সঙ্গে জোট গড়তে আগ্রহী নয় পিটিআই। ফলে পিএমএল-এন ও পিপিপি এখন জোটগতভাবে ক্ষমতায় আসতে চলেছে। বিষয়টি অবশ্য নির্বাচনের পরদিনই পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রশ্ন এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এর আগেও ২০১৩ সালে, পিএমএল-এন এবং ন্যাশনাল পার্টি (এনপি) বেলুচিস্তানে সমানভাবে ক্ষমতা ভাগ করেছিল। সে সময় দুই দলের দুজন মুখ্যমন্ত্রী আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করেন।