চাল: বাংলাদেশের প্রধান চাহিদা পূরণকারী খাদ্য
চাল এশিয়া অঞ্চল তথাপি বাংলাদেশের মানুষের নিকট দৈনন্দিন প্রিয় খাদ্যের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে। এবং এদেশের প্রায় ৯৯ % মানুষ চালের উপর নির্ভরশীল ।
প্রাচীনকাল থেকেই ধান বা চাল লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রধান খাদ্য। প্রায় ১০,০০০ বছর আগে চীন ও জাপানের রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ধান চাষ শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। এর ব্যাপক চাহিদার কারণে, উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত ধান চাষ করা হয় এবং এমনকি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৬০০ মিটার উচ্চতায়ও ইন্দো-প্যাসিফিক নেপালেও চাল জন্মায়।
দুনিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশের ক্যালরির চাহিদা ধান পূরণ করে। বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম এবং কম্পুচিয়ার প্রায় ৯০% মানুষের প্রধান খাদ্য চাল থেকে প্রাপ্ত ভাত।
এদেশে মোট ফসলি জমির ৭২% ধান চাষের আওতায় রয়েছে। এখানে সারা বছরই ধান চাষ হয়, তাই প্রায় ৭৫ শতাংশ গ্রামীণ কর্মসংস্থান ধান চাষের উপর নির্ভরশীল।
- ধানের অবিকৃত দানা চাল এবং রান্না করা চালকে ভাত বলে।
- বিশেষ খাবার যেমন মুরগীর মাংস , গরুর মাংস, গরুর পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি ইত্যাদি রান্না হয়।
- সুগন্ধি চাল, ঘি এবং বিভিন্ন মশলা দিয়ে রান্না করা হয়।
- ডালের সাথে চালকে মিশিয়ে রানা করলে খিচুড়ি বলে।
- তাছাড়া চাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও পায়েস তৈরি করা যায়।
বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে ধান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি সম্পদের বড় রসদ । বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত জনপ্রতি চালের দৈনিক চাহিদা ৪১০ গ্রাম।
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে এ পর্যন্ত ১,২৯,৫৯০ জাতের ধান/চালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
জলবায়ু
ধান প্রধানত গ্রীষ্মমন্ডলীয় মৌসুমি জলবায়ুর ফসল।
বৃষ্টিপাত
ধান চাষে প্রচুর বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। সাধারণত ১৫০ থেকে ২৫০ সেমি বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়।
উষ্ণতা
সাধারণভাবে, ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে ধান চাষ করা হয়। প্রয়োজনীয় গড় তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাংলাদেশে ধানের মৌসুম
বাংলাদেশে চাষের সময়কালের উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের ধানকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এই তিনটি প্রধান বিভাগ হল আউশ, আমন ও বোরো।
১. আউশ চাল
দ্রুত বা আশু ফসল উৎপাদনের কারণে এই ধানের নামকরণ করা হয়েছে আউশ। এই ধান সাধারণত বর্ষাকালে চাষ করা হয়। এ কারণে এর অপর নাম আষাঢ়ী চাল। কিন্তু এখন এই ধান বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়। আউশ ধান উচ্চ ফলনশীল।
২. আমন ধান
সংস্কৃত হৈমন’ বা হৈমন্তিক’ শব্দের একটি রুপ। ধান বিশেষ। এর অন্যান্য নাম হল অগুনী ও হৈমন্তিকা। আমন মৌসুমে বেশির ভাগ জমিতে ধান চাষ করা হয়। আমন ধান তিন প্রকার। যথা-
- রোপা আমান
- বোনা আমন
- বাওয়া আমন
৩. বোরো ধান
বোরো ধানে প্রধানত সেচ দেওয়া হয়। কার্তিকা মাস থেকে বীজ বপন শুরু হয়। বৈশাখ-জৈষ্ঠ পর্যন্ত ধান কাটা চলে। উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান প্রবর্তনের পর থেকে ধান চাষ এবং পুরো কৃষি ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
চাষযোগ্য এলাকা
বেশি বৃষ্টিপাত বা কম জমিতে ধান ফলতে পারে। পাহাড় বা ঢালেও এর চাষ হয়। ধান চাষ খুবই শ্রমসাধ্য। অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়, তাই যেসব এলাকায় শ্রম খরচ কম সেখানে ধান চাষ করা সহজ। এর মাতৃ উদ্ভিদ এশিয়া এবং আফ্রিকার স্থানীয় সম্পদ ।
কোন দেশ সবচেয়ে বেশি চাল রপ্তানি করে?
বর্তমান রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক হিসাবে রয়ে গেছে। অন্যান্য প্রধান চাল রপ্তানিকারকদের মধ্যে রয়েছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, বার্মা এবং কম্বোডিয়া। এই আটটি দেশ বার্ষিক বিশ্বব্যাপী চাল রপ্তানির মোট আয়তনের প্রায় ৯০ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি চাল আমদানি করে কোন দেশ?
USDA এর মতে, ফিলিপাইন এখন বিশ্বের শীর্ষ চাল আমদানিকারক দেশ।
ভাত আমাদের প্রতিদিনের খাবার। আমরা যেহেতু এশিয়ার সবচেয়ে বেশি চাল-ভাত প্রিয় অঞ্চল বাংলাদেশের মানুষ আমাদেরকে জানা উচিত। চাল কত রকম হতে পারে এবং কোনটার কি গুনাগুন চলুন আমরা জেনে নেই।
সাদা চাল:
ধান ভেঙে পালিশ করে সাদা চাল তৈরি করা হয়। যদিও আমরা সাধারণত প্রতিদিন সাদা ভাত খাই, তবে এই ভাতের পুষ্টিগুণ কম। তবে রান্না করতেও সময় কম লাগে।
ব্রাউন বা বাদামি চাল:
ব্রাউন রাইস হল সবচেয়ে পুষ্টিকর চাল। ব্রাউন রাইস থায়ামিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ। সাদা চালের তুলনায় ব্রাউন রাইস রান্না করতে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগে।
লাল চাল:
উচ্চ অ্যান্থোসায়ানিন উপাদানের কারণে এই চালের রঙ লাল। লাল চাল বাদামী চালের মতো রান্না করতে একই পরিমাণ সময় নেয়। লাল চাল সব ধরনের রান্নায় ব্যবহৃত হয় অনেক সময় এ চাল সারারাত ভিজিয়ে রেখে তা দ্বারা সকালে বিভিন্ন রন্ধন প্রণালী প্রস্তুত করতে হয়।
ব্ল্যাক চাল:
এই বন্য ধানের একটি বড় পরিমাণ চীনে চাষ করা হয়। এই চালে অ্যান্থোসায়ানিন, প্রোটিন, মিনারেল এবং ফোলেট সমৃদ্ধ। এই চাল ফুটতে সময় লাগে অন্যান্য চালের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি পানির প্রয়োজন হয়। এবং রানা করতে সময়ও লাগে লাগে অনেক বেশি।
আরও পড়তে
চাল: বাংলাদেশের প্রধান চাহিদা পূরণকারী খাদ্য
1 Comment