মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বার বার বলছেন ৭ জানুয়ারির নির্বাচন কোনো ভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি
আবারও ওই বিষয় নিয়ে লিখতে যাচ্ছি, কারণ যতবারই মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছে; কোনবারই তারা এই নির্বাচনকে বৈধ বলেননি।
মঙ্গলবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে এভাবেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেন মিলার ।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে ম্যাথিউ মিলার বলেন বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমাদের মূল্যায়ন আপনি আগে শুনেছেন। এই নির্বাচনকে আমরা কোনোভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু মনে করি না। নির্বাচনের সময় বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের বিষয়েও আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।
ব্রিফিংয়ে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, কানাডার একটি তদন্তে জানা গেছে যে রাশিয়া এবং চীনের সাথে ভারত দেশটির নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনসমক্ষে বলেছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো ভারতও তাদের নির্বাচনে জয়ে তাদের পাশে ছিল। সমালোচকরা বলছেন, ভারতের প্রভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রচারের নীতি থেকে পিছিয়ে গেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
জবাবে মিলার বলেন, কানাডিয়ান তদন্ত সম্পর্কে আমার আসলে কিছু বলার নেই। কানাডা এ বিষয়ে তথ্য দিতে পারে। আমি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কথা বলব। আমি আগেও অনেকবার এই সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি। বাংলাদেশে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হোক। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে এগুলোকে প্রাধান্য দেয়। বাংলাদেশের জনগণের সমৃদ্ধির জন্য আমরা গণতান্ত্রিক নীতির উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখব।
আরেকটি প্রশ্নে, এই প্রতিবেদক জানতে চান যে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ৭ জানুয়ারির কারচুপির নির্বাচনে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ বিরোধী দলের ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ক্ষমতাসীন সরকার। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কী ব্যবস্থা নেবে? কারণ নির্বাচনের আগে আপনি আপনার ভিসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
জবাবে মিলার জোর কণ্ঠে বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমাদের মূল্যায়ন আপনি আগে শুনেছেন। এই নির্বাচনকে আমরা কোনোভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু মনে করি না। নির্বাচনের সময় বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের বিষয়েও আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।
তিনি আরও বলেন, দুটি বিষয়ে কথা বলব। প্রথমত, আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই গ্রেফতারকৃতদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে। দ্বিতীয়ত, আমি সরকারকে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে এবং বিরোধী দলের সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করার আহ্বান জানাচ্ছি। এসব বিষয় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশে নির্বাচনের পর তৃতীয়বারের মতো ম্যাথু মিলার বলেন, আমরা দেখেছি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। একই সঙ্গে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। ম্যাথিউ মিলার একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ম্যাথু মিলার আরও বলেন বাংলাদেশ এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি বলব- যেমনটি আমরা বাংলাদেশ এবং অন্যান্যদের সম্পর্কে বহুবার বলেছি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তায় অগ্রগতি। এটি মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রবিন্দু। গণতান্ত্রিক নীতিকে এগিয়ে নিতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। বাংলাদেশের সকল মানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচনের একদিন পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কূটনীতিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ অনুষ্ঠানে আসেন।
পিটার হাস কিছুক্ষণ নীরবে সেক্রেটারি অফ স্টেটের সাথে কথা বললেন। এরপর পশ্চিমা কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়।
তারপর বসার পালা। সামনের সারিগুলো এখনো ফাঁকা। কিন্তু পিটার হাস বসলেন বেশ দূরে, পঞ্চম সারিতে।
নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে যুক্তরাষ্ট্র সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে প্রথমে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, তারপর অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভিসা নীতির আবেদন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দলকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। এ ছাড়া জাতিসংঘও প্রশ্ন তুলেছে।
কিন্তু এরপর কি? যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো কি বাংলাদেশের সঙ্গে আগের মতো বহুপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেবে? বা কোন জটিলতা হতে পারে?
আওয়ামী লীগ সরকারের চ্যালেঞ্জ কোথায়? এমন সব প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে।