November 22, 2024
ঘুমে নাক ডাকা বন্ধে সহজ সমাধান

ঘুমে নাক ডাকা বন্ধে সহজ সমাধান

ঘুমে নাক ডাকা বন্ধে সহজ সমাধান

ঘুমে নাক ডাকা বন্ধে সহজ সমাধান

নাক ডাকা এমন একটি সমস্যা যা আপনি নিজে নাও বুঝতে পারেন, কিন্তু এটি আপনার আশেপাশে যারা ঘুমায় তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। ঘুমের সময় নাক ডাকাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় স্লিপ অ্যাপনিয়া বা স্লিপ অ্যাপেনা । যদি ১০ সেকেন্ড বা তার বেশি ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং এর কারণে শরীরে অক্সিজেন তিন শতাংশের বেশি কমে যায়, তাহলে তাকে স্লিপ অ্যাপনিয়া বলে। আর তখনই নাক ডাকা শুরু হয়।

নাক ডাকার কারণ

১. সাধারণ ভাষায়, অনেকে একে বোবায় ধরেছে বলে মনে করে। ঘুমের সময় শ্বাসনালী পেশী আংশিকভাবে অবশ হয়ে যায় বা শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়। শারীরিক স্থূলতা, মুখ ও ঘাড়ের গঠনগত ত্রুটির কারণে শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়। ফলে নাক ডাকা হয়।

২. একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ ঘুমের সময় নাক ডাকে। এর মধ্যে ৭ শতাংশ মানুষ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভোগেন। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। তবে সচেতনতার অভাবে অধিকাংশ মানুষই এই রোগ সম্পর্কে জানেন না। এই রোগ কখনও কখনও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

৩. নাক থেকে ফুসফুস পর্যন্ত জায়গাটি যেখানে বাতাস প্রবাহিত হয়। কোনো কারণে শ্বাসনালীতে বায়ু প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে একজন ব্যক্তি ঘুমের সময় নাক ডাকতে শুরু করেন।

এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন কারণে নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ-

  • বেশি ওজন বা মোটা হলে অনেকেই নাক ডাকেন।
  • নাকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- কারো নাকের হাড় আঁকাবাঁকা থাকলে, নাকের ভিতরে পলিপ থাকলে, নাকে মাংসের বৃদ্ধি থাকলে নাক ডাকতে পারেন।
  • অতিরিক্ত চর্বি জমে মুখের ভেতরের জায়গা কমে গেলে নাক ডাকতে পারেন।
  • শ্বাসনালীতে বিভিন্ন ধরনের টিউমার রয়েছে। কারো যদি এই ধরনের টিউমার থাকে তবে তারা নাক ডাকতে পারে।
  • জিহ্বার পিছনে টিউমার থাকলে আপনি নাক ডাকতে পারেন।
  • কারো খুব বড় টনসিল থাকলে নাক ডাকতে পারেন।
  • শিশুদের আরেক ধরনের টনসিল থাকে যাকে বলা হয় এডিনয়েডস। এডিনয়েড বড় হলে শিশুরাও নাক ডাকতে পারে।
নাক ডাকা প্রতিরোধে করণীয়ঃ

নাক ডাকা ব্যাক্তির পাশে যারা ঘুমায় তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে নাক ডাকা প্রতিরোধ করা সম্ভব

অতিরিক্ত ওজন

অতিরিক্ত ওজন নাক ডাকার একটি প্রধান কারণ। গলার ফ্যাটি টিস্যু শ্বাসনালীতে চাপ সৃষ্টি করে এবং বাতাসকে সঠিকভাবে বের হতে বাধা দেয়। তাই যাদের ওজন বেশি এবং নাক ডাকা হয়, তারা আগে ওজন কমান।

মদ্যপান ছেড়ে দিন

নাক ডাকা প্রতিরোধ করতে অ্যালকোহল পান এড়িয়ে চলুন। এবং শোবার আগে কখনই পান করবেন না। অ্যালকোহল গলার পেশীগুলিকে অনেক শিথিল করে। এই বর্ধিত শিথিলতা গলায় বাধা সৃষ্টি করে, যা নাক ডাকার সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।

একপাশে কাঁত হয়ে ঘুমান

সারা রাত একপাশে ঘুমানো সত্যিই কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভ্যাস তৈরি করতে পারলে নাক ডাকা অনেকটাই রোধ করা যাবে।

ধুমপান ত্যাগ করলে

ধুমপান ত্যাগ করতেই হবে।  সিগারেটের ধোঁয়া গলা ও নাকে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এর ফলে ফোলাভাব এবং শ্লেষ্মা জমা হয়। এতে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই ধূমপান ত্যাগ করুন।

নাক পরিষ্কার রাখুন

সর্বদা নাক পরিষ্কার রাখুন যাতে শ্বাস নাক দিয়ে বের হয়, মুখ দিয়ে নয়। অ্যালার্জির কারণে নাক বন্ধ হয়ে গেলে, আপনি একটি অনুনাসিক স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। তবে কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বাষ্প নিতে পারেন

গরম পানি দিয়ে বাষ্প করুন। এটি অনুনাসিক জট  দূর করে শ্বাস প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টিকারী শ্লেষ্মা অপসারণ করে অনুনাসিক পথ পরিষ্কার করে।

একাধিক বালিশের  ব্যবহার

ফ্ল্যাট শোয়ার পরিবর্তে, আপনার মাথার নীচে কয়েকটি অতিরিক্ত বালিশ রাখুন। অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহারে শ্বাসনালী খোলা থাকবে।

নিয়মিত ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম পেশী, রক্ত সঞ্চালন এবং হৃদস্পন্দন উন্নত করে এবং ঘুমের উন্নতি করে। এই কারণে, নাক ডাকা কমাতে, প্রতিদিন ৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রচুর পানি পান

প্রচুর পানি পান করলে নাকের ছিদ্রের আঠালো পদার্থ বের হয়ে যায়। নাক ডাকাও কমে যায়।

আগে আগে রাতের খাবার

রাতের খাবার ঘুমাতে যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে খেতে হবে যাতে ঘুমের কিছু    খাবার হজম হয়ে যায়। তাতে  পরিপাকতন্ত্রের ব্যাঘাত ঘটবে না। ফলে রাতে ভালো ঘুম হবে। নাক ডাকাও কমে যাবে।

টেনিস বল নিয়ে ঘুম

ঘুম না আসা এড়াতে বিশেষজ্ঞরা এই ব্যবস্থার কথা বলেছেন। আপনি যখন ঘুমান তখন আপনার টি-শার্টের পিছনে বা আপনার ট্রাওজারের কোমরবন্ধের কাছে একটি টেনিস বল রাখুন । এভাবে চিৎ হয়ে শোয়া থেকে মুক্তি পাবেন এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাত হয়ে শুয়ে পড়বেন।  আর নাক ডাকার  থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।

আরামদায়ক বিছানা এবং বালিশ

নাক ডাকা থেকে পরিত্রাণ পেতে  বিছানা-বালিশ  পরিষ্কার ও আরামদায়ক হওয়া উচিত। বিছানা এমনভাবে সাজান যাতে ঘুমানোর সময় শরীর কাত হয়ে যায়। মাথা বিছানার স্তর থেকে কমপক্ষে চার ইঞ্চি উপরে রাখুন।

মাউথপিস ব্যবহার করতে পারেন

বাধাহীন শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য একটি খোলা শ্বাসনালী অপরিহার্য। এক্ষেত্রে চোয়ালের পেশির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই জন্য, আপনি ঘুমানোর সময় একটি মাউথপিস নামক  এক ধরনের ঘুমের ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন। এটি চোয়ালকে এগিয়ে রাখে। ফলে চোয়াল খোলা থাকে। এটা কিনতে পাওয়া যায়।

অনুনাসিক (ন্যাজাল) স্ট্রিপ ব্যবহার

অনুনাসিক স্ট্রিপগুলি অনুনাসিক ভিড় শিথিল করে এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বজায় রাখতে সহায়তা করে। নাক ডাকার সমস্যা সারাতে এটি খুবই কার্যকরী।

এ সকল ব্যবস্থা নেওয়ার পর আশা করি অবশ্যই নাক ডাকা কমে যাবে এবং এক সময় নাক ডাকা বন্ধ হয়ে যাবে।নাক ডাকা আর থাকবেনা ।  তার পরেও যদি নাক ডাকা থেকেই যায় তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।

আরও পড়তে পারেন

প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X