ইসরাইলকে গণহত্যা ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে বললো আন্তর্জাতিক বিচার আদালত
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত মূলত আন্তর্জাতিক আদালত নামে পরিচিত। এর সদর দফতর দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডে অবস্থিত। এর প্রধান কাজ হল স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি করা এবং বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আইনি পরামর্শ প্রদান করা। এটিকে সংক্ষেপে ICJ বলা হয়।
জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। আদালত ১৯৪৬ সালে কাজ শুরু করে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত সাংবিধানিক উপকরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। আদালত বিভিন্ন বিচারিক কার্য পরিচালনা করে। আজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আদালতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালিত হয়েছে। যাইহোক, ১৯৮০ এর দশক থেকে, আদালতের ব্যবহার দৃশ্যত বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে।
তেমনি গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে ইসরাইলকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের হেগে আইসিজে এ আদেশ দেয়। তবে আদালত গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেয়নি।
অন্তর্বর্তী রায়ে, আদালতের প্রেসিডেন্ট, মার্কিন বিচারক জে ডংগু বলেন, আদালত ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে গাজার মানবিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য দেশটিকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে ইসরাইলকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের হেগ থেকে আইসিজে এই আদেশ জারি করে। ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অভিযোগের শুনানি নিয়ে শুক্রবার আইসিজে থেকে এই সিদ্ধান্ত আসে।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মামলাটি করা হয়। হেগ ভিত্তিক আইসিজে উভয় পক্ষের যুক্তি শোনেন। ইসরায়েল গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইসিজে দেশটিকে গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দেয়। যাইহোক, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কোন ক্ষমতা নেই কোন দেশকে তার রায় মেনে চলতে বাধ্য করার। তবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই রায় অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
আদালত বলেছেন, মামলার রায় দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। আদালত ইসরায়েলকে গাজা উপত্যকায় গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।
এছাড়া এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে আইসিজে। আদালত বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের প্রতিরোধ করতে হবে এবং দায়ীদের শাস্তি দিতে হবে। ইসরায়েলকে সেখানে মানবিক সাহায্যের অনুমতি দিতে হবে। ICJ ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষায় আরও ব্যবস্থা নিতে ইসরাইলকে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু আদালত গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেয়নি।
এই রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিন। এক প্রতিক্রিয়ায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “আমরা আইসিজে-র রায়কে স্বাগত জানাই।” এই রায় প্রমাণ করে যে কোনো রাষ্ট্রই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি আদালতের সিদ্ধান্তকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই রায় ইসরায়েলকে বিচ্ছিন্ন করবে এবং গাজায় তাদের অপরাধ প্রকাশ করবে। তিনি বলেন, আমরা ইসরায়েলকে আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে মামলা দায়েরকারী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা এই রায়কে ‘জয়’ বলে অভিহিত করেছে। ICJ-এর এই দ্রুত রায়ের জন্য দেশটি আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। দেশটি আশা প্রকাশ করেছে যে, ইসরাইল এখন এই রায় মানতে বাধ্য হবে। এই রায় ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এদিকে, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই রায় দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের নিন্দা করেছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থাটিকে তিনি ইসরাইলবিরোধী বলেছেন। তিনি বলেন, হেগের ইহুদি-বিরোধী আদালতের রায় আগেই জানা ছিল। এই রায় প্রমাণ করে যে এই আদালত ন্যায়বিচার চায় না, ইহুদিদের নিপীড়ন চায়। গণহত্যার সময় তারা নীরব ছিল এবং আজও ভণ্ডামি করে চলেছে। তাদের ভণ্ডামি এখন আরও একধাপ এগিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা হঠাৎ করে ইসরায়েলে প্রবেশ করে এবং হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং অন্তত ২৫০ জনকে জিম্মি করে। ওই দিন থেকেই গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল। দেশটি এখনও গাজায় তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছজান২৬,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭০ হাজার মানুষ।
এমন পরিস্থিতিতে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ আমলে নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধসহ নয়টি ব্যবস্থা নিতে এই আন্তর্জাতিক আদালতে আবেদন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। শুক্রবার ICJ-এর ১৭ বিচারপতির একটি প্যানেল এই মামলার রায় দেয়। এই প্যানেলে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েল থেকে একজন করে বিচারক ছিলেন।
হেগের স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে শুক্রবার প্রায় এক ঘণ্টা শুনানির পর আদালত এ আদেশ দেন। গণহত্যার অভিযোগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসরাইল এর আগে বলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সত্যকে বিকৃত করছে। তাদের আত্মরক্ষার অধিকার আছে এবং তারা শুধু হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করছে, ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের নয়।