বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির উদ্বোধনের প্রতিবাদে ঢাবির শিক্ষার্থীরা
চৌকস রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন; এখানে রাম মন্দির স্থাপনের কারণে ২০ লক্ষ মুসলিমের অন্তরে যে আঘাত দিয়েছেন মোদি; হয়তোবা এটার কঠিন প্রতিফলন দেখতে পাবে মোদির সামনের নির্বাচনে । যার খেসারত হয়তো মোদী এবং বিজেপিকে চিরদিনের জন্য দিয়েও শেষ করতে পারবেনা ।
ভারতের অযোধ্যায় ১৯৯২ সালে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবেহিন্দুদের গোড়ামী দ্বারা ভেঙ্গে ফেলা ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জায়গায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদি সরকার কর্তৃক রাম মন্দির নির্মাণের উদ্বোধনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুটি কর্মসূচি পালন করেছে।
সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা রাজু ভাস্কর্য থেকে ভিসি চত্বর হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত মিছিল করে কর্মসূচি শেষ করেন। এছাড়া সন্ধ্যায় একই স্থানে ‘প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ’-এর ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বামপন্থী শিক্ষার্থীরাও।
প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৯৯২ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মাধ্যমে এই মসজিদ ভেঙে ধর্মীয় সম্প্রীতি ধ্বংস করা হয়েছিল। এবার ভারতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িকতাকে আবারো উস্কে দিয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি হুমকির মুখে পড়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশের সংসদ একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করতে এবং বাংলাদেশের যেকোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণ করে ভারত সরকার মুসলিম সম্প্রদায়কে অপমান করেছে। এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার দৃষ্টান্তও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্রদের অভিযোগ, ভারত আবারও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
মানববন্ধনে বাংলা বিভাগের ছাত্র মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির স্থাপন করে উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের খেলা খেলে নিজেদের দুর্বল স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্বীকার করেছে যে বাবরি মসজিদ কোনো মন্দির ভেঙে তৈরি হয়নি। বরং বাবরি মসজিদের স্থানে মন্দির নয় মসজিদই ছিল।
সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে স্টুডেন্টস ফেডারেশন ঢাবি শাখার সভাপতি আরমানুল হক বলেন, তারা দেখাতে চাচ্ছে, এখানে রামমন্দির ছিল। তবে ভারতের প্রত্মতত্ত্ববিদরা বাবরি মসজিদের এই বয়ান নাকচ করেছে। কিন্তু বিজেপি সরকার আরএসএসকে নিয়ে ভারতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে। ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ বলা হয়, সেখানে এই কার্যকলাপ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। অযোধ্যায় এই পরিস্থিতি থামানো দরকার।
প্রসঙ্গত, ১৬ শতকে মুঘল সম্রাট জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবর এই স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। ১৯৯২ সালে, কট্টরপন্থী হিন্দুরা মসজিদটি ভেঙে দেয়, অভিযোগ করে যে এটি রামের জন্মস্থানে একটি মন্দিরের উপরে নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তী দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মানুষ নিহত হয়।
স্থানীয় সময় সকাল ১১টার পর রামমন্দির প্রাঙ্গণে পৌঁছান নরেন্দ্র মোদি। পুজোর ডাল হাতে নিয়ে সে ধীরে ধীরে গর্ভগৃহের দিকে এগিয়ে গেল। পরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে পদ্মফুল হাতে পুজোয় বসেন। রামমন্দিরের গর্ভগৃহে রাম লালার মূর্তির চোখ বেঁধে দেওয়া হল।
যদিও রামমন্দিরে দেওয়া ভাষণে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘রামের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমাদের বিচার বিভাগ রায় নিশ্চিত করেছে। মন্দিরটি আইন মেনেই তৈরি করা হয়েছে।
‘২২ জানুয়ারি, একটি নতুন যুগের সূচনা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাম বিবাদ নয়, সমাধান। আর এই রামমন্দির শুধু মন্দিরই নয়, ভারতের দর্শনও বটে।
মোদি বলেন , এই মন্দির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভারতের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। এই মন্দিরটি বাবরি মসজিদের জায়গায় রয়েছে যা ৩১ বছর আগে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। ভোটের কয়েক মাস আগে মন্দিরের উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির জয়ের সম্ভাবনাকে শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দীর্ঘ বিতর্কিত ১৬ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদে একটি মন্দির নির্মাণ মোদির দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের স্বপ্নের পূর্ণতা।
১৯৯২সালে, হিন্দু জনতা দ্বারা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়। সেই হামলা সমগ্র ভারতকে বদলে দেয় এবং দেশটির হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ইন্ধন যোগায়। এ কারণে আজকের অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত বিতর্কিত।
১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা খরচ করে হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের নামে এই মন্দির তৈরি করা হয়েছে। কিছু হিন্দুত্ববাদী নেতা এই শহরটিকে ‘হিন্দুদের ভ্যাটিকান’ বলে থাকেন।
সাত হাজারেরও বেশি লোককে ব্যক্তিগতভাবে অযোধ্যায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিশাল মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। এছাড়াও, হাজার হাজার হিন্দু মন্দিরের ভিতরে ফুল ও উপহার দেওয়ার জন্য ছোট শহরটিতে ভিড় করেছিলেন।
এদিকে রামমন্দির ঘিরে অযোধ্যায় কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে রাস্তা সম্প্রসারণ, একটি নতুন বিমানবন্দর, একটি বিশাল রেলস্টেশন এবং একটি বহুতল গাড়ি পার্ক। এ জন্য তিন হাজারের বেশি বাড়িঘর, দোকানপাট ও ধর্মীয় স্থাপনা সম্পূর্ণ বা আংশিক ভেঙে ফেলা হয়েছে।
আরও পড়ুন-
ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে গুঁড়িয়ে দেয়া ১২ শতাধিক বাড়ির মালিক বেশিরভাগই মেওয়াতি মুসলিম