November 24, 2024
ট্রান্সজেন্ডার হিজড়া নয়: জানতে হবে

ট্রান্সজেন্ডার হিজড়া নয়: জানতে হবে

ট্রান্সজেন্ডার হিজড়া নয়: জানতে হবে

ট্রান্সজেন্ডার হিজড়া নয়: জানতে হবে

যে মতাদর্শ পশ্চিমা বিশ্বে রাজত্ব কায়েম করেছে তার নাম ‘ট্রান্সজেন্ডারিজম’। অনেকে একে ‘জেন্ডার আইডেন্টিটি’ বা লিঙ্গ পরিচয় তত্ত্বও বলে থাকেন।

ইংরেজি শব্দ (Transgenderism) এর বাংলা অর্থ রূপান্তর। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা এমন ব্যক্তি যাদের মানসিক লিঙ্গ পরিচয় তাদের জন্মগত লিঙ্গ পরিচয় থেকে আলাদা। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা যারা তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করার জন্য চিকিৎসা সহায়তা চান তাদের প্রায়ই ট্রান্সসেক্সুয়াল হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

এই মতবাদ বলে যে, একজন পুরুষ যদি ‘নিজেকে একজন নারী বলে মনে করে’, তাহলে সে একজন নারী। সমাজ ও আইন তাকে নারী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। লোকটি শারীরিকভাবে পুরোপুরি স্বাভাবিক কিনা, তিন সন্তানের বাবা বা মা , তাতে কিছু যায় আসে না।

ট্রান্সজেন্ডারিজম বলে, ‘যদি একজন নারী নিজেকে একজন পুরুষ বলে মনে করেন, তাহলে তিনি একজন পুরুষ। যদিও তার মাসিক হয়, সে গর্ভবতী হয়, শারীরিকভাবে সে ১০০% সুস্থ। যে নারী নিজেকে একজন পুরুষ বলে মনে করেন, তিনি যদি সন্তানের জন্ম দেন, তাহলে সেটা ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের ভ্রান্তির প্রমাণ না। বরং ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের চোখে এটাই প্রমাণ করে যে, ‘পুরুষও সন্তান জন্ম দিতে পারে’!

এই মতবাদ অনুসারে, যদি একটি ছেলে ‘মনে করে’ সে একটি মেয়ে বা একটি মেয়ে মনে করে যে সে একটি ছেলে, তাহলে এই ‘চিন্তার’ ভিত্তিতে, সেই ছেলে বা মেয়েটিকে ইচ্ছামতো শরীর পরিবর্তন করার ‘অধিকার’ দেওয়া যেতে পারে। হরমোন চিকিত্সা এবং বিভিন্ন অপারেশন। হবে। তার এই ‘মনে হওয়া’র চিকিৎসা করা যাবে না, বরং বদলে দিতে হবে শরীরকে।

সমাজসচেতন গবেষকরা  বলেছেন, “ট্রান্সজেন্ডারিজমের বক্তব্য এতই অদ্ভুত, এতটাই উদ্ভট যে প্রথমবার শোনার পর কেউ বিশ্বাস করতে পারবেন না যে এমন মতবাদ আদৌ থাকতে পারে।” অনেকেই মনে করেন যে ট্রান্সজেন্ডারকে কোনো কারণে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। হতে পারে এটি তৃতীয় লিঙ্গ বা ট্রান্সজেন্ডার অধিকার আন্দোলন। হয়তো এটা মানুষের বিবেচনা ও অধিকারের বিষয়। হতে পারে যারা লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চান, নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে চান, তাদের কিছু শারীরিক সমস্যা আছে।

এই মতবাদের মূল দাবি

ট্রান্সজেন্ডার মতবাদের মূল দাবি হল- ‘জন্মদেহ যাই হোক না কেন, যে নারী নিজেকে নারী বলে দাবি করে তাকে অবশ্যই নারী হিসেবে মেনে নিতে হবে, যে পুরুষ নিজেকে পুরুষ বলে দাবি করে তাকে আইনগত ও সামাজিকভাবে পুরুষ হিসেবে মেনে নিতে হবে। মানুষ যেমন চাইবে তেমন পোশাক পরবে, ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের শরীর পরিবর্তন করবে। আর কেউ যদি অস্ত্রোপচার না করেই নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের দাবি করে, সেটাও খোলা মুখে মেনে নিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজ কোনো বাধা দিতে পারবে না, বরং বিশেষ সুবিধা দিতে হবে ‘অনগ্রসর মানুষ’ হিসেবে। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছোটবেলা থেকেই সবাইকে শেখানো উচিত যে মানুষের মন গুরুত্বপূর্ণ; শরীর নয়।’

যেভাবে ট্রান্সজেন্ডারকে প্রচার করা হচ্ছে

এই মতবাদ পশ্চিমা দেশগুলোর স্কুলে পড়ানো হয় বলে জানা যায়। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোও এই মতবাদকে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে গ্রহণ করেছে। মধ্যপন্থী থেকে বামপন্থী, সব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এই মতবাদকে উগ্রভাবে প্রচার করছে। রাষ্ট্রপ্রধানের নির্বাহী আদেশ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ও কেন্দ্রীয় আইন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক নীতি এই নতুন মতবাদের আলোকে সমন্বয় করা হচ্ছে। এই মতবাদের উপর ভিত্তি করে আইন তৈরি করা হচ্ছে এবং এই মতবাদটি শিশুদের শ্রেণীকক্ষে পড়ানো হচ্ছে। এই অদ্ভুত আদর্শকে নাগরিক ও মানবাধিকারের প্রশ্ন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। মানবাধিকারের নামে পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘ সারা বিশ্বে এই মতবাদকে বহন করছে। অনেক টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে পাকিস্তানের আদালতের রায়েও  প্রবেশ করেছে ট্রান্সজেন্ডার।

বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডার

বাংলাদেশেও ট্রান্সজেন্ডার বাড়ছে। অনেককে নারী থেকে পুরুষে এবং পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হতে দেখা যায়। তাদের সংখ্যা এখন কম হলেও এর ভয়াবহতা নিয়ে চিন্তিত সমাজ সচেতন বিশেষজ্ঞরা।

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে একটি  দৈনিকে  প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে  এক মহিলার উল্লেখ করা হয়, ‘তিনি একজন মহিলা থেকে পুরুষ হয়েছেন, এখন বাংলাদেশ রেলওয়ের চাকরিতে রয়েছেন । এই মহিলা শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ। কিন্তু ‘অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট’ হওয়ায় তিনি ‘নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত’ হয়েছেন। নতুন নাম নিলেন জিবরান সওদাগর।

জিবরান বলেন, ‘আমি একজন নারী ছিলাম। মাসিক সহ সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি অন্য ছেলে বা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়েছি। স্কুল ড্রেস ওড়না পরা বা মেয়েদের মতো পোশাক পরা পছন্দ করতাম না। আমার একবার এক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। চার বছর ধরে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়েটি চলে যাওয়ার পর আমার মনে হয়েছে, আমি পুরুষ হলে সে এভাবে চলে যেত না। এছাড়া আরও অনেক পুরুষকে বিভিন্ন মাধ্যমে নারী ও নারীকে পুরুষে রূপান্তরিত হতে দেখা গেছে।

দেশে ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার রক্ষায় আইন

এদিকে গত ৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে ‘ট্রান্সজেন্ডার রাইটস প্রটেকশন অ্যান্ড প্রোটেকশন অ্যাক্ট-২০২৩’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ বলেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আইনটি পাস হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সংসদের প্রথম অধিবেশনে এটি পাস করার জন্য কাজ করছি। সরকার এক বছরের মধ্যে আইন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সরকার চায় এই বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় করা হোক। তাই এরই মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে রয়েছে।

আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কমিটি। এখন কিছু পরিমার্জন ও পরিবর্ধন বাকি আছে। একই সঙ্গে এই আইন কার্যকর করার জন্য একটি বিধি প্রণয়নের জন্য এই কমিটিকে সুপারিশ করেন তিনি। কারণ আইন থাকলেও আইনের নিয়ম না থাকলে আইন কার্যকর হয় না।

কেন ‘ট্রান্সডেন্ডার’ আতঙ্ক

বেশ কয়েক বছর ধরে, বাংলাদেশেও ট্রান্সজেন্ডারিজমের স্বাভাবিকীকরণের প্রতি সক্রিয় মনোভাব রয়েছে। যদিও তাদের ক্রিয়াকলাপের কিছু ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, তাদের প্রকৃত স্কেল এবং সুযোগ এখনও বেশিরভাগের কাছে অজানা। অনেকে ভুল করে ভাবছেন যে এটি কিছু মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি বা বিকৃত রুচির লোকদের অদ্ভুত কার্যকলাপ মাত্র। তবে  সমাজসচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, এর পেছনে রয়েছে বিশাল এবং অত্যন্ত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।

তারা বলেন, ‘আমরা যখন ভাবছি কী প্রতিক্রিয়া হবে, তারা দশ ধাপ এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে। এক বছরের মধ্যেই হয়তো বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারিজম বৈধ হয়ে যাবে। এই বিষাক্ত মতবাদ আমাদের সমাজকে গ্রাস করবে। ফলে সমাজে ট্রান্সজেন্ডারদের হুমকির বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা।

তাদের মতে, এই মতবাদ সমাজের ভারসাম্য ও স্বাভাবিকতা নষ্ট করছে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির বণ্টন মারাত্মক সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।’

এছাড়াও, একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে তাদের মধ্যে সাধারণ মানুষের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি আত্মঘাতী চিন্তা এবং ২২ গুণ বেশি আত্মহত্যার চিন্তা রয়েছে।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X