বাংলাদেশে ভোটারদের হারঃ ভারতীয় বিশ্লেষকের বক্তব্য ভাইরাল
ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শ্রীরাধা দত্ত বলেন, বাংলাদেশ সরকার বলছে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক সূত্র ও সাংবাদিকরা বলছেন ২৭ শতাংশ। কিন্তু আমরা জানি যারা আওয়ামী লীগপন্থী অনেকেই বলেছেন ভোট ২০ শতাংশের নিচে। নির্বাচনের দিন হরতালের মতো ফাঁকা রাস্তা দেখেছি। তবে এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে বলছেন, গ্রামের চেয়ে শহরে ভোট বেশি। আমার পরিচিতদের মধ্যে কয়েকজন ভোট দিয়েছেন, তারা বলছেন ১০ শতাংশের বেশি নয়।
ঢাকার একটি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। তার বক্তব্য ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন, চীনের ব্যবস্থা ভারতের সঙ্গে মেলে না। তবে ভারত চীনের সঙ্গে কাজ করেছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। তাদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে সরকার ভারতের স্বার্থ দেখবে।
তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা আমাদের নিরাপত্তার জায়গা দেখেছেন। সে ক্ষেত্রে ভারত সরকার জোরালো সমর্থন পাচ্ছে, ভারত গণতন্ত্রের বিষয়টিকে সে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে না। আমরা যারা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী বা অনুশীলন করি, তাদের ভিন্ন ব্যাখ্যা থাকতে পারে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘গণতন্ত্র’ এখন ভারতের কাছে মুখ্য নয়।
নিজের কথা বলতে গেলে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিভ্রম ঘটেছে, আদৌ এটাকে গণতন্ত্র বলা যায়না ।
দুই বছর আগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ভঙ্গুর। আর এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হল। আমি এখানে যা দেখছি তা হল একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে। অন্তত দু-তিন বছর ধরে তো আর বটেই।।
আর এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ব্যাখ্যায় আরও বলেন, “ঢাকার পাঁচ-দশটি কেন্দ্রে গিয়ে ভোটের চিত্র বোঝা যাবে না। শহর ও গ্রামাঞ্চলে ভোটের ধরন আলাদা। আর গত (রোববার) যখন বললাম, ৪০ শতাংশ। ড্যাশবোর্ডে সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় না। অংশে যা এসেছে তা থেকে মনে হচ্ছে ৪০ শতাংশ। সব ফলাফল ঘোষণা হলেই চূড়ান্ত শতাংশ গণনা করা হবে।”
তিনি বলেন, কারো সন্দেহ থাকলে তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, আর যদি মনে করেন তারা বাড়াবাড়ি করেছে, তাহলে আপনাকে মোস্ট ওয়েলকাম, কে চ্যালেঞ্জ করবেন আমাদের অসততা?, আপনি যদি তাই মনে করেন, যাচাই করা যেতে পারে. ”
নির্বাচন কমিশনের ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, ২২৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। জাতীয় পার্টি জিতেছে ১১টি আসনে। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকা প্রতীক নিয়ে একটি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ, আইএনইউ) নৌকা প্রতীক নিয়ে একটি আসনে জয়ী হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি আসনে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঘড়ি প্রতীক নিয়ে ৬১টি আসনে জয়ী হয়েছে।
সিইসি বলেন, মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৫ লাখ ১ হাজার ৫৮৫ জন, এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪৫ জন। এর শতাংশ ৪১.৮ শতাংশ।
যদিও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে রয়েছে জোরালো মতবিরোধ:
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জেএনপি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, “আমি যেসব ভোটকেন্দ্রে গিয়েছি সেখানে খুব কম ভোটার দেখেছি। খুব কম জায়গায় বড় লাইনে ভোট দিতে দেখা গেছে। আমাদের দেশেও ৯০% ভোট দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন যা বলছে তা মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।
তিনি বলেন, তবে কতটি ভোট বৈধ বা গ্রহণযোগ্য হবে সে বিষয়ে কোনো আইন বা নিয়ম নেই। শূন্য ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও নির্বাচিত হতে পারে।”
তার মতে, “বিএনপি বয়কট এবং নির্বাচনে কী হবে সে সম্পর্কে জনগণের পূর্ব ধারণার কারণে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম।”
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি নিজে ভোট দিয়েছি। বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর দেখলাম। আমি নিজেই বলেছি ৩০-৩৫ শতাংশের বেশি ভোট হবে না। একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে এবং আমরা তাকালাম। সেই অ্যাপে ২৮ শতাংশ ভোট। এরপর যা হলো, জাদুকরিভাবে ৪০ শতাংশ করলো নির্বাচন কমিশন! হয়তো, আমার হিসাব ভুল। কিন্তু আমি যা দেখেছি, ২৮ এবং ২৮ শতাংশ সঠিক ছিল। এখন আমি বলছি এটা হবে না। নির্বাচন কমিশন যা বলবে তাই হবে। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। কেউ চ্যালেঞ্জ করলে হয়তো আবার জরিপ করা হবে।”
এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, কে কী বলল তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। দেশের জনগণের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য কিনা সেটা এখন কে মাপবে? এটা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য
এবং অন্যান্য নির্বাচন বিশেষজ্ঞরাও বলেন, ভোটের সংখ্যার ওপর বৈধতা নির্ভর করে না। নির্বাচন কমিশন আগেই বলেছে, পাঁচ শতাংশ ভোট গণনা হলেও নির্বাচন বৈধ। আর এ নিয়ে মানুষের ভাবনার শেষ নেই। আগের নির্বাচনে কীভাবে ভোট দেওয়া হয়েছিল তার তুলনা করুন।৮০ % ভোটের সাথে তুলনা করুন।”