November 26, 2024
মধ্য গাজায়ও বড় হামলাঃ তাবু ছাড়ছেন দেড় লাখ বাসিন্দা

মধ্য গাজায়ও বড় হামলাঃ তাবু ছাড়ছেন দেড় লাখ বাসিন্দা

মধ্য গাজায়ও বড় হামলাঃ তাবু ছাড়ছেন দেড় লাখ বাসিন্দা

মধ্য গাজায়ও বড় হামলাঃ তাবু ছাড়ছেন দেড় লাখ বাসিন্দা

ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য গাজা উপত্যকায় ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। এত দিন ধরে গাজা শহরসহ অবরুদ্ধ ফিলিস্তিন উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণে হামলার তীব্রতা বেশি ছিল। জাতিসংঘ বলছে, ক্রমাগত হামলার কারণে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি আবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানিয়েছে যে ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১৮৭ জন নিহত হয়েছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৮০৭ জনে।

ইসরাইল তিন দিন ধরে মধ্য গাজায় হামলা জোরদার করেছে। যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণের পাশাপাশি সাঁজোয়া যান এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র বিভিন্ন শহর ও শরণার্থী শিবিরে গোলাবর্ষণ করছে। হামলায় মধ্য গাজায় কয়েক ডজন লোক নিহত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিছু কিছু জায়গায় হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর লড়াই চলছে। হামাস ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।

ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য গাজার বুরেজি, নুসিরাত এবং মাগাজি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ করছে। আবাসিক ভবনেও হামলা চালানো হচ্ছে। হামলার ভয়ে গাজার দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছে বাসিন্দারা। হামলার সময় ইসরায়েলি বাহিনী বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এসব এলাকার বাসিন্দা দেড় লাখের বেশি। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্দেশ আসার পর বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা হচ্ছে।

বুরাইজ শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী ওমর তার পরিবারের ৩৫ জন সদস্য নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সংবাদমাধ্যমকে  তিনি বলেন, মনে করেছিলাম   সময় এসেছে, ভাবলাম পালানোর দরকার নেই। কিন্তু এখন দেখছি পালানো ছাড়া উপায় নেই। ইসরায়েলের নৃশংস যুদ্ধ আমাদের তাঁবুতেও  নিয়ে এসেছে।

হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে মধ্য গাজার বাসিন্দাদের আর কোথাও যাওয়ার নেই। ইসরায়েলি হামলায় উত্তর গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এদিকে দক্ষিণ গাজায়ও বড় আকারের হামলা চলছে। ফলে উত্তর বা দক্ষিণ কোথাও যাওয়ার উপায় নেই।

এদিকে, দক্ষিণ গাজার মিশরের সীমান্তবর্তী রাফাতেও বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ গাজার নতুন এলাকায় হামলা শুরু করার পর থেকে গত কয়েক দিনে প্রায় এক লাখ ফিলিস্তিনি রাফাহ শহরে চলে গেছে।

তাদের  খাবারও  নেই, ত্রাণবাহী গাড়িতেও  হামলা

ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা আজ জানিয়েছে যে ত্রাণবাহী গাড়িতে হামলা হয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ থেকে ফেরার সময় ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। ইসরায়েল এই রুট দিয়ে ত্রাণবাহী যান চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। হামলায় একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে কেউ হতাহত হয়নি।

জাতিসংঘের সাহায্য প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস গাজার পরিস্থিতিকে হতাশাজনক বলে বর্ণনা করে বলেছেন, “গাজার বাসিন্দা এবং সাহায্যকর্মীরা একটি অসম্ভব পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে,” তিনি যোগ করেছেন যে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, ত্রাণবাহী গাড়িতে হামলা এবং চেকপয়েন্টে বিলম্বের মতো চ্যালেঞ্জগুলি মানে,  অনেক লোককে খাওয়ানো হচ্ছেনা।

ইসরাইলি হামলার কারণে গাজার প্রায় সব বাসিন্দাই এখন উদ্বাস্তু। ত্রাণ হিসেবে দেওয়া খাবারই এখন তাদের ভরসা। কিন্তু পর্যাপ্ত ত্রাণ না থাকায় অনেককেই অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। কোথাও ত্রাণ হিসেবে দেওয়া খাবার বহনকারী গাড়ি দেখতে ভিড় করছেন প্রচুর মানুষ।

গতকাল বৃহস্পতিবার ১০৩ টি ত্রাণবাহী ট্রাক মিশরীয় সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘসহ দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, অপর্যাপ্ত খাদ্য এত মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। যেখানে যুদ্ধের আগে প্রতিদিন গড়ে ৪৫৫টি ট্রাক প্রবেশ করত, সেখানে এত অল্প খাবারে পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

 হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও

এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ গাজার বৃহত্তম শহর খান ইউনিসের একটি হাসপাতালে হামলা চালায়। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মতে, কমপক্ষে ৪১জন নিহত হয়েছে। আল-আমাল নামের এই হাসপাতালে অনেক ফিলিস্তিনি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

এছাড়া দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে কুয়েতি হাসপাতালের কাছে একটি আবাসিক ভবনে হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে খান ইউনিসের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আট ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছে যে ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১৮৭ জন নিহত হয়েছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলার পর থেকে গাজায় অন্তত ২১ হাজার ৫০৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৫৫ হাজার ৬০৩ জন।

এদিকে গাজায় ‘গণহত্যা’র জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা

ফিলিস্তিনের গাজায় ‘গণহত্যার অপরাধে’ আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গাজায় প্রায় তিন মাস ধরে একটানা চালানো ধ্বংসযজ্ঞ ও বোমাবর্ষণে ২১হাজার ৫০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হওয়ার পর দেশটি এই ধরনের অভিযোগে মামলা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X