November 25, 2024
লাল বাহিনীঃ এ কোন নতুন বাহিনী

লাল বাহিনীঃ এ কোন নতুন বাহিনী

লাল বাহিনীঃ এ কোন নতুন বাহিনী

লাল বাহিনীঃ এ কোন নতুন বাহিনী

লাল টিশার্ট গায়ে পরনে খাকি প্যান্ট। কালো চশমা। হাতে ও কোমরে অত্যাধুনিক অস্ত্র। সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলার প্রধান সড়কে বন্দুক মহড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা পুলিশের এই বিশেষ দলটিকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। স্পেশাল টাস্কিং গ্রুপ নামে এই টিম গঠন করেছে জেলা পুলিশ। তবে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর জানেই না। পুলিশের একজন সাবেক আইজিপি বলেছেন, একজন পুলিশ সুপারের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। দলটির নাম ও ইউনিফর্ম নিয়ে ইতিমধ্যেই আপত্তি জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গঠিত ৩০ সদস্যের দুটি বিশেষ টিম তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজবাড়ী জেলা পুলিশের উদ্যোগে এই বিশেষ টহল দল পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

রাজবাড়ী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইফতেখারুজ্জামান  বলেন, রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপারের সার্বিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ একাধিক কর্মকর্তার নেতৃত্বে এই বিশেষ টাস্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। আমরা ইতিমধ্যেই নতুন পুলিশ টিম STG-তে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। তিনি বলেন, দলটির কাছে আধুনিক অস্ত্রের পাশাপাশি বিশেষ পোশাক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা রয়েছে। নির্বাচনমুখী কোনো নাশকতা ও তৎপরতার ক্ষেত্রে এটি কাজ করবে। নির্বাচনের পরও কাজ চালিয়ে যেতে  কুইক রেসপন্স টিম হিসেবে এসটিজি গ্রুপও গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন বলেন, এটি অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা। প্রতিটি জেলায় পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একটি কুইক রেসপন্স টিম থাকে। যাতে তারা কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে যে তারা অন্যান্য সকল ইউনিটের মতো কুইক রেসপন্স টিম হিসেবে কাজ করবে, বিশেষ টাস্কিং ফোর্স নয়। লাল গেঞ্জি পরা এই বিশেষ পুলিশ সদস্যের ইউনিফর্ম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের এই ভিডিও আমি দেখেছি। তাই তাদের এমন না করতে বলা হয়েছে। এটি একটি অনুমোদিত পুলিশ ইউনিফর্ম নয়। হেডকোয়ার্টার থেকে আমরা তাদের বলেছি তারা পুলিশের অনুমোদিত ইউনিফর্ম পরবে। কোনো কারণে প্রয়োজনে তারা সাদা (বেসামরিক) পোশাকে ডিবি পুলিশের মতো দায়িত্ব পালন করবেন। সেটা আলাদা ব্যাপার। তবে এটি কোনো অনুমোদিত পুলিশ দল নয়।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেন, একজন পুলিশ সুপার তার এলাকায় অপরাধ দমনে যেকোনো কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। তারা পুলিশের ইউনিফর্ম হিসেবে ইউনিফর্ম পরবে। আইনত তারা  এটা করতে পারে না। আইনে বলা হয়েছে, পুলিশের ইউনিফর্ম ছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডির ইউনিফর্ম পরা যাবে। সিভিল কোডে যা বলা আছে তাই পরুন। পুলিশের পোশাক পরা আর  একটি বিশেষ ইউনিফর্ম পরা এক জিনিস নয়। সে বিশেষ ইউনিফর্ম বানাতে পারে না। রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করে টেক্সট মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

উল্লেখ্য,

মুজিব আমলে ফ্যাসিবাদী শক্তির আদলে বহুল আলোচিত সংগঠন ছিল ‘লাল বাহিনী’। এই লাল বাহিনী একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী শ্রমিক লীগের নেতৃত্বে ছিল এই লাল বাহিনী। এই বাহিনীর নেতা ছিলেন শ্রমিক নেতা আব্দুল মান্নান। লাল বাহিনী ক্যাডাররা লাল পোশাক পরেছিল। তাদের মাথায় লাল হেলমেটও ছিল।

শেখ মুজিব নিজে এই বাহিনী দিয়ে জনগণ ও বিভিন্ন বিরোধী সংগঠনকে ভয় দেখাতেন। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে, একটি বিশাল জনসভায় তিনি ‘লাল বাহিনী নিয়ে জনগণকে হুমকি দেন। এই লাল বাহিনী আসলে তার নিজস্ব মিলিশিয়া ছিল।

লাল বাহিনীর কার্যকলাপের কেন্দ্র ছিল দেশের বিভিন্ন শিল্প এলাকা। এই লাল বাহিনীর প্রধান কাজ ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী বাম সংগঠনগুলোকে উৎখাত করা সর্বগ্রাসী হয়ে চাঁদাবাজি করা ছিল এই লাল বাহিনীর মূল কাজ।  তারা প্রায় সব সিবিএ-ইউনিয়ন, বিরোধী দলের সমর্থকদের ছিনতাই করে। যাইহোক, ”অত্যাচারী ও সমাজবিরোধীদের নির্মূল” নামে এই সব গুন্ডামিকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছিল। লাল বাহিনী ‘বিহারী’ নামে পরিচিত উর্দুভাষীদের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক ছিল। ঢাকায় ৭২ সালের ‘মে দিবস’ সমাবেশে আবদুল মান্নান ঘোষণা করেন, ‘সরকার যদি বিহারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার না করে, তাহলে তার সংগঠনই তা করবে।’

১৯৭২ সালের মার্চ মাসে খুলনায় শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করতে গিয়ে এই লাল বাহিনী দাঙ্গার সৃষ্টি করে। সরকারী হিসেবে অনুযায়ী, তাদের গুলিতে ৩৬ জন শ্রমিক নিহত এবং ৮০ জন আহত হয়। কিন্তু বেসরকারীহিসেবে ২০০০ এরও  বেশি মানুষ নিহত হয়।

১৯৭২ সালের জুন থেকে, লাল বাহিনী কথিত সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে একটি ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করে। এমনকি অভিযানের সময় গ্রেপ্তারকৃতদের ‘শাস্তি’ দেওয়ার আইনি ক্ষমতাও দাবি করেছিল তারা।

বাকশাল গঠনের প্রশ্নে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উদ্যোগের বিরোধিতা করার সময় ১৯৭২ সালের ২শে জানুয়ারী লাল বাহিনীর প্রধান আব্দুল মান্নানকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। মাথায় সামরিক ক্যাপ পরা অবস্থায়  লাল বাহিনীর কমাণ্ডার আব্দুল মান্নানকে ঢাকায় তার আশি হাজার লাল বাহিনীর সমাবেশে শেখ মুজিবের পাশে থেকে অভিবাদন গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে।

আরও পড়তে

এবার পিটার হাসকে জবাই করে হত্যার হুমকি দিলেন আওয়ামী লীগ নেতা

 

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X