আল শিফা হাসপাতাল এখন প্রায় কবরস্থানঃ মৃতদেহ পচে যাচ্ছে পশু খাচ্ছে
শক্তিশালী মিডিল-ইস্ট বিশেষ করে সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলো যদি জেগে ওঠে; উড়ে এসে জুড়ে বসা ইসরাইলের কোনরূপ দাম্ভিকতা সামান্য সময়ের জন্যও টিকবে না। কিন্তু মুসলিম নামধারী এ দেশগুলো এবং এই দেশগুলোর শাসন ব্যবস্থা সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা বহু বছর যাবত নিরপরাধ শিশু , মা-বোন নারীসহ সকল মানুষের হত্যাকে, গণহত্যাকে সহজে বরণ করে নিয়েছে বলেই মনে হয়।
গাজার আল শিফা হাসপাতাল প্রায় কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পুরো হাসপাতাল এখন লকডাউনের আওতায়। ফলে সেখানে মারা যাওয়া মানুষের লাশ পচে গেছে। চারিদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। হাসপাতালের ম্যানেজার জানান,এখানকার মৃতদেহ এখন কুকুর খাচ্ছে। ইসরায়েলি স্নাইপাররা বাইরের কাউকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। ফলে হাসপাতালগুলো লাশ দাফন করতে পারছে না।
হাসপাতালের চারপাশে বোমা হামলার ফলে গাজার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে কয়েক লাখ মানুষ আটকা পড়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, একের পর এক লাশ স্তূপ করা হয়েছে। পচে গেছে। এ অবস্থায় আল শিফা হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই। কোনো জ্বালানি নেই এ জন্য অপরিণত নবজাতককে ইনকিউবেটর থেকে বের করে আনা হয়েছে।
এমতাবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে, এই হাসপাতাল প্রায় কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালকে ঘিরে চলছে তুমুল যুদ্ধ। কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী, এই হাসপাতালেও হামলা হয়েছে। এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন যে হাসপাতালগুলিকে রক্ষা করতে হবে। কোনো আগ্রাসী হস্তক্ষেপ হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু হানাদার ইসরাইল কারো কথায় পাত্তা দিচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে গাজা শহরে তুমুল যুদ্ধ চলছে গাজার জঙ্গি সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে। হামাস কৌশলগত অবস্থান নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। এর বেশির ভাগই ঘটছে এই হাসপাতালের পাশের রাস্তায়। আল শিফা হাসপাতালের গেটের কয়েক মিটারের মধ্যে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং সামরিক যানবাহন অবস্থান করছে।
ইসরায়েল দাবি করে এই হাসপাতালের নিচে হামাসের একটি টানেল রয়েছে। সেই সুড়ঙ্গের মাধ্যমে তারা মাটির নিচে তাদের কৌশল পরিকল্পনা করে। অস্ত্র মজুত করে। তবে হামাস যেমন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে, তেমনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তা প্রত্যাখ্যান করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলি সেনাদের হাসপাতাল পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তারা তাতে রাজি হচ্ছেন না। তাদের আরও অভিযোগ, ওই হাসপাতালে হামাস মানব ঢাল হিসেবে সাধারণ মানুষকে আটকে রেখেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, আল শিফার খুব কাছেই যুদ্ধ চলছে। তবে তারা হাসপাতালে কোনো গুলি চালায়নি, অবরোধও করেনি। তারা চাইলে হাসপাতাল ছেড়ে যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমায়ার জানিয়েছেন, এই হাসপাতালে প্রায় ৬০০ মানুষ রয়েছেন। অন্যরা এর বিভিন্ন অংশে অবস্থিত। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের চারপাশে লাশ পড়ে আছে। এসব লাশের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায়নি। দাফন করা যায়নি। হাসপাতালের মর্গে আনা যায়নি। যতটা করা উচিত হাসপাতাল এখন আর করতে পারছে না। হাসপাতালটি প্রায় কবরস্থানে পরিণত হয়েছে।
এদিকে, হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্তত ২,৩০০ লোক এখনও হাসপাতালের ভিতরে রয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৫০ রোগী, ২০০ থেকে ৫০০ কর্মী এবং প্রায় ১৫০০ আশ্রয়প্রার্থী রয়েছে। আল শিফা হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ডা. মোহাম্মদ আবু সেলমিয়া জানান, প্রায় দেড়শ লাশ পচে গেছে। ভয়ানক দুর্গন্ধ নির্গত হয়। পড়ে আছে লাশের স্তূপ। তিনি আরো বলেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এসব লাশ বের করে দাফন করার অনুমতি দেয়নি। কুকুরগুলো এখন হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে এসব লাশ খেয়ে ফেলছে।
এদিকে, বিদ্যুতের অভাবে ইনকিউবেটরে থাকা কয়েক ডজন অকাল শিশুর ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ডা: সেলমিয়া বলেন, অক্সিজেনের অভাবে এরই মধ্যে সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, এসব শিশু উদ্ধারের বিষয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ বলেছেন, শিশুদের উদ্ধারে ইসরায়েল একটি “ব্যবহারিক সমাধান” প্রস্তাব করেছে। কিন্তু হামাস সেই প্রস্তাব মানেনি। জেনারেটর চালাতে জ্বালানি দিতে চাইলেও নিচ্ছে না। এই শিশুদের অ্যাম্বুলেন্সে করে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব তারা সমর্থন করেন না। এ কারণে সেখানে আটকে আছে শিশুরা। মার্ক রেগেভ হাসপাতালটিকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার জন্য হামাসকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এই হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গ রয়েছে। তবে হামাস ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাদের সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। গাজা স্ট্রিপের অন্যান্য হাসপাতাগুলোর প্রায় একই অবস্থা। তাদের কোনো সরঞ্জাম সরবরাহ নেই। বিদ্যুৎও নেই।
1 Comment