November 29, 2024
নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারে ঠাই হচ্ছেনা বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে

নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারে ঠাই হচ্ছেনা বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে

নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারে ঠাই হচ্ছেনা বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে

নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারে ঠাই হচ্ছেনা বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে

দ্য গার্ডিয়ানের রিপোর্ট

বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণক্ষমতা প্রায় ৪০০০। এতে বর্তমানে ১৩,৬০০ বন্দী রয়েছে। গত দুই সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে ১০,০০০ এরও বেশি বিরোধী নেতা, সমর্থক ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও কয়েক হাজার রাজনৈতিক বন্দী ইতিমধ্যে কয়েক মাস ধরে বন্দী রয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন, এমনকি শত শত, ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ জানুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, হাসিনা এবং তার আওয়ামী লীগ দল টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার জন্য প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর উপর নৃশংস দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। বিএনপি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি ও এর সদস্য সমিতির ৫০ লাখের বেশি নেতা-কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে ১ লক্ষ ৩৮ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। খুব কম লোকই বিশ্বাস করে যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু বা নিরপেক্ষ হবে। বিএনপি বলেছে, যতদিন হাসিনা দায়িত্বে থাকবেন, ততদিন তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। গত কয়েক মাস ধরে বিরোধীদের বিরুদ্ধে চলমান দমন-পীড়ন সত্ত্বেও, হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির একটি সমাবেশ সরকারকে তীব্র দমন-পীড়নকে প্ররোচিত করে। সেদিন কয়েক হাজার বিএনপি সমর্থক রাস্তায় নেমে আসার সাথে সাথে হাসিনার আওয়ামী লীগ কর্মীদের লাঠি, লোহার রড, ছুরি ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র  সহ  পুলিশ নিয়ে সমাবেশে হামলা করতে দেখা যায়। সহিংসতায় একজন বিএনপি কর্মী, একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন সাংবাদিকসহ অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। সমাবেশের আগের দিনগুলোতে বিএনপির শতাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, বিএনপিকে দমন করার জন্য কর্তৃপক্ষ এই সহিংসতা করেছে। “পুলিশের প্রতিক্রিয়া, যা সহিংসতার সূত্রপাত করেছিল, মনে হচ্ছে সমাবেশের আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল,” তিনি বলেন, ইন্টারনেট পরিষেবাগুলি কেবল কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত করার জন্য নয়, পুলিশের কার্যক্রমের সরাসরি সম্প্রচার রোধ করার জন্যও বন্ধ করা হয়েছিল।

পরে বিএনপি নেতা ও সদস্যরা জানান, হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো থেকে বিরত রাখতে তাদের প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয়। রবার্ট এফ-এর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লিটিগেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট অ্যাঞ্জেলিটা বেইনস বলেছেন, “সাম্প্রতিক সপ্তাহে বাংলাদেশে বিরোধী নেতা, কর্মী এবং বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন-পীড়ন কতটা চরম আকার ধারণ করেছে তার একটি সূচক মাত্র ।” কেনেডি ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যান রাইটস  এই রিপোর্ট করেছেন ।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ ও নথিভুক্তকারী ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্টের মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, পঙ্গুত্ব, নির্যাতন, দুর্ব্যবহার এবং নিয়মতান্ত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘন সংঘটিত হয়েছে। বাংলাদেশে যতবারই নির্বাচন হয় ততবারই বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা নির্বিচারে ভুয়া ফৌজদারি মামলায় আটক হয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য হাসিনাকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই সপ্তাহে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করে সহিংসতা বন্ধ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানান। মার্কিন সরকার সম্প্রতি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং গত মাসে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাসিনাকে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু, মার্কিন প্রশাসনকে ভন্ডামির অভিযোগ তুলে হাসিনা বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন কি সংলাপ করছেন? যেদিন তাদের সংলাপ হবে, আমিও বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ করব।

২০১৮ সালের আগের নির্বাচন বিরোধীদের হয়রানি এবং ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছিল এবং ব্যাপকভাবে অগণতান্ত্রিক বলে নিন্দা করা হয়েছিল। বেশিরভাগ মানুষই এখন আশঙ্কা করছেন যে জানুয়ারিতে আবারো  একই রকম পরিস্থিতি দেখা দেবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, হাসিনা সরকারের এখন বিচার বিভাগ ও পুলিশের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, যা বিরোধীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। এই সপ্তাহে একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে একদল সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মী টহলরত পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে স্লোগান দিচ্ছে, ‘এক এক করে বিএনপির লোকদের ধরো এবং তাদের সবাইকে জবাই করো।’ রাজনীতি বিশ্লেষক মোবাশ্বর হাসান বলেছেন যে, হাসিনার নিপীড়নমূলক পদ্ধতিগুলি কেবল বিএনপির গতি বাড়িয়েছে, যেটি অর্থনীতির অবনতি এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল পর্যায়ের জনসমর্থন লাভ করেছে। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি শ্রমিক-দরিদ্র নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির জনসভা সফলভাবে সাধারণ নাড়িতে টোকা দিয়েছে।’

আরও পড়তে-আটটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে বিরোধী বিক্ষোভ দমনে সরকারি কর্তৃপক্ষের বর্বরতা ও অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X