November 8, 2024
ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানে ওআইসির কাছে ইরানের ১০টি প্রস্তাব

ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানে ওআইসির কাছে ইরানের ১০টি প্রস্তাব

ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানে ওআইসির কাছে ইরানের ১০টি প্রস্তাব

ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানে ওআইসির কাছে ইরানের ১০টি প্রস্তাব

শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত মধ্যপ্রাচ্যের অনন্য পরা শক্তির অধিকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে ওআইসি জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে ১০টি প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি মুসলিম দেশগুলোকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি দখলদার দেশটির ওপর তেল ও পণ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।

ইরান যে প্রস্তাবগুলি পেশ করেছে তা হল:

১.  গাজার জনগণের গণহত্যা বন্ধ করা এবং বেসামরিকসহ সকল নাগরিকদের উপর নির্বিচারে হামলার অবিলম্বে অবসান, সেখানকার হাসপাতাল, স্কুল, ক্যাম্প এবং ত্রাণ কেন্দ্রে হামলা বন্ধ করার ব্যবস্থা করা।

২.  গাজার উপর থেকে সম্পূর্ণ অবরোধ তুলে নেওয়া। মিশরীয় ভাইদের সহযোগিতায়, অবিলম্বে এবং নিঃশর্তে রাফাহ ক্রসিং পুনরায় চালু করা এবং গাজায় খাদ্য ও ওষুধসহ ত্রাণ সরবরাহের ব্যবস্থা করা। মুসলিম দেশগুলোর সম্মানিত নেতাদের উচিত এই বৈঠকে মানবিক সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে একমত হওয়া এবং তা বাস্তবায়নের জন্য একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করা।

৩.  গাজা থেকে অবিলম্বে ইহুদিবাদী ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার।

৪.  মুসলিম দেশগুলো ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাথে সকল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা।

৫.  মুসলিম দেশগুলোকে অবশ্যই আগ্রাসী ও দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

৬.  সাম্প্রতিক যুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সাথে জড়িত কর্তৃপক্ষকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইহুদিবাদী এবং আমেরিকান অপরাধী নেতাদের বিচার ও শাস্তির জন্য একটি আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা।

৭.  বৈঠকে উপস্থিত মুসলিম দেশগুলোর অংশগ্রহণে গাজার পুনর্গঠনের জন্য অবিলম্বে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা প্রয়োজন।

৮.  ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে মুসলিম দেশগুলি থেকে মানবিক সাহায্য কনভয় পাঠানো।

৯. আহলি আল-আরব হাসপাতালে ইসরায়েলি অপরাধ এবং বোমা হামলার দিনটিকে ‘গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দিবস’ হিসেবে নামকরণ করা।

১০. এই অসম যুদ্ধে ইহুদিবাদী ও আমেরিকান যুদ্ধাপরাধ অব্যাহত থাকলে, মুসলিম দেশগুলোর উচিত ফিলিস্তিনি জনগণকে অস্ত্র দিয়ে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উৎসাহিত করা।

এছাড়াও ফিলিস্তিনি-অবরুদ্ধ গাজায় চলমান অপরাধ ও ধ্বংসযজ্ঞের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছে ইরান। শনিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত আরব ও মুসলিম নেতাদের জরুরি এই সম্মেলনে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এমন মন্তব্য করেন।

এ সময় ইরানি নেতা গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান নৃশংস অভিযানের কথা উল্লেখ করে দেশটির সেনাবাহিনীকে একটি “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে চিহ্নিত করার আহ্বান জানান।

রাইসি বলেন, “ইসলামী সরকারগুলোর উচিত দখলদার ও আগ্রাসী সরকারের সেনাবাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা।”

ফিলিস্তিনি-অবরুদ্ধ গাজায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। সারা বিশ্বের আহ্বান উপেক্ষা করে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার আরব লীগ ও অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) জরুরি বৈঠক ডেকেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আল-আকসা মসজিদের অপবিত্রতা এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার প্রতিবাদে গাজার প্রতিরোধ ও স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালায়। ওই দিন থেকেই ইসরাইল নির্বিচারে গাজায় হামলা চালাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। তাছাড়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে হামাসের হামলায় ১,৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া হামাস যোদ্ধাদের হাতে জিম্মি হয়েছে ২৪০ জন।

গত মার্চে ইরান ও সৌদি আরব সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সম্মত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেশটিতে আসেন ইব্রাহিম রাইসি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট জরুরি বৈঠকে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী দেশগুলোকে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি বৃহত্তর সমর্থনেরও আহ্বান জানান।

এ ছাড়া রাইসি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ‘জায়নবাদী শাসনের’ সঙ্গে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য ইসলামী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

এই প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, বিশেষ করে জ্বালানি ক্ষেত্রে, ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক বয়কটকে অগ্রাধিকার দিতে হবে ।ইরানের প্রেসিডেন্টও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, “আমেরিকানরা ইহুদিবাদী শাসককে অস্ত্র ও জ্বালানি উভয়ই সরবরাহের সাথে জড়িত।” ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, মার্কিন সরকার নিঃসন্দেহে এই অপরাধের কমান্ডার ও প্রধান সহযোগী।

আরও পড়ুন

ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইরান-সৌদি আরব ঐক্যবদ্ধ: পাল্টে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ

আল-আকসাকে দুই ভাগে ভাগ করার চক্রান্ত, মুসলিম বিশ্বের সাহায্য চাইলেন ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X