বিচ্ছেদের পর নিজেকে কিভাবে সামলাবেন
মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক জীবনে নতুন কিছু নয়। অনেক দিনের সম্পর্কের পর ভালোবাসা যেমন মজবুত হয়, তেমনি নানা কারণে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়াটা দোষের কিছু নয়। সারাজীবন এক ছাদের নিচে একসাথে থাকার বিশ্বাসে সম্পর্ক বাঁধলেও মাঝে মাঝে আলাদা হতে হয়। কিন্তু ভিন্ন হওয়া মানে প্রতিপক্ষ বা শত্রু হওয়া নয়।
মনে রাখবেন সম্মতিক্রমে বিবাহ বিচ্ছেদ অপরাধ নয়। এছাড়াও ভুলে যাবেন না যে বিচ্ছেদ সময়ের ব্যাপার মাত্র; কিন্তু সম্পর্ক গড়তে অনেক সময় লাগে। মাস, বছর এমনকি দশকও। তাহলে ব্রেকআপের আগে নিজেকে শুধরে নিতে অসুবিধা কোথায়?
তবে, যে কোন বিচ্ছেদই বেদনাদায়ক। প্রেম বা বিয়েতে সময় কাটানোর পর হঠাৎ করে বিচ্ছেদ মেনে নেওয়া কঠিন। আপনাকে সব বাধা অতিক্রম করে জীবনের সাথে এগিয়ে যেতে হবে। বিচ্ছেদের বেদনা সব সময়ই সবাইকে কষ্ট দেয়। প্রিয়জনকে ভুলতে অনেকেই বেছে নেন নানা পথ। কিছু ভালো আবার কিছু খারাপ। কিন্তু বিচ্ছেদের ব্যথা দ্রুত ভুলে গিয়ে ব্যথা উপশম করতে কী করতে হবে তা হয়তোবা অনেকেই জানেন না।
তাহলে চলুন জেনে নেই বিচ্ছেদের পর সেরে উঠতে কী কী করতে হবে এবং দৈনন্দিন রুটিন কী হতে পারে
নিজেকে সময় দিন
বিচ্ছেদের পর প্রথম কাজটি হল নিজেকে সময় দেওয়া। বিবাহবিচ্ছেদ স্বাভাবিক। তাই বাস্তবতা মেনে নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করুন। নিজের সম্পর্কে চিন্তা করুন, আপনার ভুলগুলি মনে রাখবেন। সর্বোপরি আরও সঠিক হতে চেষ্টা করুন এবং নিজেকে সংশোধন করুন।
নিজের যত্ন নেয়া
বিচ্ছেদের পরে নিজের যত্ন নিন এবং শুধুমাত্র নিজের দিকে মনোনিবেশ করুন। এ সময় পুষ্টিকর খাবার খান এবং প্রতিদিন ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। তাহলে মন ভালো থাকবে। এছাড়াও প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
নিজের প্রতি আস্থা রাখুন
বিচ্ছেদের পর নিজেকে বিশ্বাস করুন, সামনে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী পোশাক, ভ্রমণ, খাওয়া. আপনি যখন কারও সাথে সম্পর্কে ছিলেন তখন তিনি কী পছন্দ করেননি এই চিন্তা মন থেকে প্রয়োজনে বাদ দিন। এইরকম ছোটখাটো বিষয়ে আপনার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন, হৃদয়ের ক্ষত সারতে সময় লাগবে না।
কৃতজ্ঞ থাকুন
আপনার প্রাক্তনের প্রতি রাগ পোষণ করার পরিবর্তে, তার প্রতি কৃতজ্ঞ হন। এটি আপনার মানবতা প্রকাশ করবে। মনে রাখবেন, একবার তিনি আপনার প্রিয়জন ছিলেন। তাই ব্রেকআপের পর তাকে অসম্মান করবেন না।
সন্তানদের সাথে সময় কাটান
আপনার যদি সন্তান থাকে, তাহলে আপনার নতুন দৈনন্দিন রুটিন যতই ব্যস্ত থাকুক না কেন, তাদের যথেষ্ট সময় দিতে ভুলবেন না। প্রতি সপ্তাহে তাদের একটি নতুন স্থানে নিয়ে যান। তাদের সাথে খাওয়ার চেষ্টা করুন। তাদের সাথে কিছু মজার গেম খেলুন। বাচ্চাদের বোঝান যে আপনি ভেঙে পড়েননি। তাদের একটি সুখী সম্পর্ক দেওয়ার চেষ্টা করুন। সংক্ষেপে, বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকুন, তাহলে আপনি বিভিন্ন বিষয় মিস করবেন না।
প্রিয়জনের সাথে সংযোগ করুন
রাগ, দুঃখ এবং ব্যথা সাধারণত ব্রেকআপের পরে অনুভূত হয়। তাই আপনার পরিবার বা বন্ধুদের মধ্যে প্রিয়জনের সাথে দেখা করুন এবং তাকে আপনার মনের কথা বলুন। বিশেষ করে শৈশবের বন্ধুদের সাথে সংযোগ করার চেষ্টা করুন এবং পুরানো মজার সময়গুলির কথা মনে করিয়ে দিন। এতে মন হালকা হবে।
ক্যারিয়ার এবং কাজের দিকে মনোযোগ দিন
বিচ্ছেদের পরে দুঃখের সাগরে ভেসে যাওয়া এবং আপনার নিয়মিত জীবনকে এলোমেলো করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজের যত্ন নেওয়া এবং আপনার ক্যারিয়ার এবং কাজের প্রতি মনোযোগ দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। আপনি জীবনের প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে আটকে রাখতে পারবেন না। কারণ আপনার ভালোবাসার মানুষটি সেখানে নেই। পরিবর্তে, আপনাকে আপনার ক্যারিয়ার উন্নত করতেই হবে।
নতুন রুটিন চেষ্টা করুন
একাকীত্বের অনুভূতি এবং অন্যান্য অবাঞ্ছিত আবেগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আপনি আপনার দৈনন্দিন রুটিন পরিবর্তন করতে পারেন। বারান্দায় গাছ লাগানো, বাড়িতে অ্যাকুরিয়াম রাখা এবং যত্ন করে একা সময় কাটানো যায়। চা নিয়ে প্রিয় কোনো বই বা চিত্রকর্ম দেখুন । অর্থাৎ প্রতিদিন একটা সময় নিজের জন্য রেখে দিন।
খারাপ অভ্যাসকে না বলুন
বিচ্ছেদের যন্ত্রণা ভুলতে অনেকেই মাদক বা অ্যালকোহলের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু এই কাজ করে সে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনল। আর তাই অ্যালকোহল, তামাক, নিকোটিন বা সিগারেটসহ সব ধরনের মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। এগুলো আপনাকে কষ্ট থেকে রেহাই দেবে না, বরং শরীরের অনেক ক্ষতি করবে ।