পায়ের রগ কেটে ফেলার পরদিন সেই বন্ধুর কাছেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা ছাত্রলীগ নেতার!
শিরা বা রগ কাটার সংস্কৃতির কথা অনেক আগেই শুনেছি। কিন্তু সেখানে পুরোটাই ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেকে বাঁচানোর প্রবণতা ছিল। এবং এটি কখনও প্রমাণিত সত্যের উপর ভিত্তি করে ছিল না। কিন্তু এখানে ঘটে যাওয়া ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ আমাদের অনেক উন্নয়ন দেখিয়েছে, যার মধ্যে রগ কাটা মাত্র একটি।
এবং হয়ত এই ঘটনাটিও অনুপ্রবেশকারীর হাতে একটি ঘটনা হিসাবে চালিয়ে দেয়া হতে পারে। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি।
গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম কলেজে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রত্যাশী এক শিক্ষার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বীকে তুলে নিয়ে পায়ের রগ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গাজীপুর শহরের বাসন থানায় অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে।
অপহৃত ছাত্রের নাম মোঃ ফেরদৌস (২৭)। তিনি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র। তার বাড়ি কাপাসিয়া উপজেলার ভেঙ্গুরদী গ্রামে। যে কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী তাকে তুলে নিয়ে গেছে তার নাম রবিন সরদার। সে বদরে আলম কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইর মোল্লাকান্দি গ্রামে। কথিত আছে, ফেরদৌস ও রবিনের মধ্যে একসময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ঘটনার পর সোমবার বিকেলে রবিন সরদারও ফেসবুকে ফেরদৌসকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রবিন সরদার ও ফেরদৌস একসঙ্গে চলাফেরা করতেন এবং ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। তবে তাদের দলীয় কোনো পদ নেই। কলেজের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
সহপাঠীদের বর্ণনায় জানা যায়, রবিবার দুপুরে কলেজের সামনে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন ফেরদৌস। এ সময় সরদারের নেতৃত্বে একটি গাড়ি ও কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে রবিন তাকে নিয়ে যায়। পরে বিকেলে ফেরদৌসকে দ্রুত উদ্ধার ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন কলেজ শিক্ষার্থীরা। পুলিশ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তাদের মধ্যে ফেরদৌসের মাকে ডেকে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। বিষয়টি ফেরদৌসের মা পুলিশকে জানান। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জয়দেবপুর শিববাড়ি মোড় এলাকা থেকে ফেরদৌসকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ফেরদৌস বলেন, আমি ভাওয়াল কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়ায় রবিন সদর আমাকে বন্দুকের মুখে জিম্মি করে। ছুরি দিয়ে আমার পায়ের দুটি রগ কেটে দেয়। আমার মোবাইল এবং ফেসবুক সব পাসওয়ার্ড নিয়ে যায়। পরে আমার ফেসবুক থেকে পোস্ট করে, “বন্ধু জীবনে অনেক বেইমানি করছি, অনেক স্বার্থপরতামি করছি আমারে মাফ কইরা দিয়ো। আগের মতো বন্ধু হইয়া থাকমু সারা জীবন। আর ভুল করমুনা কোনো সময়…”।’ এরপর আজকে (সোমবার) দুপুর রবিন সরদার ফেসবুক পোস্ট দিয়ে আমাকে জন্মদিনের শুভচ্ছা জানিয়েছে। রবিন সরদারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম এবং সে আমাকে ধরে মারধর করে।
এ ঘটনায় রবিন সরদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদা সিকদার জানান, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ফেরদৌসকে কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে থেকে ধরা হয়। বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় একজনকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে গাজীপুর বাসন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম জানান, ফেরদৌসের মা নাজমা বেগমের দায়ের করা মামলায় ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
কলেজ শিক্ষার্থীরা জানান, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে বহু বছর ধরে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। এ সময় ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন রবিন সরদার। তার নেতৃত্বে কলেজ ছাত্রলীগের কার্যক্রম চলছে। দাঙ্গা, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে রবিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ২৭টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাকে কয়েকবার কারাগারে যেতে হয়েছে। একসময় বন্ধু ফেরদৌস প্রতিপক্ষ হয়ে গেলে রবিন তাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
আরও পড়তে
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এক রাতেই আ.লীগকে শেষ করে দেবে: ভীত-সন্ত্রস্ত ক্ষোভে ওবায়দুল কাদের
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, ফেরদৌসের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া তার বাম পায়ের একটি রগ আংশিক কাটা ছিল। তার অস্ত্রোপচার হয়েছে।
এ সকল ঘটে যাওয়া ছাত্রলীগ দ্বারা কৃত অন্যায় হাজারো লক্ষ্য অন্যায়ের একটি নমুনা মাত্র। এভাবে অন্যায় করে কত আর ছাড় পাবে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের অন্যায়কে একসাথে করলে ১০০ বছরের ছাত্র সংগঠিত সকল অন্যায় তাদের এই ১৫ বছরের অন্যায়ের কাছে বিলীন হয়ে যাবে। তবে একটি সৎ সাহসী নেতৃত্বের বড় প্রয়োজন রয়েছে এসব থামিয়ে দিতে ।