ইসলামে পশু-পাখির অধিকার
ইসলাম শুধু মানুষের অধিকারই দেয়নি, ইসলামের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশু পাখির অধিকারও দিয়ে গেছেন । এবং সেই ব্যাপারে অধিকারগুলো লিপিবদ্ধ রয়েছে । আর প্রাণীরদের ব্যাপারে হুকুম হলো কোন প্রাণীকে যদি লালন পালন করতে হয় বা খাঁচায় বন্দি করতে হয়, তাহলে শুধুমাত্র সেই প্রাণীকেই করা যাবে; যে প্রাণীকে ছেড়ে দিলে আবার আপনার খাঁচায় চলে আসবে । কিন্তু যে সকল প্রাণী ছেড়ে দিলে চলে আসে না এগুলোকে খাচায় আবদ্ধ করে লালন পালন করা হারাম বা নিষিদ্ধ। এরকম প্রাণীর সংখ্যাই পৃথিবীতে প্রায় সব । তাই গুটি কতক প্রাণী ছাড়া সকল রকমের প্রাণীই খাঁচাবদ্ধ করে পালন করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ । চলুন জেনে নেই ইসলাম পশু পাখির অধিকার নিয়ে কি বলে।
প্রাণীজগতের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম তাদেরকে প্রকৃতি ও বিশ্বের সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
কোরানের বিভিন্ন আয়াতে পশুদের কথা বলা হয়েছে। অনেক সূরার নামও বিভিন্ন প্রাণীর নামে রাখা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রাণী সৃষ্টির (একমাত্র) কারণ এই যে, তোমরা তাদের ওপর আরোহণ কর এবং তারা সৌন্দর্যের প্রতীক। (সূরা নাহল, আয়াত ৮)
প্রাণীজগৎকে একটি পৃথক জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীতে বিচরণকারী সব প্রাণী এবং দুই ডানা মেলে উড়ে আসা সব পাখি, তারা সবাই তোমাদের মতোই একটি জাতি। (সূরা আনআম, আয়াত ৩৮)
প্রাণীজগৎ নিরন্তর মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত। আল্লাহ তায়ালা স্বাভাবিকভাবেই এগুলো মানুষের জন্য উপলব্ধ করেছেন। প্রাণীরা অবশ্যই ভালোবাসা ও করুণার যোগ্য। ইসলাম পশুদের সাথে যথাসম্ভব সদয় আচরণ করতে শেখায়। পশু-পাখির যথেচ্ছ ব্যবহার নিষিদ্ধ। ইসলামে পশু-পাখির অঙ্গচ্ছেদ নিষিদ্ধ।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন যে পশু কেটে ফেলে। (বুখারি, হাদিস)
পশু-পাখিকে আল্লাহর পৃথিবীতে অবাধ বিচরণ করতে দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একটি চড়াই পাখিকে অকারণে হত্যা করে, সেই পাখিটি কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবে, ‘হে আল্লাহ, অমুক ব্যক্তি আমাকে অকারণে হত্যা করেছে।’ (সুনানে নাসাঈ)
পশু লালন-পালন করার সময়, তাদের স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির বিষয়ে সর্বোচ্চ যত্ন নেওয়া ওয়াজিব বা অপরিহার্য। মহানবী (সা.) বললেন, এই বাকরুদ্ধ প্রাণীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। সুস্থ অবস্থায় এগুলোতে আরোহণ করো, সুস্থ অবস্থায় আহার করো। (আবু দাউদ)
অগণিত প্রাণীর মধ্যে ইসলাম খাদ্য হিসেবে সীমিত সংখ্যক পশু-পাখি খাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু তারা তাদের জবাই করার ক্ষেত্রে পরম করুণার নির্দেশ দিয়েছে । রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমরা জবেহ কর, তখন উত্তম পন্থায় কর। জবেহের উপাদানকে ভালভাবে ধার দেবে, আর পশুটির প্রাণ স্বাভাবিকভাবে বের হওয়ার সুযোগ দেবে। ’ (মুসলিম)
প্রাণীদেরকে বিচরণ করতে দিন তার বিশাল বড় দুনিয়াতে । পাখিদের কে উড়তে দিন অনন্ত আকাশে । মেনে নিন ইসলামের হুকুম । আপনার আনন্দে কোন পশুপাখি যেন তার জীবনের সব আনন্দকে হারিয়ে না ফেলে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। এবং মেনে নিন ইসলামের নিয়ম কানুন গুলো। এবং পশু পাখির ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত না হয়ে তাদেরকে খাঁচাবদ্ধ করবেন না ।
তাই ইসলাম বিশেষজ্ঞরা লিখেছেন, জবাইয়ের জন্য পশুকে টেনে আনা যাবে না। একটি পশু অন্য পশুর সামনে জবাই করা যাবে না। সম্পূর্ণ নিস্তেজ হওয়ার আগে ত্বকে ছুরিকাঘাত বা অপসারণ করবে না।
কোন জীবন্ত পশু বা পাখি পোড়ানো ইসলামে হারাম। আব্দুর রহমান বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা এক সফরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ছিলাম। তিনি দেখলেন আমরা একটি মৌচাক পুড়িয়ে ফেলেছি। মহানবী (সা.) বললেন, কে আগুন লাগিয়েছে? আমরা নিজেদের পক্ষে কথা বলেছি। তিনি বললেন, ‘আগুনের স্রষ্টা ছাড়া কাউকে আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়া সঙ্গত নয়। (আবু দাউদ)
ইসলামী পন্ডিতগণ বলেন, পিঁপড়া দংশন না করলে মেরে ফেলা মাকরূহ (অপছন্দনীয় কাজ)। এবং তাদের পানিতে নিক্ষেপ করা সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। বিচ্ছু পোড়ানোও মাকরূহ।
আরও পড়তে
ইসলামী কথনঃ রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় গুরুতর অপরাধ
জীবিত অবস্থায় পশু বা পাখির কোনো অংশ কাটা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জীবিত অবস্থায় পশুর যে কোন অংশ কেটে ফেলা হলে তা মৃত ও হারাম হয়ে যাবে। (তিরমিযী)
পশু-পাখিকে প্রহার করা, চিহ্ন দেওয়া এবং মুখ বিকৃত করা ইসলামে হারাম। জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) প্রহার করা এবং মুখমন্ডলে আঁকা নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)
ইমাম নবী (রহঃ) লিখেছেন, ‘কোন প্রাণীর মুখে আঘাত করা হারাম। ‘
আল্লাহর সৃষ্টি ও প্রকৃতির সৌন্দর্য হিসেবে পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসা থাকতে চাই। যে কোনো কারণে এগুলোকে অশুভ মনে করা অজ্ঞতা ও কুসংস্কার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন,পশু-পাখিকে ‘কুলক্ষণ বলার কিছু নেই। … (বুখারী)
পশু-পাখিকে অকারণে তাড়ানো, অকারণে শিকার করা ইসলামে নিন্দনীয়। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, কোন প্রাণীকে লক্ষ্য করো না। (মুসলিম)
সাঈদ ইবনে যুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার হজরত ইবনে ওমর (রা.) কুরাইশ গোত্রের একদল শিশুকে পাখি শিকার করতে দেখেছিলেন। এটা দেখে ইবনে উমর (রাঃ) তাদের সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ ব্যক্তিকে অভিসম্পাত করেছেন যে কোন জীবন্ত প্রাণীকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। (মুসলিম)
তাই আসুন সকল প্রাণীর প্রতি সদয় ও প্রেমময় হই। তাদের প্রতি ভালবাসা ও মমতা গড়ে তুলুন এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষায় মনোনিবেশ করুন।
প্রাণীদেরকে বিচরণ করতে দিন তার বিশাল বড় দুনিয়াতে । পাখিদের কে উড়তে দিন অনন্ত আকাশে । মেনে নিন ইসলামের হুকুম । আপনার আনন্দে কোন পশুপাখি যেন তার জীবনের সব আনন্দকে হারিয়ে না ফেলে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। এবং মেনে নিন ইসলামের নিয়ম কানুন গুলো। এবং পশু পাখির ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত না হয়ে তাদেরকে খাঁচাবদ্ধ করবেন না ।
1 Comment