ইসলামের দৃষ্টিতে আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য
একজন পূণ্যবান স্ত্রী স্বামীর অন্যতম নেয়ামত। কারণ একজন চৌকস স্ত্রীই পারে স্বামীর সকল দিক নিয়ন্ত্রণ করতে, এবং তাকে সন্তুষ্ট রাখতে । ইসলামের অনুশাসনগুলি মেনে যদি কোন স্ত্রী স্বামীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করে এবং স্বামীকে সদা তৃপ্ত রাখার চেষ্টা করে। তাহলে সে স্বামী কখনোই খারাপ পথে পরিচালিত হয় না । এবং একজন ভালো নেককার মুমিনা স্ত্রী সকল সময়ই একজন স্বামীর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে থকে । আর এই হল ইসলামের দৃষ্টিতে আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য।
আর এসকল কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে একজন স্বামী স্ত্রীর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হন। প্রেমময় ভালবাসা বাড়ে। স্বামী তাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করতে চায় না। জীবনের সমস্ত পরিকল্পনা তাকে ঘিরেই হয়ে যায়।
স্ত্রীর কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হলো-
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকা:
সকল সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে এবং নিজে সুসজ্জিত থাকলে, সেই স্ত্রীর প্রতি অবশ্যই স্বামীর আকর্ষণ সব সময় বৃদ্ধি পাবে । আর এ কথাও সত্য যে, স্ত্রী কালো আর সাদা যে রঙেরই হোক না কেন; সে যদি পরিচ্ছন্ন এবং পরিষ্কার না থাকে তাহলে তার প্রতি কোন স্মার্ট এবং ভদ্র স্বামীর আকর্ষণ মোটেও জাগবে না । তাই একজন স্ত্রীর প্রয়োজন সদা সর্বদা তার স্বামীর জন্য সুসজ্জিত, স্মার্ট , পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি হয়ে থাকা।এই পরিচ্ছন্নতাই ইসলাম পছন্দ করে।
- আনুগত্য:
যে স্ত্রী সর্বশক্তিমান আল্লাহর আদেশ পালন করে এবং তার স্বামীরও আনুগত্য করে, সেই স্ত্রী জান্নাতী, তার স্বামীর খুব প্রিয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যখন একজন মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসে রোজা রাখে, তার গোপনাঙ্গকে রক্ষা করে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করে, তখন সে তার ইচ্ছামত যে কোন দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (মুসনাদে আহমাদ)
- প্রেমময় হওয়া:
স্ত্রী যদি তার স্বামীকে বেশি ভালবাসে তবে স্বামী অন্য মহিলাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে না। সে ক্ষেত্রে কারো বিপথগামী হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আর
আল্লাহর জান্নাতও এমন মহিলাদের জন্য।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের জান্নাত সেই মহিলারা যারা তাদের স্বামীর প্রতি স্নেহশীল এবং অনেক সন্তানের জন্ম দেয়। স্বামী রাগান্বিত হলে এসে স্বামীর হাতে হাত রেখে বলে, তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাবো না।’ (সহীহুল জামে)
- আনন্দ দেওয়া:
যে স্ত্রী তার স্বামীকে আনন্দ দিয়ে আনন্দিত করে- সেই স্ত্রীকে সর্বোত্তম সম্পদ বলা হয়।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ সম্পর্কে অবহিত করব না? অর্থাৎ নেক্কার স্ত্রী। যখন সে (স্বামী) তার (স্ত্রী) দিকে তাকায় তখন স্ত্রী তাকে আনন্দ দেয়। আপনি তাকে আদেশ দিলে তিনি তা গ্রহণ করেন। যখন সে তার থেকে অনুপস্থিত থাকে, তখন সে তার সতীত্ব ও সম্পদের হেফাজত করে।’ (আবু দাউদ)
- কষ্ট না দেওয়া:
স্বামীকে সঠিকভাবে সম্মান করা এবং কষ্ট না দেওয়া একজন আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো নারী দুনিয়াতে তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতের হুরদের মধ্যে যে তার স্ত্রী হবে সে বলে, (হে অভাগিনী!) তুমি তাকে কষ্ট দিয়ো না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তিনি তোমার কাছে আগন্তুক। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন।’ (তিরমিজি)
- ঘরমুখী থাকা:
আদর্শ স্ত্রী লাজুক হবে। বাসায় থাকবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। বলা হয়, “ঘরে থাকো, প্রাচীন জাহিলী যুগের নারীদের মত প্রদর্শন করো না।” (সূরা আহযাব, আয়াত ৩৩)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘নারী হল লুকানো বস্তু। যখন সে ঘর থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে (তার সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য) প্ররোচিত করে’ (তিরমিযী)।
- অধিকার পূরণে সতর্ক:
একজন আদর্শ স্ত্রী তার স্বামীর অধিকারের পাশাপাশি আল্লাহর হক আদায়ে সতর্ক থাকবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, তার কসম, একজন স্ত্রী ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার স্বামীর হক আদায় করে। (ইবনে মাজাহ)
আরও পড়তে পারেন
ইসলামে আদর্শ স্বামীর বৈশিষ্ট্য
হাদিসের আলোঃ সময় থাকতে নবীজি (সাঃ) যে ৫ টি বিষয়কে মূল্যায়ন করতে বলেছেন
হিজাব হবে কুরআন সুন্নাহর বিধান মতে
- বিপদে সান্ত্বনা দেওয়া:
একজন আদর্শ ও গুণী স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য হল তার স্বামীকে কষ্টে সান্ত্বনা দেওয়া এবং তার অবস্থা বিবেচনা করে কথা বলা।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, আবূ তালহা (রাঃ) এর এক ছেলে ইন্তেকাল করেছেন। উম্মে সুলায়ম পরিবারের সদস্যদের বললেন, আমি তাকে না বলা পর্যন্ত কেউ তাকে (আবু তালহাকে) সন্তানের মৃত্যুর কথা বলবে না। আবু তালহা আসলে তার সামনে রাতের খাবার পরিবেশন করেন। তিনি খেয়েছেন এবং পান করেছেন। তারপর সে নিজেকে সাজিয়ে তার স্বামীর কাছে পেশ করল।
স্বামী আবু তালহা সন্তুষ্ট হলে তিনি তাকে এই বলে সান্ত্বনা দেন যে, কোনো সমপ্রদায় যদি কোনো দম্পতির নিকট একটি আমানত রাখে, অতঃপর তারা তাদের আমানত ফেরত নিয়ে নেয়, তাহলে আপনি সেটা কোন দৃষ্টিতে দেখবেন? তাদের নিষেধ করার কোনো অধিকার আপনার আছে কি? আবু তালহা উত্তর দিলেন, না।
উম্মে সুলায়ম বললেন, আপনার ছেলেকে আমানত মনে করুন । তাকে হারানো গুণ মনে করুন । এ ঘটনা অবহিত হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তায়ালা গত রাতে তোমার সাক্ষাতের বরকত দান করুন। এরপর উম্মে সুলাইমের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। (মুসলিম)
- কৃতজ্ঞ হওয়া:
একজন আদর্শ স্ত্রী ঈশ্বরের আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞ। তিনিও তার স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) বললেন, আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছিল। এর অধিকাংশ বাসিন্দাই নারী। কারণ তারা অবিশ্বাস করে। জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কি আল্লাহর সাথে গালিগালাজ করে? তিনি বলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ। আপনি যদি তাদের একজনের সাথে দীর্ঘকাল সদয় আচরণ করতে থাকেন, তখন সে আপনার সামান্য অবহেলা দেখে বলে, আমি আপনার কাছ থেকে কখনও ভাল ব্যবহার পাইনি।’ (বুখারি)
- পর্দা রক্ষাঃ
ইসলামে পর্দা ফরজ। নামাজ-রোজা না পালন করলে যেমন আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে, তেমনি পর্দা না করলেও আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘নগ্ন পোশাক পরিধানকারী মহিলারা, যারা পুরুষদের তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং তারা নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধবিশিষ্ট উটের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’(মুসলিম) ।
আল্লাহ আমাদের সকল মুসলিম পুরুষ-নারীকে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা বিশ্বাস এবং সাদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থেকে দুজনে দুজনের প্রতি সহমর্মী হওয়ার তৌফিক দান করুন । আমীন।
2 Comments