October 31, 2024
শিরক বা আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব গুরুতর মহা অপরাধ

শিরক বা আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব গুরুতর মহা অপরাধ

শিরক বা আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব গুরুতর মহা অপরাধ

শিরক বা আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব গুরুতর মহা অপরাধ

আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব করা এটি একটি গুরুতর মহাপাপ । এবং আমরা জেনে বুঝে না জেনে অনেক সময় শিরক করে ফেলি। শিরিক করার সাথে সাথে শিরিক কারী ব্যক্তি মুশরিক হয়ে যায় । সে আর মুমিন মুসলমান থাকে না। এবং প্রচলিত ক্ষেত্রে কিভাবে শিরক হয়ে যায় । তা জানিয়ে দিতেই আমাদের আজকের আলোচনা শিরক বা আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব গুরুতর মহা অপরাধ।

শিরকের সংজ্ঞাঃ- অংশীদার, মিশ্রণ, একত্রীকরণ, কোনো জিনিসের মালিকানায় একাধিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা।

ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সত্তা, গুণ বা কর্মের সাথে কোনো কিছু শরীক করাকে শিরক বলে। অন্য কথায় আল্লাহর সাথে শরীক করাকে শিরক বলা হয়। আর মুশরিক মানে- যে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে।

শিরকের শাস্তিঃ

আল্লাহ তার সাথে কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে শরীক করা হারাম করেছেন। আল্লাহ বলেন- ‘যখন লুকমান তার ছেলেকে উপদেশ স্বরূপ বললেন- হে পুত্র! আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শরীক করা বড় অন্যায়।’ (সূরা লুকমান: আয়াত ১৩)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে সাবধান। তারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কি?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

১. ‘আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা।

২. যাদু করা।

৩. বিনা কারণে কাউকে হত্যা করা; আল্লাহ যা হারাম করেছেন।

৪. সুদ খাওয়া।

৫. এতিমের সম্পদ খাওয়া।

৬. জিহাদ থেকে পলায়ন করা।

৭. বিবাহিতা নারীর অপবাদ দেওয়া।’ (বুখারী)

প্রচলিত কতিপয় শিরকের বর্ণনাঃ

মানুষ বিভিন্ন কথা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে শিরক করে এমন কিছু কাজ ও কথার বিবরণ এখানে দেওয়া হল-

  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদতের যোগ্য মনে করা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘দুই ইলাহ মানিও না; তিনিই একমাত্র ইলাহ । সুতরাং আমাকে ভয় কর (সূরা নাহল, আয়াত ৫১) ।

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। সুতরাং আমার ইবাদত কর।’ (সূরা ত্বহা, আয়াত-১৪)

  • লোক দেখানোর জন্য কোন ইবাদত  করা । যেমন- রিয়া মানে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে যে কোনো ইবাদত করা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- আমি তোমাদের উপর শিরক আসগর বা ছোট শিরকের ব্যাপারে খুব ভয় পাচ্ছি। প্রশ্ন করা হলো তা কী? তিনি বললেন, ”এটি রিয়া বা মানুষকে দেখানো ইবাদত ।” (সহীহ তারগীব ওয়াত তারগীব)

  • পীর বুজুর্গের কবরে গিয়ে সন্তান চাওয়া।
  • ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ না করলে পরিবার টিকে থাকবে না; এই ভেবে ছেলে সন্তান চাইলে আল্লাহর কর্তৃত্বে শিরিক করা হয়। (যা অধিকাংশ পিতা মাতাই করে থাকেন)
  • পীর বুজুর্গের কবরে সিজদা করা।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকো না। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আল্লাহর অস্তিত্ব ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।’ (সূরা আল-কাসাস, আয়াত 88)

অন্যত্র তিনি বলেছেন- ‘এই মসজিদগুলো আল্লাহর জন্য। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডাকো না।’ (সূরা জিন, আয়াত-১৮)

আরও পড়তে পারেন

মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম মসজিদ উদ্বোধন

উত্তম জীবনসঙ্গী পেতে আল কোরআনে শেখানো দোয়া

যাদের ইবাদত বিনষ্ট হয়ে যায় এবং কবুল হয় না

  • কোনো বুজুর্গ বা পীর সম্পর্কে এমন বিশ্বাস ও ধারণা থাকা যে তিনি আমাদের অবস্থা সম্পর্কে সর্বদাই জানেন।
  • জ্যোতিষী, গণক, ঠাকুরদের অদৃশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা।
  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে বা অন্য কিছুর নামে শপথ করা।

হজরত সাঈদ ইবনে আবু উবাইদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এক ব্যক্তিকে এভাবে শপথ করতে শুনেছেন, না! এটা কাবার শপথ।’ অতঃপর ইবনু উমর (রাঃ) তাকে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর নামে শপথ করে, সে শিরক করে। (সুনানে আবু দাউদ)

  • কোনও পীর-বুজুর্গকে দূরদেশ থেকে ডাকা এবং মনে করা যে, তিনি তা শুনতে পেয়েছেন।
  • জ্বীন বা ভূতকে লাভ-ক্ষতির কর্তা হিসেবে বিবেচনা করুন।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তার যা ইচ্ছা তা ছাড়া তাঁরা জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৫৫)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- ‘তোমাদের সামান্য জ্ঞান দেওয়া হয়েছে (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৮৫)। নভোমন্ডল, যমীন এবং এর মধ্যবর্তী সবকিছুই মহান আল্লাহর। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।’ (সূরা মায়িদা, আয়াত ১২০)

  • পীর বুজুর্গের নামে শিরনী, সাদাকাহ বা মানত প্রদান করা।
  • আল্লাহর আদেশের পরিবর্তে অন্যের আদেশ বা সামাজিক রীতি অনুসরণ করা।
  • যেকোনো সময়, মুহূর্ত, দিন বা মাসকে অশুভ মনে করা।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ মনে করা ‘শিরক’, কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ ভাবা শিরক। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। আমাদের কারো মনে কিছু জাগা স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহর ওপর ভরসা করলে তিনি তা দূর করে দেবেন। (সুনানে আবু দাউদ)

  • এক ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বললে,উপরে আল্লাহ তুমি নিচে।
  • কারও নামে কসম করা বা জিকির করা।।
  • কোনো প্রবীণের ছবিকে সম্মান করা বা কারো মূর্তি ধারণ করা।

ইসলাম ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্যকারী প্রচলিত উল্লেখিত  শিরকগুলো থেকে আমরা সর্বদা বাচার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান  করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X