November 24, 2024
হাদিসের আলোঃ মানবজীবনের অমূল্য ৫টি সম্পদ

হাদিসের আলোঃ মানবজীবনের অমূল্য ৫টি সম্পদ

হাদিসের আলোঃ মানবজীবনের অমূল্য ৫টি সম্পদ

 হাদিসের আলোঃ মানবজীবনের অমূল্য ৫টি সম্পদ

মানুষের হায়াতে জিন্দেগি একেবারেই ছোট। এ ছোট জিন্দেগীতে আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতগুলোর ব্যবহার সঠিক  করতেই হবে।  আর তার মাধ্যমেই দুনিয়ার শান্তি ও পরকালের মুক্তির আশা করা যায়। কারন মানুষের দৈহিক গঠনের চিন্তা করা যায়।  তাহলে দেখা যাবে পুরোটাতেই আল্লাহর নেয়ামতে পরিপূর্ণ।  সে নেয়ামত গুলোর যথাযথ ব্যবহার বয়ে আনতে পারে  মানব জীবনে বহুবিধ কল্যাণ ।  যে জিনিসগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে এরকম পাঁচটি জিনিসের আলোচনা  নিম্নে পেশ করা হলো ।

মানুষের জীবনে পাঁচটি জিনিস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি তারুণ্য, স্বাস্থ্য, প্রাচুর্য, অবসর এবং জীবন। এসবের প্রতি মনোযোগ দিলে ইহকাল ও পরকালে সফলতা পাওয়া যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়ে বললেন, তুমি পাঁচটি কাজের আগে পাঁচটি কাজের মূল্যায়ন কর।

“বার্ধক্যের আগে যৌবনের মূল্য। অসুস্থতার আগে সুস্থতার মূল্য । দারিদ্র্যের আগে প্রাচুর্যের মূল্য। ব্যস্ততার আগে অবসরের মূল্য এবং মৃত্যুর আগে জীবনএর মূল্য । “(বায়হাকি)

নিচে পাঁচটি বিষয় আলোচনা করা হলো।

এক. বয়ঃসন্ধিকাল বা যৌবনকাল: বয়ঃসন্ধিকাল মানব জীবনে বৃদ্ধির একটি সময়কাল। এ সময় সকল কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি। তাই যুগে যুগে ইসলামের দাওয়াতের প্রতি তরুণদের সাড়া ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তাই কাহাফ বা গুহাবাসীদের সম্পর্কে বলেছেন, “তারা ছিল একদল যুবক যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদের সঠিক পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।” (সূরা কাহাফ, আয়াত ১৩)

কিয়ামতের দিন সাত শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবে। তাদের মধ্যে যুবকরাও রয়েছে, যারা আল্লাহর ইবাদতে বড় হয়েছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ সাত প্রকার মানুষকে আরশের নিচে ছায়া দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। (এর দ্বিতীয় স্তরে তিনি উল্লেখ করেছেন) যুবকদের (এবং যুবতী), যারা প্রভুর ইবাদতের মধ্যে বড় হয়েছে।

(বুখারী)

দুই. সুস্থতা: সুস্থতা আল্লাহর এক মস্ত বড় বিশেষ নেয়ামত। অসুস্থ হওয়ার পর এর মূল্য অনুভব করা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে মুহসিন (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার জায়গায় নিরাপদ, শারীরিকভাবে সুস্থ এবং সারাদিনের জন্য তার সমস্ত খাবার আছে, তার কাছে সমগ্র বিশ্বের সুখ ও আরাম রয়েছে। (তিরমিযী)

আরেকটি হাদিস স্বাস্থ্যের প্রতি অধিকাংশ মানুষের উদাসীনতার কথা বলে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “অধিকাংশ মানুষ দুটি নিয়ামত সম্পর্কে প্রতারিত হয়। এটি সুস্থতা এবং অবসর সময়। (অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষই এই সময়গুলোকে পার্থিব ও অপার্থিব কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে না।) (বুখারি)

তিন. প্রাচুর্য: সম্পদ একটি স্বাভাবিক জীবন যাপনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়ে মানুষ অভাবের কথা ভুলে যায়। এমনকি সে তার নৈতিকতাবোধও হারিয়ে ফেলে। তাই সব সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সম্পদ ব্যয় করে পরকালের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি দান করবে এবং সৎকর্মশীল হবে এবং নেক আমল করবে, আমি তার জন্য পথ সহজ করে দেব। (সূরা লায়ল, আয়াত ৫-৭)

চার. অবসর: অনেকেই অবসর সময় কাটান নিষ্ক্রিয়ভাবে। কিন্তু মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবসরের সময়ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা যায়। পরকালে মুমিনরা দুনিয়াতে অবহেলায় কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত অনুতপ্ত হবে। কেননা দুনিয়াতে সামান্য আমলের প্রতিদান পরকালে অনেক বেশি হবে। তাই বলা হয়, ‘যখনই অবসর নেবেন, তখনই (ইবাদতে) মগ্ন হবেন। আর তোমার প্রভুর প্রতি মনোনিবেশ কর।’ (সূরা ইনশিরাহ, আয়াত ৭-৮)

ইচ্ছা শক্তির কারণে অবসরের সাধারণ কাজের জন্যও সওয়াব লেখা হয়। আবু মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে মুয়াজ (রা.) বলেন, ‘আমি রাতে নামায পড়ি এবং ঘুমাই। আমি আমার ঘুমের মধ্যেও এমন আশা করি, যা আমি আমার নামাজে করে থাকি।’ (অর্থাৎ আমার ঘুম থেকে ইবাদতের প্রস্তুতি উদ্দেশ্য থাকে। তাই ঘুমের জন্যও আমি প্রতিদান পাব বলে আশা করি।

পাঁচ. জীবন: এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত মানুষের জন্য মূল্যবান। মৃত্যুর পর মানুষ এ সময়ের সকল আমলের প্রতিদান দেখে আফসোস করবে। কিন্তু তা কোনো কাজে আসবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ এবং অবিচল থাকে, মৃত্যুকালে তাদের কাছে ফেরেশতা অবতরণ করে বলে, তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কোরো, যার ব্যাপারে তোমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।’ (সুরা হামিম সিজদা, আয়াত : ৩০)

জীবনকে মূল্যায়ন করা শিখি।  জীবনের স্তরে স্তরে গেঁথে দেওয়া মানুষের সাথে গেঁথে দেওয়া  আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিটি উপহারের কদর করা শিখে যাই।  তাহলে দুনিয়া আখেরাতে আমাদের জন্য কল্যাণ অপেক্ষা করছে।  আল্লাহ আমাদের তার পথে সঠিক সময়ে  জীবন ব্যয় করে তাকে এবং তার জান্নাতকে পাওয়ার তৌফিক দান করুন।  আমীন।

আরও সংবাদ

স্ত্রী, স্বামীর কোন পাশে ঘুমান সুন্নত?

জিন কি মানুষের উপর ভর করতে পারে?

সৌন্দর্য ঐতিহ্য আয়া সোফিয়ার ইতিহাস

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X