কোথাও নেই ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা
রাজধানী ঢাকায় অনুমোদনহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা কতো, সেটি কারও জানা নেই। কোনো সংস্থার কাছেই নেই কোনো তালিকা। অথচ নগরজুড়ে যত্রতত্র রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন।
ফলে, কোন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বা কোনটি নয় সে সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কাজের সক্ষমতাও রাজউকের নেই। কালে ভদ্রে কিছু অভিযান চালায় প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু যে খবরটি বিশ্ব গণমাধ্যমে ঝড় তুলেছে সেটি হলো, ভূমিকম্পে মাত্র এক বছর আগেই নির্মাণ করা বহু বহুতল ভবনও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
ক্রেতাদের মন গলাতে ভবনগুলোকে ভূমিকম্প সহনীয় বলে বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলো আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন সেই প্রতিষ্ঠানের মালিককে খুঁজছে তুর্কি পুলিশ।
তুরস্কের দৃশ্যপট আলোচনায় এনেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে, যে মেগা শহরের যত্রতত্র রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। কী নতুন ঢাকা কী পুরনো ঢাকা, সবখানেই একই চিত্র।
সম্প্রতি এই শহর যেন আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। প্রতি বছরই বাড়ছে সুউচ্চ ভবনের সংখ্যা। এক সময়ের জলাভূমিগুলো এখন আকাশ ছোঁয়া ভবনগুলোর দখলে।
প্রশ্ন উঠছেও এসব সুউচ্চ ভবন কতোটা নিরাপদ, কতোটা ভূমিকম্প সহনীয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কাছেও এর কোন উত্তর নেই। কারণ তারা চেয়েও তালিকা পায় না।
ঢাকায় ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় রাজউক। কিন্তু সেটি নকশা মতো হলো কিনা, ছয় তলার জায়গায় আট তলা হলো কিনা, ভালো মানের সামগ্রী ব্যবহার হলো কিনা, সেটি কেউ দেখে না।
নগর বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রাজধানীতে গড়ে উঠা ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় কিনা সেটি নির্ণয়ের মতো প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি নেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)।
এমনকি ঢাকায় অনুমোদনহীন ভবনের সঠিক সংখ্যা জানা নেই রাজউকের। জলাশয় খালবিল নদী দখল করে কতো ভবন হয়েছে, জানা নেই সেই সংখ্যাও।
অথচ ভূমিকম্পে সবার আগে ধসে পড়ে জলাভূমিতে গড়ে ওঠা সুউচ্চ ভবন। তা হলে করণীয় কি, সম্ভাব্য দুর্যোগের জন্য কীভাবে প্রস্তুত করা যাবে এই শহরকে?
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বলছে, বিদ্যমান বাস্তবতায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ন্ত্রণে আলাদা সেল গঠন করে দিলে তাদের সঙ্গে সবপক্ষ সমন্বয় করে একটি কৌশল ঠিক করতে পারবে।
৫২ বছর পরও রাজউক একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে সমস্যার কোন শেষ নেই। প্রতিষ্ঠানটির স্বয়ং চেয়ারম্যান সেকথা অকপটে মেনেও নিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রাজধানীর ভবনগুলোতে জরিপ চালিয়ে সেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় কিনা এ ব্যাপারে সনদ দেয়া যেতে পারে।
তারা জানান, এই সনদ না থাকলে ভবনের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পনির সংযোগ বন্ধ করে দিতে হবে। মালিক ও ভাড়াটে উভয়পক্ষকে বাধ্য না করতে পারলে সব উদ্যোগই নিস্ফলা হবে।