৩ মাসের নিষ্পাপ শিশুকে ৫১ বার গরম রডের খোঁচা!
“কোয়াক বা হাতুড়ে ডাক্তার এর অভাব নাই আমাদের মত অনুন্নত-ডেভলপিং দেশগুলোতে । অনেক সময় হাতুড়ে ডাক্তারদের কথাবার্তা শুনলেই এবং ফার্মেসিতে চিকিৎসা করাতে গেলে মনে হয় তাদের চেয়ে বড় ডাক্তার তাবৎ দুনিয়াতে আর কেউ নেই । তবে একথা সত্য এমবিবিএস ডাক্তারদের আর বড় বড় হসপিটালগুলির চিকিৎসার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ডাকাতির ভয়ে ; বহুৎ মানুষ কোয়াক ডাক্তার দের কাছে ভিড় জমায় । এই কথাও সত্য যে, এসব দেশে আইনের ফাঁকফোকর থাকার কারণে বিজ্ঞান না জানা এবং বিজ্ঞানের ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা সত্বেও ছয় মাসে বা সর্বোচ্চ এক বছরের কোর্স করে একটি ফার্মেসিতে বসে বনে যান পাক্কা ডাক্তার। বড়ই হাস্যকর আমাদের অনুন্নত-ডেভলপিং দেশগুলোর কার্যকলাপে। আর এর ফলশ্রুতিতে নিষ্পাপ শিশু সহ সাধারণ মানুষের জীবন চলে যাবে তা কখনই এবং কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে হ্যাঁ, অতি শীঘ্রই প্রয়োজন একজন ওমর (রাঃ)চরিত্রের নেতা।“
তিন মাসের এক শিশু। জন্মের পর হঠাৎ করেই সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু রোগ সারাতে চিকিৎসকের কাছে গেলেন না অভিভাবকরা। স্থানীয় ‘কোয়াক’(হাতুড়ে) চিকিৎসকের উপরেই ভরসা রাখলেন। আর তার পরিণতি এক নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু।
সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় এমনটাই ঘটেছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে সারিয়ে তুলতে পাড়ার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিল পরিবার। এরপর তার অভিনব চিকিৎসায় শিশু আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। কী এমন চিকিৎসা করেছিলেন সেই ‘কোয়াক’ চিকিৎসক? সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নিউমোনিয়া কমাতে লোহার গরম রড দিয়ে ৫১ বার শিশুর পেটে ‘খুঁচিয়েছিলেন’ তিনি। এতেই গুরুতর আহত হয় তিনমাসের সদ্যজাত মাসুম শিশুটির। এরপর ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশু। শেষে ১৫ দিনের মাথায় হাসপাতাল থেকে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মধ্যপ্রদেশের শাহদল জেলার একটি প্রত্যন্ত ও আদিবাসি অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দা শিশুর অভিভাবকদের। ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত আধিকারিকরা জানান, শিশুটির দেহ ইতিমধ্যে আত্মীয়রা করব দিয়েছেন। তবে ময়না তদন্তের জন্য দেহটি কবর থেকে বার করে আনা হবে। ময়না তদন্তের পর জানা যাবে ঠিক কীভাবে তার ‘চিকিৎসা’ করেছিলেন ‘কোয়াক’ চিকিৎসক। শনিবার এই পরীক্ষা হওয়ার কথা। ঘটনাটিকর কথা শুনে দ্রুত সেখানে পৌঁছান মহিলা ও শিশু কল্যাণ দফতরের আধিকারিকরা। শাহদলের কালেক্টের বন্দনা বৈধ জানান, তাঁরা এসে দেখেন ১৫ দিন আগে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গিয়েছে।
নিউমোনিয়ার জন্য শিশুটির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল। কিন্তু কোনও চিকিৎসা হয়নি তার। তার কথায়, স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী দেখেন শিশুটির মা গরম লোহার রড দিয়ে শিশুকে খোঁচাচ্ছেন। তিনিই প্রথম বারণ করেন এমনটা করতে। মধ্যপ্রদেশের বেশ কিছু আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় নিউমোনিয়া হলে এভাবে র়ড দিয়ে খুঁচিয়েই শিশুর চিকিৎসা করা হয়। এটি বেশ জনপ্রিয় ‘চিকিৎসা’। বৈধের কথায়, এমন অন্ধবিশ্বাসের কারণেই প্রাণ হারাতে হল একরত্তি শিশুকে।
যুব কংগ্রেসের সভাপতি ও ডাক্তার বিক্রান্ত ভুরিয়া বলেছেন যে রড দিয়ে খোঁচা দেওয়ার ফলে একটি শিশু তাত্ক্ষণিকভাবে মারা যেতে পারে। এই ‘কৌশল’ সাধারণত উপজাতীয়দের মধ্যে ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এটি নিউমোনিয়া সংক্রমণ কমায় না। যার জেরে মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর।