ছাত্রলীগের যন্ত্রণায় হলছাড়া, বিছানাপত্র নিয়ে প্রশাসন ভবনের গেটে শিক্ষার্থী
“বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে অবস্থান করা; কি পরিমাণ কষ্টের, লজ্জার, শাস্তির, অপমানের, নির্যাতনের। এবং মানসিক ও শারীরিক লাঞ্ছনার এক ভয়াবহ অপশাসনের নির্মমতার কঠিন কাল গহব্বরে বসবাসের এর সমতুল্য তা হলে অবস্থান করেছে এমন সবাই জানে। সেটা মেডিকেলের হল হউক , সাধারণ ইউনিভার্সিটিরহল হউক , কিংবা টেকনিকেল-ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির হলই হউক না কেন; কোথাও এই চরম বিপদ থেকে বাঁচার উপায় খুব সহজ বলে মনে হয় না। নির্লজ্জ বেহায়া বদমাশ ছাত্র রাজনীতি-খোরেরা এবং এই বাংলাদেশের ইতিহাসে সকল আমলের সরকারি ছত্রছায়ার ছাত্র রাজনীতিকরা বিষিয়ে তুলছে হলের পরিস্থিতি। নষ্ট করে এবং নোংরা করে ফেলছে হলে অবস্থানরত মেধাবী ছাত্রদের জীবন। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দুমড়ে-মুচড়ে এবং এই ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন ছাড়া কোনো উপায় নাই। এবং সকল যুক্তিকে বস্তায় ভরে মাটি চাপা দিয়ে এককথায় সকল ধরনের ছাত্র-রাজনীতিকে এক্ষণই বন্ধ করার বিকল্প নাই নাই নাই এবং নাই।“
বিছানাপত্র নিয়ে প্রশাসন ভবনের গেটে অবস্থান নেয় ওই শিক্ষার্থী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভোস্টের নির্দেশে হলে বরাদ্দ হওয়া সিটেই উঠেছিল জাকির হোসেন নামে এক ছাত্র। তবে থাকতে পারেনি এক মাসও। তাকে সিট থেকে নামিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। সেখানে উঠিয়ে দেয় আরেক ছাত্রকে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো সুরাহা মেলেনি। অবশেষে কাঁথা-বালিশ নিয়ে বিছানা পাতে প্রশাসনিক ভবনের গেটে। এতে ওই ভবনে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
আজ বৃহস্পতিবার(০২/০২/২০২৩) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক ও হল প্রভোস্ট অধ্যাপক একরামুল ইসলামের আশ্বাসে অভিনব এই প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থগিত করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী জাকিরকে গত ২ জানুয়ারি শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ১৩৫ নম্বর কক্ষ বরাদ্দ দেয় প্রশাসন। সে সেই মোতাবেক ওই কক্ষে ওঠে। কিন্তু সে সিটে উঠার কয়েকদিন পর হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিন ইসলাম ও তার অনুসারীরা ওই সিটে অন্য এক শিক্ষার্থীকে তুলে দেয়। বিষয়টি হল প্রাধ্যক্ষকে জানালে তিনি জাকিরকে নিজ সিটেই থাকতে বলেন। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতাদের ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকির কারণে তা আর সম্ভব হয়নি।
ছাত্রলীগ দ্বারা ভুক্তভোগী জাকির বলেন, গত ২২ জানুয়ারি রাতে আমাকে ওই সিটে দেখে হল প্রাধ্যক্ষকেও গালাগাল করে ছাত্রলীগের হল সাধারণ সম্পাদক মোমিন ও তাঁর অনুসারীরা। তারা ২৯ জানুয়ারির মধ্যে কক্ষ ছেড়ে দিতে বলে। কিন্তু আমি কক্ষ না ছাড়ায় ১ ফেব্রুয়ারি রাতে আমার বিছানাপত্র ফেলে দেয় তারা। পরে আর ওই সিটে উঠতে পারিনি। বাধ্য হয়ে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বিছানাপত্র নিয়ে প্রশাসন ভবনের গেটে অবস্থান নেই। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে হলে ফিরে আসি। কিন্তু কতক্ষণ নিরাপদে থাকতে পারবো তা নিয়ে সংসয়ে আছি। সামনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা। পড়াশোনা করতে পারছি না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে শামসুজ্জোহা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মমিন ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক একরামুল ইসলাম বলেন, সিট নিয়ে সমস্যা থাকায় জাকির প্রশাসন ভবনের গেটে বিছানাসহ অবস্থান নেয়। আমরা তাকে পরে হলে নিয়ে আসি। সে এখন নিজের সিটেই অবস্থান করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য হলের অধ্যক্ষদের নিয়ে প্রশাসনের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করছি।