বাংলাদেশে এই বছরের গত ৮ মাসে ধর্ষিত ৮৩০, আত্মহত্যা ৭৯
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ৮৩০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতিদিনে ৩ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪১১ জন নারী। এদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৫৩ জনকে, পারিবারিক নির্যাতনের ফলে আত্মহত্যা করেছে ৭৯ জন ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৪৮টি।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) ‘আমি নির্ভীক জীবন চাই: নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত সমাজের অঙ্গীকার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে নারী নেত্রীরা এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নারী নেত্রীরা জানান, দেশের প্রথম সারির ৯টি পত্রিকার সংবাদ বিশ্লেষণ করে নারীদের উপর নির্যাতনের এ তথ্য পাওয়া গেছে।
লিখিত বক্তব্যে ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটে’র প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। এ অর্জনে নারীদের একটি বড় অবদান রয়েছে। তারপরও নারীরা ঘরে-বাইরে, সব সম্পর্কে, সব বয়স-শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সরকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও পরিস্থিতি বিশ্লেষণে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বরং ভয়াবহতা ও নৃশংসতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।
নারী ও শিশুদের প্রতি নির্যাতন বাড়ার পেছনে সুষ্ঠ তদন্তের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, দেশে সংঘটিত নারী নির্যাতন মামলাগুলো তদন্তেই বিনষ্ট হয়ে যায়। অধিকাংশ নারী নির্যাতনের মামলার তদন্তে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা না বলে নিজের মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন। এতে অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। আবার অনেক অপরাধী জামিনে বের হয়ে কৌশলে বিচার এড়িয়ে যায়।
এ অবস্থায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ৯টি দাবি তুলে ধরেন নারী নেত্রীরা। তাদের দাবিগুলো হলো-নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে হবে, উচ্চ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে, বিচার চলাকালে নির্যাতনের শিকার নারী, শিশু ও পরিবারের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় সাক্ষী প্রদান প্রক্রিয়া যুগোপযোগী করতে হবে, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, পারিবারিক নির্যাতন (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ সফল করতে হবে, ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে, নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করাসহ বৈষম্যমূলক আইন ও নারী নির্যাতন বিরোধী আইন সংশোধন করতে হবে।
ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘নারী নিরাপত্তা জোট’ ও ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’।