শীতে হুমকিতে ইউক্রেনের ৩০ লাখ মানুষ
ইউক্রেনের আঞ্চলিক বাণিজ্যিক শহর খেরসন থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করলেও, রুশ বাহিনী বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ এ অঞ্চলের জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা ধ্বংস করে। শুধু ওই এলাকাই নয়, গত কয়েক সপ্তাহের লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশটির প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে মস্কো। ফলে এই শীত মৌসুমে বিদ্যুৎ ছাড়া ওইসব এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, অন্তত ৩০ মিলিয়ন বাসিন্দাকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। ইতিমধ্যে, কিয়েভ খেরসন থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ ও বিদ্যুৎ চালিত এলাকায় সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়- এমন এলাকাগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে ইউক্রেনের
ইউরোপে নিযুক্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হ্যান্স ক্লুজ আগামী কয়েক মাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এখন এক কোটি ইউক্রেনীয় বিদ্যুৎহীন। দেশের অর্ধেক বিদ্যুৎ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রবল শীতে অনেকের মৃত্যুও হতে পারে। এই কর্মকর্তার ধারণা, শীতে গরম ও নিরাপত্তার খোঁজে ২০ থেকে ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে মানুষের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে। গত ফেব্রুয়ারিতে হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৭৮ লাখের বেশি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ইউক্রেন থেকে অন্যত্র চলে গেছে। এ ছাড়া আরও কয়েখ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে, তবে তারা দেশ ছেড়ে যায়নি।
ক্লুজ আরও বলেন, হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ ঘাটতি বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে। মানুষকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে অসুবিধা হচ্ছে। এ ছাড়া শীতে করোনাভাইরাস ও মৌসুমি ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত শুধু হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত স্থাপনায় অন্তত ৭০০ হামলা চালানো হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে খেরসন থেকে পিছু হটার সময় হাসপাতাল ও ফার্মেসির পাশাপাশি মুদি দোকানগুলোও ধ্বংস করে গেছে রুশ সেনারা। তারা অনেক বাসিন্দাকে খাবার এবং ওষুধ পর্যন্ত দেয়নি।
এদিকে খেরসনে রাশিয়ার সৈন্য ও শীর্ষ কর্মকর্তারা হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণ করে যুদ্ধাপরাধ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন একজন মার্কিন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ওই অঞ্চলে চারটি রুশ নির্যাতন কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে, মস্কো আত্মসমর্পণের পর বেশ কয়েকজন সেনাকে হত্যার জন্য ইউক্রেনকে অভিযুক্ত করেছিল।
অন্যদিকে, গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কায় ইউক্রেন কিয়েভের একটি ঐতিহাসিক রুশ গির্জায় অভিযান চালায়। ক্রেমলিন এ ঘটনার নিন্দা করেছে।