বিশ্বে পুরুষের শুক্রাণুর হার অর্ধেকের বেশি কমেছে: গবেষণার ফলাফল
বিশ্বব্যাপী পুরুষের শুক্রাণুর হার অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি জার্নালে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে একদল গবেষক বিষয়টি তুলে ধরেন। তারা বলেন, পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস রোধে এখনই পদক্ষেপ না নিলে মানবজাতি সন্তান ধারণে সংকটে পড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে দ্রুত সন্তান ধারণে অক্ষম পুরুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিশ্বের জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাবে। ‘হিউম্যান রিপ্রোডাকশন আপডেট’ নামে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকীতে গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। নিজেদের শুক্রাণু উৎপাদনক্ষমতার বিষয়টি নিয়ে সচেতন ছিলেন না, এমন ১৫৩ জন পুরুষের শুক্রাণু নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭৩ সালের ২০১৮ সালে শুক্রাণুর ঘনত্ব গড়ে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া এই সময়ের মধ্যে (৪৫ বছর) শুক্রাণুর হার কমেছে ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ।
২০১৭ সালে এই গবেষকেরাই শুক্রাণুর হার নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। ওই গবেষণায় দেখা যায়, গত চার দশকে পুরুষের শুক্রাণুর হার কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তথ্য–উপাত্ত না থাকায় ওই গবেষণাটির ফল শুধু ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার ওপর ভিত্তি করে তৈরি বলে সেবার সমালোচিত হয়েছিল।
তবে এবার গবেষকেরা ৫৩টি দেশের পুরুষদের শুক্রাণু নিয়ে গবেষণা করেছেন। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোর পুরুষদের শুক্রাণু কমার বিষয়টি এবার উঠে এসেছে।
১৯৭২ সাল থেকে সব মহাদেশ থেকে সংগৃহীত তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে শুক্রাণু উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার হার বেড়ে চলেছে। গবেষকেরা দেখতে পেয়েছেন প্রতিবছর পুরুষের শুক্রাণুর হার কমেছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ করে।
তবে এ শতাব্দীতে শুক্রাণুর হার কমছে বেশি। কারণ, ২০০০ সালের পরের তথ্য–উপাত্তে দেখা যায় যে এই সময়ে প্রতিবছর পুরুষের শুক্রাণুর হার গড়ে ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমেছে।
গবেষণা নিবন্ধটির অন্যতম লেখক জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাগাই লেভিন বলেন, ‘আমি মনে করি, বিশ্ব যে ভুল পথে আছে, তার আরও একটি ইঙ্গিত এই গবেষণা। আমাদের এটা নিয়ে কিছু করতে হবে। এটা একটা সংকট। চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে এখনই এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তবে এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পুরুষের বয়স, বীর্যপাত না হওয়ার সময়কাল, কম শুক্রাণু উৎপাদন ক্ষমতার মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হলেও শুক্রাণুর গুণমানের অন্যান্য দিক বিবেচনা করা হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান, অ্যালকোহল পান, স্থূলতা এবং পুষ্টিকর খাবার না খেলে পুরুষের স্পার্ম কাউন্ট কমে যেতে পারে। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা শুক্রাণুর উত্পাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।