শিশু বাচ্চার দুধের জন্য চাল চুরি, একজন ‘চোরের’সরল স্বীকারোক্তি: বাংলাদেশ
“চপেটাঘাত তাদের কপোলে যারা মানুষের অধিকারে তাদের নোংরা হস্তক্ষেপ করছে, মানুষ থেকে কেড়ে নিচ্ছে তাদের কর্ম, তাদের রুজি। আর নোংরা রাজনীতিতে মেতে ওঠে সকল কিছুকে মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ধিক তাদের শত ধিক” ।
পাড়ার রাস্তার মাথায় তোলপাড় হয়। বেশ কয়ে কজন নারী-পুরুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে জট পাকিয়ে যায়। পথচারীরাও দাঁড়িয়ে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন। । চাউলের বস্তা চুরি করে ধরা পড়েছে সে। ঘিরে থাকা লোকজনের প্রাচীর টপকে চাউল চোরের সামনে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলে তার নাম বাবু বলে জানায়।
তরুণ বয়সে এখনো শারীরিক সক্ষমতা কাজ করে চুরি কেন? বাবু উত্তর দিল- ঘরে একটা ছোট বাচ্চা আছে। গত কয়েকদিন ধরে তার জন্য দুধ কিনতে পারিনি। হাতের কাছে চাউল বস্তাটি দেখে নিয়ে যেতেই লোকজন ধরে ফেলে তাকে । চাউলগুলো নিতে পারলে বিক্রি করে বাচ্চার জন্য দুধ কিনতাম। পরিচিত বিত্তবান দুই-একজনকে শিশুর কথা বললেইতো সাহায্য করতো তারা, তা না বলে এভাবে চুরির পথ কেন বেঁছে নিলে? কাজ নেই আয় নেই । বাবু বলে, সত্যি বলছি। মানুষ আর এত সহজে গরীবকে দিতে চায় না। তাছাড়া গ্রামে কোনো কাজ নেই। বেশ কিছুদিন ধরে শহরে কাজ খুঁজছি। কোথাও চাকরি পাইনি। পরিবার নিয়ে আমি খুবই হতাশ। সবকিছুর দাম নাগালের বাইরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হিমশিম খাচ্ছি। কিভাবে শিশুর খাদ্য কিনবেন
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে বগুড়া শহরের বাদুরতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বগুড়ার একটি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন বাবু। তার কোন সহজ স্বীকারোক্তিমূলক আয় নেই। কোন খরচ নিয়ন্ত্রণ নেই. আমি আমার পরিবারের সাথে খাই না। কোথাও কোনো কাজ নেই। ঘরে খাবার নেই। মেয়ের বয়স অনেক ছোট। মায়ের বুকের দুধ পান না। মায়ের পুষ্টির অভাবের কথা চিকিৎসক ডা. আমিও তাকে ভালো কিছু খেতে দিতে পারি না। মানুষ হিসেবে খুব অসহায় লাগছে।
করোনা পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান সূচকও নিচে নেমে গেছে। অনেক লোক তাদের চাকরি হারিয়েছে। দিন যাচ্ছে এবং এর প্রভাব পড়ছে সমাজে।
মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছে। ২০২০ সাল থেকে, যারা তাদের চাকরি হারিয়েছে তারা তাদের তহবিল নিষ্কাশন শুরু করেছে। এখন তাদের তহবিল শূন্য। দিগ্বিদিক ছুটছে টাকার জন্য। দিন দিন মানুষের আয় কমছে। দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। কাজের ক্ষেত্র একেবারেই নেই। ফলে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে ছোটখাটো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। একজন চোর চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে আমরা মারধর শুরু করি, কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে সে চুরি করেছে তা কেউ খুঁজে বের করার চেষ্টা করিনা । বরং অপরাধের কারণ নির্ণয় করে সামাজিকভাবে এসব ক্ষুদ্র অপরাধ দূর করা যেতে পারে।
1 Comment