গাজার মুসলিমদের প্রতি সংহতিতে জেগে উঠেছে বাংলাদেশ
মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির ঘোষণাপত্রে দাবি ও অঙ্গীকার

লক্ষ লক্ষ মানুষের অংশগ্রহণে 'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচি পালিত হয় বাংলাদেশের ঢাকায়। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে ঘোষণাপত্র এবং অঙ্গীকার পাঠ করা হয়। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলন বাংলাদেশ’ (Palestine Solidarity Movement Bangladesh) কর্তৃক ঘোষিত 'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচি শেষ হয়েছে। শনিবার বিকাল ৩টার কিছু পরেই এই কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল ৪টার দিকে ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং বক্তব্য রাখেন।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি—সমবেত হয়েছি। গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেওয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ।
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, “আমরা দেখেছি, গাজায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, ধ্বংস চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল। এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইসরাইলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইসরাইলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে”।
মাহমুদুর রহমান বলেন, “পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে আজ আমরা চার স্তরে আমাদের দাবিসমূহ উপস্থাপন করব”-
১. জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরাল দাবি
২. মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসির কাছে দাবি
৩. বাংলাদেশের সরকারের প্রতি দাবি
৪. মুসলিম উম্মাহর প্রতি দাবি
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরাল দাবি
আমাদের প্রথম দাবি জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে, কারণ তারা সকল মানুষের অধিকার রক্ষা এবং দখলদারিত্ব ও গণহত্যা প্রতিরোধে তাদের দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করে। দাবিগুলো হল-
১। জায়নবাদী ইজরালের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে;
২। যুদ্ধবিরতি নয়—গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে,
৩। ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে;
৪। পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে;
৫। ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা, এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে;
মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসির কাছে দাবি
১। ইসরাইলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে।
২। জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
৩। গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে।
৪। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরাইলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে।
৫। জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে;
বাংলাদেশের সরকারের প্রতি দাবি
১। বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘Except Israel’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরাইল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে।
২। সরকারের ইসরাইলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে।
৩। রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানিনীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে।
৫। জায়নবাদের দোসরদের ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে, যেহেতু হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয়—বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর।
৬। পাঠ্যবই ও শিক্ষানীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে।
মুসলিম উম্মাহর প্রতি দাবি
১। আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করবো—প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে।
২। আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত কররো, যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সব প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ।
৩। আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলব, যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে।
৪। আমরা বিভাজিত হব না—কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না।
আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়।
আমরা শুরু করব, নিজেদের ঘর থেকে, ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ—সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে।
আমরা মনে রাখব- গাজার শহিদরা কেবল আমাদের দোয়া চান না—তারা আমাদের প্রস্তুতি চান।
বাংলাদেশ এর আরো খবর

ফ্যাসিবাদের মুখোশ উন্মোচনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বৈশাখ উদযাপন / আনন্দ শোভাযাত্রায় ‘পানি লাগবে পানি’, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ

সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

উন্নত বিশ্বে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সমূহ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে: ড.আসিফ নজরুল

গবেষণা ও মহাকাশ অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন / ৫৪ তম দেশ হিসেবে নাসা’ র আন্তর্জাতিক জোটে যুক্ত হলো বাংলাদেশ

সিলেটসহ অন্যান্য স্থানে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ
