February 13, 2025
গাজাবাসীকে উচ্ছেদ করার ক্ষমতা কারো নেই: এরদোয়ান

গাজাবাসীকে উচ্ছেদ করার ক্ষমতা কারো নেই: এরদোয়ান

গাজাবাসীকে উচ্ছেদ করার ক্ষমতা কারো নেই: এরদোয়ান

গাজাবাসীকে উচ্ছেদ করার ক্ষমতা কারো নেই: এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া ফিলিস্তিনিদের অপসারণের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্প সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গাজা থেকে দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করে ভূখণ্ড পুনর্গঠনের প্রস্তাব করেছেন। এই পরিকল্পনার বিশ্বজুড়ে নিন্দা করা হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, গাজা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল উপত্যকাটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে। উপত্যকার বাসিন্দাদের অন্যত্র পুনর্বাসিত করা হবে। এই সপ্তাহের শুরুতে,  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন যে, তিনি গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে মিশর ও জর্ডানে পুনর্বাসিত করতে চান। তিনি গাজা পরিষ্কার এবং সেখানে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়েও কথা বলেছেন।

এদিকে, রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ফিলিস্তিনিদের বহিষ্কারের ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার ক্ষমতা কারও নেই।

বিশ্ব সংবাদমাধ্যমগুলো  জানিয়েছে যে, রবিবার মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোগান বলেন, “গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনিদের। এই হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী মাতৃভূমি থেকে গাজার মানুষকে অপসারণ করার ক্ষমতা কারও নেই।” এরদোগান ট্রাম্পের প্রস্তাবকে মূল্যহীন বলে অভিহিত করে বলেন, “ইহুদিবাদী নেতৃত্বের চাপে যুক্তরাষ্ট্র  প্রশাসন যে, গাজা প্রস্তাব দিয়েছে তার কোনও গুরুত্ব নেই।”

এর আগে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ফিলিস্তিনি টেলিভিশনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে গাজাবাসীদের জোরপূর্বক উচ্ছেদের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ কোনওভাবেই অগ্রহণযোগ্য।” ট্রাম্প গাজাকে ধ্বংসস্তূপ এবং অবিস্ফোরিত বোমা থেকে পরিষ্কার করে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেখানে বসবাসকারী মানুষকে কীভাবে স্থানান্তরিত করা হবে তা বলেননি। তিনি বলেন, ” যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার দায়িত্ব নেবে এবং আমরা সেখানে আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব।”

ট্রাম্প বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকা কিনে এর মালিকানা নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গাজাকে একটি “বড় রিয়েল এস্টেট সাইট” হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলিকেও এটি পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। আমাদের পৃষ্ঠপোষকতায় অন্যরা এটি করতে পারে।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা গোষ্ঠী হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ, পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ট্রাম্পের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। একই সাথে, তারা আরও মন্তব্য করেছে যে, যদি গাজার বাসিন্দাদের সেখান থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে তা জাতিগত নির্মূলের শামিল হবে।

উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য নীতির পরিবর্তন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর এবং দখলকৃত গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো পদক্ষেপগুলি এর উদাহরণ। তবুও, তার সর্বশেষ প্রস্তাবটি একেবারেই আশ্চর্যজনক।

কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে, একজন ইউএস প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের একটি অংশ দখল করে এবং সেখানকার জনগণকে উৎখাত করে ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের সমাধান করবেন। স্পষ্টতই, এই পরিকল্পনাটি যদি বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হবে।

কিছু ফিলিস্তিনি গাজা ছেড়ে অন্যত্র নতুন জীবন গড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ১৫০,০০০ ফিলিস্তিনি গাজা ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু অনেকেই গাজা ছেড়ে যেতে অনিচ্ছুক বা অক্ষম। কারণ তাদের আর্থিক সামর্থ্যের অভাব রয়েছে অথবা তাদের মাতৃভূমি গাজার প্রতি গভীর অনুভূতি রয়েছে।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় অনেক গাজাবাসী তাদের পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। এই সময়কালটি নাকবা বা আরবি শব্দ যার অর্থ ‘বিপর্যয়’ নামে পরিচিত। আরেকটি নাকবার ভয় অনেকের কাছেই অসহনীয় হবে এবং তারা গাজার সংকীর্ণ অঞ্চলে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে।

ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেন এমন ফিলিস্তিনিদের জন্য এর একটি অংশ হারানো একটি অঙ্গ হারানোর মতোই বেদনাদায়ক হবে।

১৯৪৮ সাল থেকে গাজা ভৌগোলিকভাবে পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন। পূর্ববর্তী শান্তি আলোচনা, সেইসাথে ট্রাম্পের ২০২০ সালের শান্তির জন্য দৃষ্টিভঙ্গি, দুটি অঞ্চলকে সংযুক্ত করার জন্য একটি সুড়ঙ্গ বা রেলপথ নির্মাণের প্রস্তাব করেছে। এখন, ট্রাম্প মূলত গাজাকে চিরতরে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন।

আরও জানুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X