ইরানে ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ব
ইরানে ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ব। একই সঙ্গে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন ও সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইরানের চির প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব কড়া জবাব দিয়েছে। তারা ইরানের সামরিক স্থাপনায় হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এতে বলা হয়, এটি ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানো এবং উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে- সৌদি আরব চলমান আঞ্চলিক উত্তেজনা ও যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব প্রত্যাখ্যান করে তার কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করেছে। এই সংঘাত এ অঞ্চলের দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইরান ও সৌদি আরব তাদের সম্পর্কের উন্নতি করেছে। একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। দুই দেশ ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে সম্মত হয়। সে অনুযায়ী তারা একে অপরের দেশে দূতাবাস খুলেছে। ইরাক, পাকিস্তান, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ইরাক বলেছে, দখলদার ইহুদিবাদীরা (ইসরায়েল) দায়মুক্তির সাথে মধ্যপ্রাচ্যে নগ্ন হামলা চালিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে এবং যুদ্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এখন তারা ইরানকে টার্গেট করেছে। ইরাকি সরকারের মুখপাত্র বাসিম আলওয়াদি এসব হামলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার নিন্দা করেছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরাক গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতির বারবার আহ্বানে অটল রয়েছে।
একই সাথে তারা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগকে সমর্থন করে। এদিকে, গাজার জঙ্গি সংগঠন হামাস ইরানের বিরুদ্ধে “জায়নবাদী আগ্রাসনের” নিন্দা করেছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা বিশ্বাস করি যে এই হামলা ইরানের সার্বভৌমত্বকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে।” আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তাকে টার্গেট করে উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে এসব মানুষের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য তারা সম্পূর্ণভাবে দায়ী।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালিয়ে ইসরায়েল তার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করেছে। এটি জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এই হামলা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথকে ক্ষুন্ন করেছে। এলাকায় ইতিমধ্যেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। তার ওপর এই হামলা আরও ভয়াবহ উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং সমগ্র অঞ্চলে এর বিস্তারের জন্য ইসরাইল সম্পূর্ণভাবে দায়ী। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে তার ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে তারা এ অঞ্চলে ইসরায়েলের বেপরোয়া ও অপরাধমূলক আচরণ বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইরানে হামলার নিন্দা জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। চলমান আঞ্চলিক উত্তেজনায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর এই ঘটনা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এমিরেটস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে তারা এই মুহূর্তে সংযমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ঝুঁকি এড়াতে এবং যুদ্ধের আরও বিস্তার এড়াতে প্রজ্ঞার আহ্বান জানানো হয়। অন্যদিকে ওমান এই হামলাকে ইরানের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলা উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ডি-এস্কেলেশন সংঘাত কমানোর প্রচেষ্টাকে দুর্বল করবে এবং আরও সহিংসতাকে উসকে দেবে। তারা আবারও আগ্রাসনকারীদের রুখতে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই সহিংসতা ও নিয়ম লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে। নিন্দা করেছে মালয়েশিয়াও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। এটি আরও বলেছে যে মালয়েশিয়া অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ এবং সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা এই অঞ্চলকে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন অন্য সুরে কথা বলেছে। মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র শন সাভেট বলেছেন, “আমরা ইরানকে ইসরায়েলে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানাই, যাতে এই সংঘাত আরও না ছড়িয়ে পড়ে।” ইসরায়েলের আক্রমণ একটি প্রতিরক্ষামূলক কৌশল।
অন্যদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টর্মার বলেছেন, ইসরায়েলের হামলার জবাব দেওয়া উচিত নয় ইরানের। তিনি সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানান। সামোয়া সফররত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি পরিষ্কার যে ইরানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করার অধিকার ইসরায়েলের আছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা এড়িয়ে চলা উচিত বলে আমাদের সমানভাবে পরিষ্কার হতে হবে। তাই সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।আর ইরানের এই হামলার জবাব দেওয়া উচিত হবেনা।