November 21, 2024
কান্না থামছেইনা ইরানের

কান্না থামছেইনা ইরানের

কান্না থামছেইনা ইরানেরর

কান্না থামছেইনা ইরানেরর

শোকে জর্জরিত ইরান। বিশ্বনন্দিত নেতা, ইরানের মানবিক প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব দরবারে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এক সাহসী নেতাকে দুর্ঘটনায় হারিয়ে ইরানের সর্বসাধারণ দিশাহারা হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। যেন তাদের এই অভিভাবককে হারিয়ে কান্না থামছেইনা।

তাদের ভবিষ্যৎ সর্বোচ্চ নেতা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আর নেই। তার মৃত্যুতে ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত। মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনার মধ্যে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান এবং ৯ জনের মৃত্যুর পর পুরো ইরান শোকে মুহ্যমান। তাদের বহনকারী মার্কিন তৈরি বেল-২১২ হেলিকপ্টারটি রোববার আজারবাইজান সীমান্তের কাছে একটি পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এ খবরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন তাদের  নিয়মিত সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে খবর ছড়াতে থাকে। নাগরিকদের রাষ্ট্রপতি এবং তার সফরসঙ্গীদের জন্য প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। টেলিভিশনে দেখা যায় ইরানিরা দলে দলে প্রেসিডেন্টের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছে।

কিন্তু ততক্ষণে রাষ্ট্রপতিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি পাহাড়ের ধারে আগুন ধরে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর পাওয়া যায় হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ। সেখানে প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ অন্যদের লাশ পাওয়া গেছে। কিন্তু তাও পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় বিশ্ব নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।

এই মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। কারণ, খারাপ আবহাওয়ায় প্রেসিডেন্টকে বহনকারী দুর্গম এলাকার ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়েছিল। প্রেসিডেন্ট রাইসি ব্যাপারটা বুঝলেন না! কী করছিল তার নিরাপত্তারক্ষীরা! কেন এমন পরিবেশে তাকে হেলিকপ্টারে যেতে দিল তারা! নাকি রাষ্ট্রপতিকে অনুপ্রাণিত করেছেন কেউ! এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তরই রয়ে গেছে সমীকরণ জটে ।

রাইসিকে বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু সে কি জানত রবিবারই তার জীবনের শেষ দিন। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে তিনি আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে যৌথভাবে আজারবাইজান সীমান্তের কাছে কিজ-কালাসি বাঁধের উদ্বোধন করেন। প্রেসিডেন্ট রাইসি তখনও হাসছিলেন। পরে বিকেলে তিনি সঙ্গীদের নিয়ে হেলিকপ্টারে ওঠেন। উদ্দেশ্য ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর তিব্রিজে ফিরে আসা। তাদের বহরে তিনটি হেলিকপ্টার ছিল। অন্য দুটি  নিরাপদে থাকলেও, রাষ্ট্রপতি রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি পথে পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। প্রথমে বলা হয়, এই হেলিকপ্টারটি ‘হার্ড ল্যান্ডিং’ করেছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পরিষ্কার হতে শুরু করে। উদ্ধারকারীরা ছুটে আসে। প্রতিবেশী দেশগুলো উদ্ধার অভিযানে সাহায্য করার প্রস্তাব দেয়। প্রতিকূল পরিবেশে রোববার দিনরাত তল্লাশি অব্যাহত থাকে। সোমবার সকালে হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। সেখান থেকে প্রেসিডেন্ট রাইসি ও অন্যদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এটি তিবারিজে পাঠানো হয়।

মঙ্গলবার তার দাফন শুরু হবে। তিব্রিজে অনুষ্ঠান শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজধানী তেহরানে। অপরদিকে, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি ৫০ দিনের মধ্যে একটি নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আয়োজন করবেন। সোমবার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক হয়। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট রাইসি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন নাকি এ ঘটনায় কোনো নাশকতা রয়েছে, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এর পেছনে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে ইসরাইল। তাদের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে কিনা তা তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। একই সঙ্গে তারা বলেছে, এই ঘটনার সঙ্গে ইসরায়েল জড়িত নয়।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে দুর্ঘটনাস্থলের ছবি দেখানো হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে হেলিকপ্টারটি পাহাড়ের ধারে একটি গাছে পড়ে আছে। এর সামনের অংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পিছনের অংশটি শুধু  দৃশ্যমান। ইরানের রেড ক্রিসেন্টের প্রধান কৌলিভান্দ বলেছেন, তারা দুর্ঘটনাস্থল খুঁজে পেয়েছেন। অবস্থা ভালো না। আশেপাশে কোনো যাত্রীর প্রাণের স্পন্দন নেই। উল্লেখ্য যে ৬৩ বছর বয়সী রাইসি ২০২১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর তিনি নৈতিকতা আইন কঠোর করেছিলেন। সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের উপর দমনপীড়ন। তিনি পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বিশ্বশক্তির সঙ্গে কঠিন আলোচনা করেন। পরমাণু কর্মসূচি এবং পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির হাতে রয়েছে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলা হয়, রাইসির মৃত্যুর কারণে ইরান সরকার কোনো বাধা ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাবে।

হামাসের শোক

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সংহতি প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগঠন হামাস। এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, “আমরা ইরানি ভাইদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং ইরানের সাথে আমাদের পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি।”

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইসরায়েলের সাথে তেহরানের বৈরী সম্পর্ক শুরু হয়। এরপর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বাড়াতে ইরান বেশ কয়েকটি বিশেষ গোষ্ঠী তৈরি করেছে। এই সংগঠনগুলোর মধ্যে হামাস অন্যতম। ইরানের সমর্থনে ফিলিস্তিনি এই সংগঠনটি বেশ কয়েকবার ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। বিশেষ করে গত সাত মাস ধরে তেল আবিবে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়ছেন সংগঠনটির যোদ্ধারা।

আরও পড়ুন

ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানে ওআইসির কাছে ইরানের ১০টি প্রস্তাব

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X