November 27, 2024
আরব লীগের সন্ত্রাসী তালিকায় ৬০ ইসরায়েলি সংস্থা: পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত

আরব লীগের সন্ত্রাসী তালিকায় ৬০ ইসরায়েলি সংস্থা: পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত

আরব লীগের সন্ত্রাসী তালিকায় ৬০ ইসরায়েলি সংস্থা: পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত

আরব লীগের সন্ত্রাসী তালিকায় ৬০ ইসরায়েলি সংস্থা: পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত

আরব লীগ, ৬০ টি ইসরায়েলি সংগঠন এবং চরমপন্থী সেটলার গ্রুপকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

অধিকৃত আল-কুদস শহরের পবিত্র আল-আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণে বারবার হামলা এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণে তাদের জড়িত থাকার জন্য আরব লীগ তাদের একটি “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে। সম্প্রতি এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার সমর্থনে’ জড়িত ২২ ইসরায়েলিদের একটি তালিকাও তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের ভিত্তি স্থাপনের জন্য বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে ।

এছাড়াও, আরব লীগ মানবাধিকার কাউন্সিলের ডাটাবেসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইসরায়েলি বসতিগুলিতে পরিচালিত ৯৭টি সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানকে বয়কট করতে সম্মত হয়েছে।

সংস্থাটি চায় সদস্য দেশগুলো দ্রুত এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করুক।

আঞ্চলিক সংস্থাটি ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর ফিলিস্তিনি শরণার্থী (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পদ্ধতিগত প্রচারণাও প্রত্যাখ্যান করেছে।

এ ছাড়া যেসব দেশ ত্রাণ সহায়তা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে, সেগুলোকে  পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।

UNRWA এর বেশ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবরের অপারেশন আল-আকসা স্ট্রোমে জড়িত থাকার অভিযোগে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, জাপান, অস্ট্রিয়া এবং রোমানিয়া সংস্থায় ত্রাণ সহায়তা স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।

আরব লীগ হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুদের চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষের সাথে সমন্বয় করার জন্য আরব মন্ত্রনালয় এবং সংস্থাগুলির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনি শিশু যারা ‘ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যা’র কারণে পঙ্গু বা এতিম হয়েছে।

কায়রো-ভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন রাফার ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ক্রমাগত অপরাধ, ১লাখেরও  বেশি বেসামরিক লোকের মৃত্যু ও আহত এবং গাজার চলমান মারাত্মক অবরোধ ও পদ্ধতিগত ধ্বংসের নিন্দা জানায়।

তারা মিশরের সীমান্তের কাছে দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় প্রায় ১৫ লক্ষ ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে এবং একে “আরবের জাতীয় নিরাপত্তার উপর আক্রমণ” বলে অভিহিত করেছে।

অবরুদ্ধ গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অক্টোবরের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজায় ২৮,৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

ইসরায়েলি আক্রমণ গাজার বিশাল অংশকে ধ্বংস করেছে, হাসপাতাল ধ্বংস করেছে এবং এর ২৪ লক্ষ  জনসংখ্যার অর্ধেককে বাস্তুচ্যুত করেছে।

ইসরায়েল গাজার ওপর ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ আরোপ করেছে, সেখানে বসবাসকারী মানুষের জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।

 

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব কেন, কবে থেকে?

প্রায় আট দশক ধরে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত চলছে। এই সংঘাত-সহিংসতা আবারও বাড়ছে। এই ইস্যু নিয়ে সংঘাত শুধু ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্ব সম্প্রদায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে সময়ের চাকা ঘুরিয়ে ফের আলোচনায় উঠে আসা এই বিরোধের শিকড় ইতিহাসের গভীরে।

বলা হয়ে থাকে ইসরায়েলের জন্ম মূলত বেলফোর ঘোষণা থেকে। ২শে নভেম্বর, ১৯১৭ তারিখে, তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব আর্থার বেলফোর ব্রিটিশ ইহুদি সম্প্রদায়ের সদস্য এবং আন্দোলনের নেতা লিওনেল ওয়াল্টার রথচাইল্ডকে সম্বোধন করে একটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিটি মাত্র ৬৭ শব্দ ছিল। চিঠিতে ‘ইহুদি জনসংখ্যার জন্য ফিলিস্তিনে একটি বসতি স্থাপন’ এবং এটি অর্জনের সুবিধার্থে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিটি ‘বেলফোর ঘোষণা’ নামে পরিচিত।

অর্থাৎ, একটি ইউরোপীয় শক্তি ইহুদিবাদী আন্দোলনকে এমন একটি দেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যেখানে ফিলিস্তিনিই ছিল  আরবদের সংখ্যা ৯০ শতাংশের বেশি। ১৯২৩ সালে ইস্যুতে একটি ব্রিটিশ ম্যান্ডেট তৈরি করা হয়েছিল যা ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ইহুদিরা ইউরোপে নাৎসিবাদ থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল এবং ব্রিটিশরা সেই সময়ে প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের অভিবাসনকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছিল।

এদিকে, ফিলিস্তিনিরা তাদের দেশে ইহুদি বসতি স্থাপনের বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। ১৯৩৯ সালে তারা আরব জাতীয় কমিটি গঠন করে। তারা ক্রমবর্ধমান ইহুদি বসতির বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অবরোধ ঘোষণা করে এবং ইহুদি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানায়।

যাইহোক, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা সম্ভাব্য সব উপায়ে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের প্রতি তাদের সমর্থন বাড়িয়েছিল। ব্রিটেনও ইহুদিদের আধাসামরিক বাহিনী গঠনে সহায়তা করেছিল। ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে তিন বছরে, আরব এবং ইহুদি সশস্ত্র যোদ্ধাদের মধ্যে লড়াইয়ে কমপক্ষে ৫,০০০ফিলিস্তিনি নিহত  হয়েছিল। ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ ফিলিস্তিনি আহত হয় এবং৫৫০০ বন্দী হয়েছিল।

১৯৪৭ সালের মধ্যে, ইহুদিরা ফিলিস্তিনের ছয় শতাংশ দখল করে। তাদের মোট জনসংখ্যা ফিলিস্তিনের ৩৩ শতাংশ। সেই সময়, ৬৭ শতাংশ আরব জনসংখ্যা দেশের ৯৪ শতাংশ জমির মালিক ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X