পিটিআই এর প্রায় সব প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে পাকিস্তানের ইতিহাসে অত্যন্ত শক্তিমান এবং প্রভাবশালী নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মনোনয়নপত্র আগেই বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। এবার ইসিপি তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রায় সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে।
পিটিআই মুখপাত্র রউফ হাসান বলেছেন, রবিবার (৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩) আমাদের দলের প্রার্থীদের প্রায় সব মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। পিটিআইয়ের ৯৫ শতাংশ প্রার্থী এই তালিকায় রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ইসিপি পিটিআইকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে কাজ করছে। তবে আমরা কোনো অবস্থাতেই রাজনীতি ছাড়ব না,আমরা তাদের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।
এর আগে, ইমরান খান লাহোরের দুটি জাতীয় পরিষদের টতার নিজ নির্বাচনী এলাকা এনএ-১১২ ও নিজ শহর মিয়ানওয়ালির এনএ-৮৯-এর জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ইমরান খান। দুটি আসনেই তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
মিয়ানওয়ালির সহকারী কমিশনার গোলাম মুর্তজা বলেন, তোশাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং অন্যান্য কারণে এনএ-৮৯ আসনের জন্য ইমরান খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তাই এ আসন থেকে তিনি আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। একই কারণে এনএ-১২২ (লাহোর-৬) আসন থেকেও তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, পিটিআই ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশি মুলতানে এনএ-১৫০, এনএ-১৫১ এবং পিপি-২১৮ আসনের জন্য এবং সিন্ধুর থারপারকারের এনএ-২১৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনিও এখন কারাগারে। তার মনোনয়নপত্রও বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তার ছেলে জেইন কোরেশি ও মেয়ে মেহের বানু কোরেশির মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়েছে।
পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ এলাহি, তার স্ত্রী কায়সারা বিবি এবং ছেলে মুনিস এলাহির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। চকওয়াল আসনের আরেক প্রার্থী কলামিস্ট আয়াজ আমীরের মনোনয়নপত্র বাদ পড়েছে।
ডন জানিয়েছে, মিয়ানওয়ালিতে পিটিআইয়ের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। পিটিআই মহিলা শাখার নেত্রী আমরা নিয়াজির সাথে এনএ-৯০ আসনের একজন প্রার্থীও মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। এনএ-১২৫ (লাহোর) আসনে জামশেদ ইকবাল চিমা, তার স্ত্রী মুসারত জামশেদ চিমা এবং জামিল আসগর ভাট্টির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়াও সিন্ধু, খাইবার পাখতুনখোয়া, বেলুচিস্তান অঞ্চলের অনেক পিটিআই নেতাও বাদ পড়েছেন। তবে পিটিআইয়ের কিছু কম প্রভাবশালী নেতার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। যেসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন পিটিআই মিত্র শেখ রশিদ ও তার ভাগ্নে রশিদ শফিকসহ শীর্ষ নেতারা।
বিতর্কিত তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় ইসলামাবাদের দায়রা ও বিচারক আদালত ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ বছরের নির্বাচনী নিষেধাজ্ঞার সাজা দিয়েছে। বর্তমানে তিনি আদিয়ালা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
ইমরান খানের আইনজীবীরা নিম্ন আদালতের রায় বাতিলের জন্য ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) আবেদন করেছেন। পিটিআই আশা করেছিল যে আইএইচসি এটি বাতিল না করলে অন্তত নিম্ন আদালতের রায় স্থগিত করবে। কিন্তু ২২শে ডিসেম্বর ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সেশন ও বিচারক আদালতের রায় বহাল রাখার রায় দেন।
পিটিআইয়ের আইনজীবীরা পরের দিন এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। একই দিনে ইমরান খান প্রতিনিধিদের মাধ্যমে লাহোর ও মিনাওয়ালির দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু গত শনিবার (৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩) সেই মনোনয়নপত্র বাতিল করে ইসিপি। পরদিন পিটিআইয়ের অধিকাংশ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
পিটিআই নেতা লতিফ খোসা বলেছেন, “আমাদের প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আইনি লড়াই করতে প্রস্তুত।” ধাক্কা লাগলেও দলের মধ্যে শক্তিশালী বিকল্প প্রার্থী রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
পিটিআই-এর মুখপাত্র রওফ হাসান বলেছেন, তাদের দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার এজেন্ডার অংশ হিসেবে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে, তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে কোনো অবস্থাতেই পিটিআই রাজনৈতিক অঙ্গন ছেড়ে নির্বাচন বর্জন করবে না।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আসকারি বলেছেন, একটি দলের বিরুদ্ধে এত বড় পদক্ষেপ পাকিস্তানে নজিরবিহীন। তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে এত বড় পরিসরে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল কোনো না কোনোভাবে ইমরান খানের দলকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের চূড়ান্ত তালিকা ২৩ জানুয়ারি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
পিটিআই মুখপাত্র হাসান বলেছেন, আমরা নির্বাচনী লড়াই থেকে পিছপা হব না। এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিটি আসনে আপিল করব। আমরা সব সাংবিধানিক, আইনি ও রাজনৈতিক বিকল্প ব্যবহার করব।
আরও পড়ুন
টুইটার জরিপে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান প্রায় ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন