November 21, 2024
তালেবানদের কঠোর প্রচেষ্টায় আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন ৯৫ শতাংশ কমেছে: জাতিসংঘ

তালেবানদের কঠোর প্রচেষ্টায় আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন ৯৫ শতাংশ কমেছে: জাতিসংঘ

তালেবানদের কঠোর প্রচেষ্টায় আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন ৯৫ শতাংশ কমেছে: জাতিসংঘ

তালেবানদের কঠোর প্রচেষ্টায় আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন ৯৫ শতাংশ কমেছে: জাতিসংঘ

আফিমঃ

বিশেষ করে মাদক তৈরিতে ব্যবহৃত আফিম বা পপি (Opium / poppy) । আফিমে রয়েছে ১.৫ ভাগ মরফিন, ০.৫ ভাগ নারকোটিন, ০.১ ভাগ কোডেইন, ০.১ ভাগ পেপাভারেন, ০.৫ ভাগ থিবেইন। আফিম একটি বহুবর্ষজীবী ভেষজ। ফুল সাদা, গোলাপী, লাল, বেগুনি বা বৈচিত্রময়। ফুল৩ থেকে ৪সেমি হয় । ফলের আকৃতি  ক্যাপসিউল, গোল ,   গোলকাকার হয়  । দোআঁশ মাটি পোস্ত চাষের জন্য উপযোগী।

মায়ানমার থাইল্যান্ড লাউস সাথে আফগানিস্তান এ অঞ্চলগুলো আফিম  উৎপাদনের স্বর্ণাঞ্চল বলা হয় । কিন্তু এখন আফগানিস্তান ৯৫ % আফিম  উৎপাদনই   কমিয়ে ফেলেছে ।

আফগানিস্তানে তালেবান শাসনে দিনে দিনে আফিম নির্মূল করা হচ্ছে। অন্যদিকে, মিয়ানমার বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফিম উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এ বছর মিয়ানমারে আফিমের উৎপাদন ৩৬ শতাংশ বেড়ে ১৮০০ টন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সংখ্যা আফগানিস্তানে উৎপাদিত আফিমের পরিমাণ (৩৩০ টন) থেকে অনেক বেশি।

তালেবান ক্ষমতায় আসার এবং মাদককে অবৈধ ঘোষণা করার পর থেকে আফগানিস্তানের পপি চাষ (যা থেকে আফিম তৈরি হয়) ৯৫শতাংশ কমেছে।

এদিকে মিয়ানমারে সেই চাষ বেশ খানিকটা বেড়েছে। সেখানে গৃহযুদ্ধের আবহাওয়ায় আফিম চাষ একটি লাভজনক আয়ের উৎস হয়ে উঠেছিল।

ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি) বা ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম-এর আঞ্চলিক প্রতিনিধি জেরেমি ডগলাস বলেছেন, ‘ মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক বাধার একটি সিরিজ হয়েছে।  আর এটাই জীবিকার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের আফিম চাষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু আফগানিস্তানে কমেছে ৯৫%।

আফগানিস্তান ছিল বিশ্বে আফিম উৎপাদনে শীর্ষ দেশ। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির বর্তমান সরকার নিষিদ্ধ করার পর থেকে দেশটিতে আফিমের ফলন প্রায় ৯৫ শতাংশ কমে গেছে।

ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি) এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সারা দেশে আফিম চাষ ২৩৩,০০০ হেক্টর থেকে কমে ১০,৮০০ হেক্টরেরও কম হয়েছে। আফিম উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কমে ৩৩৩ টন হয়েছে।

এটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশগুলিতে কৃষকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, যেখানে বেশিরভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল এবং পপি (আফিম/পোস্ত) রপ্তানির মূল্য কখনও কখনও সমস্ত আনুষ্ঠানিক রপ্তানির মূল্যকে ছাড়িয়ে যায়, সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তালেবানের নীতি পরিবর্তন দেশের অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।

ইউএনওডিসির নির্বাহী পরিচালক ঘাদা ওয়ালি একটি বিবৃতিতে বলেছেন যে আফগানিস্তানে আফগানিস্তানের কৃষকদের আফিম ছাড়াতে এবং টেকসই জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম করার জন্য আগামী দিনে  বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন।

তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা ২০২২ সালের এপ্রিলে মাদক চাষ নিষিদ্ধ করেছিলেন। এর আগে, ২০০০ সালে, যখন তালেবানরা ক্ষমতায় ছিল, তারা আফিম চাষ নিষিদ্ধ করেছিল। আফিম চাষকে ‘অ-ইসলামিক’ আখ্যা দিয়ে তৎকালীন তালেবান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর বলেছিলেন যে কেউ পপি বীজ লাগালে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

মায়ানমার, থাইল্যান্ড এবং লাওসের সীমান্ত যে অঞ্চলে মিলিত হয়েছে তাকে বলা হয় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল।

ঐতিহাসিকভাবে, তবে, অঞ্চলটি আফিম এবং হেরোইন উৎপাদনের একটি প্রধান উৎস ছিল। বিশ্বজুড়ে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ হেরোইনের উৎপত্তি মিয়ানমার ও আফগানিস্তান থেকে। তবে সম্প্রতি আফিম উৎপাদনে আফগানিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে মিয়ানমার।

আফগানিস্তান থেকে আফিম রপ্তানি ৯৫ শতাংশের বেশি কমেছে। দেশ থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দুই বছরের মধ্যে মাদক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে চমক সৃষ্টি করেছে তালেবানরা। ক্ষমতা গ্রহণের পর তারা আফিম চাষ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এখন জাতিসংঘের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (ইউএনওডিসি) বলেছে যে তালেবানদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশে যেখানে ২৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে আফিম চাষ হয়েছিল, ২০২৩ সালে তা কমে ১০ হাজার ৮০০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। এ বছর দেশ থেকে মাত্র ৩৩৩ টন আফিম রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের মাত্র ৫ শতাংশ। অধিকাংশ আফগান কৃষক এখন আফিমের পরিবর্তে গম উৎপাদন করছে।

এপ্রিল ২০২২ সালে, তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা, মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা, আফিম চাষ নিষিদ্ধ করেছিলেন। এরপর থেকে তালেবান সদস্যরা আফিম ক্ষেত ধ্বংস করতে শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০  বছর ধরে ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তালেবানরা যেভাবে সাফল্য দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তেমন কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি। দেশটি দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে।

কিন্তু সেই সময়কালে বিশ্বের আফিমের ৮০ শতাংশ উৎপাদিত হতো আফগানিস্তান থেকে। ইউরোপের আফিমের চাহিদার ৯৫ শতাংশ আসে আফগানিস্তান থেকে। যাইহোক, আফগানিস্তান থেকে বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহারের সাথে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হয়।

ইউএনওডিসির মতে, মিয়ানমার এখন বিশ্বের প্রথম আফিম উৎপাদনকারী দেশ। দেশে আফিম চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিসংঘের সংস্থার মতে, অদূর ভবিষ্যতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে আফিম চাষ বাড়তে চলেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০ বছর ধরে ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে।  তবে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো বাহিনীই  ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে আফিম চাষ করে মাদকের বাজারকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।

আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে একসময় দেশটির অর্ধেকেরও বেশি আফিম চাষ হতো। তবে তালেবানদের  নিষেধাজ্ঞার পর থেকে আফিম চাষ একেবারেই  কমে গেছে। এখন গমকেও বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পপি চাষ কমে যাওয়ায় একই অঞ্চলে গম চাষ বেড়েছে, কিন্তু লাভ কম হওয়ায় দরিদ্র কৃষকরা সরকার থেকে কি সহযোগিতা পায় তাই দেখার বিষয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X