March 11, 2025
দ্রুততম সময়ের মধ্যে হতে যাচ্ছে জন-আকাঙ্ক্ষার ‘জুলাই সনদ’

দ্রুততম সময়ের মধ্যে হতে যাচ্ছে জন-আকাঙ্ক্ষার ‘জুলাই সনদ’

দ্রুততম সময়ের মধ্যে হতে যাচ্ছে ‘জুলাই সনদ’

দ্রুততম সময়ের মধ্যে হতে যাচ্ছে জন-আকাঙ্ক্ষার ‘জুলাই সনদ

ছাত্র-জনতার “জুলাই ঘোষণা পত্র” প্রণয়নের দাবির মুখে সরকারি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে “জুলাই সনদ” অর্থাৎ ‘জাতীয় সনদ’। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দ্রুত আলোচনা করতে এবং ‘জাতীয় সনদ’  বা ‘জুলাই সনদ’ তৈরির জন্য অল্প সময়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে চায়। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রিয়াজ এই ঘোষণা করেন।

আলী রিয়াজ বলেন, ১৩ মার্চের মধ্যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের উপর মতামত চেয়ে ৩৪টি দল ও জোটকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।, “এই প্রক্রিয়ার পরের ধাপ নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। আমরা চাই- দ্রুত আলোচনা করতে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে।“

শিক্ষার্থীদের দ্বারা গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) আগামী নির্বাচনের আগে ‘জাতীয় সনদ’, যা ‘জুলাই সনদ’ নামেও বহুল আলোচিত সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি আল্টিমেটাম দিয়েছে। শুক্রবার দলের বাংলা মোটর অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই আল্টিমেটাম দেন।

আলী রিয়াজ সোমবার এলডি হলে এক ব্রিফিংয়ে বলেন,”দলগুলোর কাছ থেকে তাদের মতামত প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করবো। এজন্য এখনও পর্যন্ত আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ করিনি। যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সেই সময় থেকেই আলোচনা শুরু হবে।“

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। নতুন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।

এর মধ্যে, সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্য গত বছরের অক্টোবরে গঠিত ছয়টি কমিশন ৮ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ এবং প্রতিবেদন জমা দেয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সুপারিশগুলি বিবেচনা করার জন্য এবং জাতীয় ঐকমত্য তৈরির জন্য রাজনৈতিক দল এবং শক্তির সাথে আলোচনা করার জন্য একটি ঐক্যমত্য কমিশন গঠন করে। ঐক্যমত্য কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান হলেন সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজ। বাকি কমিশনের প্রধানরাও ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য।

ছয় মাস মেয়াদী এই কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে, ভাইস-চেয়ারম্যান আলী রিয়াজ বলেন,”কমিশনের যাত্রার দিন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন সভাপতি মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সৌজন্য সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ৩৪টি দলের মোট ১০৪ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।“

চেয়ারম্যান বলেন, “সভায় অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ৩৪টি দলের কাছে ছয়টি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের অনুলিপি ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পৌঁছে দেয়া হয়। এর আগে সব দলকে প্রতিবেদনের সফট কপি পাঠানো হয়। পরবর্তীতে ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা তিন দফা বৈঠক করে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ চিহ্নিত করেন।“

তিনি আরও বলেন, “পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশসমূহকে ছক আকারে বিন্যস্ত করা হয়। এসব ছকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোকে যুক্ত করা হয়নি। পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে যে, তাদের সুপারিশসমূহ প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব।“

অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, “মোট ১৬৬টি সুপারিশ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার-সংক্রান্ত সুপারিশ ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ-সংক্রান্ত সুপারিশ ২৩টি, জনপ্রশাসন-সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন-সংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ রয়েছে। ওই সুপারিশমালা ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে ৬ মার্চ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।“

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো- সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কিনা। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো- ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। এ তিনটি বিকল্পের যে কোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।‘

জনাব আলী রীয়াজ বলেন, ‘দ্বিতীয়টি হলো প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায়। এই ক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্প আছে। সেগুলো হলো- ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোকে ‘মন্তব্য’ দেওয়ার জন্য জায়গা রাখা হয়েছে।‘

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা আশা করছি যে, আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলো তাদের মতামত আমাদের জানাবেন। ইতোমধ্যে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা ব্যাখ্যার দরকার হয়, তবে কমিশন সেসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া এবং এসব বিষয়ে আলোচনা করতে সবসময় প্রস্তুত আছে।“

তিনি  জানান, “গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশমালার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নাগরিকদের মতামত জানতে চাওয়া হবে। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মতামত চাওয়া হবে।“

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অধ্যাদেশের মাধ্যমেও সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব, অতীতে বাংলাদেশে এটা হয়েছে।“

সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান ব্যতীত ঐক্যমত্য কমিশনের বাকি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়িদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X