ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি, খুলনা শেখ বাড়ি, আর সুধা সদনে জনতার বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও আগুন: অবৈধ আস্ফালনের পরিণতি
পতিত স্বৈরাচারের অবৈধ আস্ফালনের পরিণতি ধানমন্ডির ৩২, খুলনা শেখের বাড়ি, ধানমন্ডি পাঁচ নাম্বারের সুধা সদন, সকল কিছুর পতন হতে চলছে।
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও জনতা রাজধানীর ধানমন্ডি-৩২-এ অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের গেট ভেঙে ভাঙচুর ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ব্যাপক ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি খুলনায় শেখের বাড়ি ও সুধাসদনেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিখ্যাত জনতা। অনেকে লাঠি ও কুড়াল নিয়ে ভাঙচুরে যোগ দিতে যান। ৩২ নম্বর এলাকায় বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী মিছিল বের করে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত শিক্ষার্থী ধানমন্ডি ৩২-এ জড়ো হন। পরে তারা ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িতে হামলা চালায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যারিকেড ভেঙে ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করে ভাঙচুর শুরু করে।
এর আগে, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী খুনি শেখ হাসিনার ভাষণকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে ধানমন্ডি ৩২-এর দিকে ‘বুলডোজার মিছিল’ করার ডাক দেওয়া হয়েছিল। এর সাথে সাথে ‘ধানমন্ডি ৩২ মার্চ’ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
বুধবার রাতে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে যে, শেখ হাসিনার ভাষণ সম্প্রচার করা হচ্ছে। তবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিষয়টি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে, যার নেতৃত্বে গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এই বিষয়ে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরীফ ওসমান হাদী বিকেল থেকে ফেসবুকে বেশ কয়েকটি পোস্ট করে সতর্ক করে দেন যে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি ভেঙে ফেলা হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।”
পরে আরেক ফেসবুকে পোস্টে তিনি লেখেন, “আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।”
এর আগে বুধবার দুপুরে, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াস হোসেন এবং পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমন্ডি ৩২-এর দিকে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন।
সেদিন রাত ৯টায় মিছিলটি ধানমন্ডি ৩২-এ যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পরে কর্মসূচি পরিবর্তন করে রাত ৮টা করা হয়।
রাত ৮টার আগেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ধানমন্ডি ৩২-এর সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। এক পর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ভাঙচুর করা হয়। রাত ৮:৪০ মিনিটে ভবনের তৃতীয় তলার একটি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
কর্মসূচীতে যোগ দিতে আসা একজন বলেন, “আমরা আজ বুলডোজার দিয়ে স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে ফেলব।”
ঘটনাস্থল থেকে ‘জুলাই রেভোলিউশনারি অ্যলায়েন্স’-এর মুখপাত্র ফ্যান্টাসির মাহমুদ বলেন, “আমরা সন্ধ্যা থেকে ধানমন্ডি-৩২-এ আছি। প্রতি মিনিটে শত শত মানুষ আসছে। আমরা বুলডোজার দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে দিতে চাই।
জুলাইয়ের বিদ্রোহে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, ৫ আগস্ট ধানমন্ডি-৩২-এ বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়িটিতে আক্রমণ, ভাঙচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। তারপর থেকে বাড়িটি মূলত পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
খুলনার ‘শেখ বাড়ি’তেও বুলডোজার কর্মসূচির প্রভাব:
সেই সময় শিক্ষার্থী এবং জনতা খুলনার ‘শেখ বারীর আস্তানা ধ্বংস করো, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘স্বৈরাচারীর আস্তানা পুড়িয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’ স্লোগান দিতে থাকে।
খুলনায় ‘শেখ বাড়ি’ বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে, শিক্ষার্থী এবং জনতা শহরের ২৩ শেরে-বাংলা রোডে অবস্থিত শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইদের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় এবং ভাঙচুর শুরু করে। পরে, দুটি বুলডোজার ব্যবহার করে বাড়ির প্রধান ফটক এবং সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা এবং জনতা ‘শেখ বাড়ির আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘স্বৈরাচারের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’।
সেই সময় বাড়ির সামনে অনেক লোক জড়ো হয়। এর আগে, ৪ ও ৫ আগস্ট, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এবং জনতা পর্যায়ক্রমে শেখ বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
ধানমন্ডির সুধা সদনে আগুন:
ধানমন্ডি এলাকার ৫ নম্বর রোডে পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন ধরিয়ে দেয় ছাত্র-জনতা।
বুধবার রাত ১০:৪৫ টার দিকে, বিক্ষুব্ধ জনতা এই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৫ আগস্ট থেকে বাড়িটি খালি ছিল। গণভবনে দখলের আগে স্বৈরাচার হাসিনা এই বাড়িতে থাকত।
