শান্ত হচ্ছে দেশ, বাড়ছে গুজব, থাকতে হবে সতর্ক
রক্তাক্ত একটি বিপ্লবের পরে কিছু কিছু জায়গায় হেরে যাওয়া চক্রিরা দূরভিসন্ধি মূলকভাবে বিভিন্ন হামলা চালায়। বিভিন্ন স্থাপনা, সংখ্যালঘু এবং বাহিনীর উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে বিপ্লবকে কালিমা লেপন করতে চায়। তবে এটা পৃথিবীর সকল বিপ্লবের ইতিহাসের এইরকম ধারা রয়েছে। তবে সেটা দেখে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নয়, শুধু প্রয়োজন সতর্কতা। এবং এগুলোই একসময় ভালোভাবে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার উপলক্ষণ মাত্র। সেটিই এখন হচ্ছে আর সাথে আছেতো গুজবের বাহার। গুজবকে খেয়াল করতে হবে তবে সেটাকে অবশ্যই আমলে নিয়ে মাথা গরম করা যাবে না। এটাই বিপ্লবের সরল কথা।
রক্তাক্ত অধ্যায়ের পর শান্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাজ শুরু করেছে উপদেষ্টারা অফিস করছেন। জনগণের নিরাপত্তায় সশস্ত্র বাহিনী কাজ করছে। থানাকে সক্রিয় করা হচ্ছে। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা কাজে ফিরেছেন।
তবে দেশে অচলাবস্থা কাটেনি। গুজব যন্ত্র সক্রিয়। তারা মুহূর্তের মধ্যে গুজব ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সূত্র বলছে, এক ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টার অংশ হিসেবে এটি করা হচ্ছে।
প্রশাসন এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। পুলিশ বাহিনী নিয়ে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তারা যেন পুরোপুরি সক্রিয় না হয়। এর বাইরে ‘সংখ্যালঘু’ ইস্যুকে সামনে আনার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। এ লক্ষ্যে অভিযানও চালানো হচ্ছে। গত সোমবার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। তাদের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। যেসব আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে তাদের কয়েকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের। ঢাকার একজন বিশ্লেষক বলেন, আপাতদৃষ্টিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বলে কারো বাড়িতে হামলা হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। মূলত আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ার কারণে তাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। তবে এসব হামলার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকার মাদ্রাসা ছাত্র, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা মন্দির পাহারা দিচ্ছেন। ভারতীয় কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন। তিনি বলেন, ভারতীয় মিডিয়া হামলার খবর দিচ্ছে। কিন্তু মানুষের তৎপরতায় তা প্রমাণ হচ্ছেনা।
১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরদিন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ১৫ ই জুলাই থেকে ৫ ই আগস্ট। হঠাৎ করেই বদলে গেছে বাংলাদেশের দৃশ্যপট। অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এই কয়েক দিনে কত মানুষ নিহত হয়েছে তার সঠিক কোনো হিসাব নেই। শতাধিক মানুষ নিহত হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর সহিংসতা শুরু হয়। জনতা গণভবন দখল করে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। হামলার ঘটনা ঘটে থানায়।
অনেক পুলিশ সদস্য তাদের পদ থেকে প্রত্যাহার করে নেন। একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আধুনিক বিশ্বের কোথাও এমন ঘটনা ঘটেনি। মূলত এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়। তবে সেনাবাহিনী সক্রিয় রয়েছে। শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয়। শিক্ষার্থীরা সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয়ভাবে জড়িত। রাজনৈতিক দলগুলোও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলো। মন্দির পরিদর্শন করেছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোর বার্তাও দিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সমর্থিত লোকজন বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা প্রশাসন ও পুলিশকে পুরোপুরি সক্রিয় হতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি মেট্রো রেলেও অচলাবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া নানা গুজব ছড়িয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। শুক্রবার সারাদিন গুজব ছিল যে একজন ইসলাম প্রচারক নিখোঁজ। কিন্তু গতকাল তিনি লাইভে এসে জানান তিনি ভালো আছেন। চট্টগ্রামেও একটি অপহরণের মিথ্যা খবর ছড়ানো হয়েছে। এক ধরনের ডাকাতির আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
কারণ বিগত শাসনামলের সুবিধাভোগীদের অনেকেই এখনো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন বাড়ছে।