November 21, 2024
উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীদের উপর ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলা

উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীদের উপর ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলা

উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীদের উপর ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলা

উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীদের উপর ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলা

রোববার রাতের উত্তেজনার পর গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। বারবার হামলা, ধাওয়া, আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এবং ক্ষণস্থায়ী ককটেল বিস্ফোরণে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী আহত হয়। বহিরাগতদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা থেকে রেহাই পায়নি নারী শিক্ষার্থীরাও। দিনভর সংঘর্ষ বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সন্ধ্যায় উত্তপ্ত ক্যাম্পাসে সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশকে ডাকা হয়। এ সময় প্রশাসনও ব্যবস্থা নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা হয়েছে।

হামলা ও সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মাজহারুল কবির শায়ান, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএলএ নেতাদের সামনের সারিতে দেখা যায়। এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ বিকাল ৩টায় সারাদেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাজু ভাস্করে সাধারণ ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিল চলার সময় দুপুর আড়াইটার দিকে খবর আসে বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রদের আটক করা হয়েছে।

এরপর টিএসসি থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। হলের ভেতরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করে। এ সময় প্রতিবেশী শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, পল্লী কবি জসীমউদ্দিন হল ও মাস্টার দা’ সূর্যসেন হল থেকেও শিক্ষার্থীরা অবরোধ করে। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে বারবার পিছু হটছিল ছাত্রলীগ। একপর্যায়ে মুজিব হলের পকেট গেট দিয়ে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করে। এসময় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের  সামনে থেকে নেতাকর্মীরা হামলা চালায়।

বেশ কিছুক্ষণ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগের  মহানগরের নেতাকর্মীসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা মল চত্বর থেকে পিছু হটে ভিসি চত্বরের দিকে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি, রড, হকি স্টিক, পাইপ, স্টাম্প নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ভিসি চত্বরে ছাত্রলীগের হামলায় রেহাই পায়নি নারী শিক্ষার্থীরাও। তারা ছাত্রদের ধরে মারধর করে। যারা বিআরটিসির গাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরও মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত ও ফুলার রোড দিয়ে পিছু হটে। তখন হেলমেট পরা কয়েকজনকে বেশ ক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও ছাত্রলীগ নিরাপদ  অবস্থান নেন। নেতাকর্মীরা ভিসি চত্বর দখল নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন হলে ঢুকে ভাংচুর ও হামলা চালায়। এতে ছাত্রলীগের অন্তত ২৫ নেতাকর্মী আহত হন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, তারা রাজাকার স্লোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করেছে।

আমরা সাধারণ ছাত্রদের দিয়ে তাদের প্রতিহত করেছি। আন্দোলনকারীরা সরে গেলে টিএসসি, ভিসি চত্বরসহ পুরো ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। তারা স্লোগানে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। মহানগর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবারও টিএসসিতে আসতে থাকেন। এরপর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবারো ভিসি চত্বরের দিকে মিছিল করে।

এ সময় বেগম রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা থালাবাসন বাজিয়ে ছাত্রলীগকে ভুয়া, টোকাই ও গো-ব্যাক স্লোগান দেন। এর আগে দুপুর ১২টার থেকে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিতে থাকেন। এসময় তারা ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার, কে বলছে কে বলেছে সরকার সরকার’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি নই, আমি নই, রাজাকার রাজাকার’, ‘ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও আশেপাশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

দুপুরের তপ্ত রোদে পুড়ে দাবি আদায়ে স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে কোটা সংস্কার আইন পাসের জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। অপরদিকে বিকাল ৩টায় একই স্থানে ছাত্রলীগের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ।

রাজু ভাস্কর্য বিক্ষোভে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনি ২ শতাংশ নিয়ে পড়ে আছেন। ৯৮ শতাংশকে বানিয়ে দিলেন রাজাকার। একটা দেশের ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী রাজাকার হতে পারে বা। আপনার বক্তব্য কল্পনাপ্রসূত। দ্রুত বিবৃতি প্রত্যাহার করুন।

আরও জানতে

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X