ঢাকা মেডিকেলও ছাত্রলীগের জঘন্য হামলা, সারা বাংলাদেশে বিক্ষোভের ডাক প্রয়োজনে অবরোধ
ছাত্রলীগ ও তাদের বহিরাগত সন্ত্রাসী সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বদানকারী লিডার হাসান মোল্লার নেতৃত্বে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশী অস্ত্র সহকারে সকল কিছু ব্যবহার করেছে যৌক্তিক দাবির পক্ষে আন্দোলনকারীদের উপর ।এমনকি তারা শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে নয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহেই নয় । আহত হয়ে শেষ আশ্রযয়ে মেডিকেলে যাওয়ার পরও তাদের উপর নৃশংস হামলা চালায় শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের সন্তান বলায় এ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। এ সময় ছাত্রলীগ মধুর ক্যান্টিনে জড়ো হলে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে বহিরাগত ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দেয় পুলিশ। রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরলে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ে মহড়া দেয় ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ঢামেকে ২৯৮ শিক্ষার্থী আহত, ১২ ভর্তিচ্ছু আহত ২৯৩ জন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আহতদের উদ্ধার করে ঢামেখার জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়।
সূত্র জানায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মারামারি রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। শিক্ষার্থীদের চিৎকার দেখে অনেক রোগী কান্নাকাটি করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। হাসপাতালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে চিকিৎসা বিভাগে থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ:
এদিকে রাজধানীর নিউমার্কেট, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেলে অবরোধে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ট্রাফিক পুলিশের গুলশান বিভাগ জানায়, দুপুর ২টার দিকে আফতাব নগরের সামনের সড়ক অবরোধ করে ব্র্যাক ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী নিউমার্কেট সড়কে নেমে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। সাড়ে ৫টার দিকে নিউ মার্কেট অবরোধকারীরা রাস্তা ছেড়ে চলে যায়। এ ছাড়া কুড়িল এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ’-এ বলা হয়, ব্র্যাক, নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট ও ইউআইইউ-এর শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে নিউ মার্কেট, আফতাব নগর ও যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে রাস্তায় নেমেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সমর্থনে।
আজ সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোটা বিরোধী বিক্ষোভ
পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে সারাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলাম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দাবি মানা না হলে আন্দোলন থেকে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। আমরা মনে করি এই হামলা পরিকল্পিত। আমরা গত কয়েকদিন ধরে বলে আসছি, সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ সহিংসভাবে এই আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা করছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই এই আন্দোলনকে দমন করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর অবমাননাকর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে আমাদের কর্মসূচি ছিল। আমরা এখনও বলতে চাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি।
ঢাবি শিক্ষার্থী নাহিদ আরও বলেন, আমরা সারা দেশের মানুষের কাছে আবেদন করব, আপনারা নেমে আসুন। ছাত্ররা নেমে আসেন, সাধারণ মানুষ নেমে আসেন । শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিচার করুন। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাবো আমাদের পদযাত্রাকে একটি বিশাল জনসমাবেশে পরিণত করার জন্য। বৃহত্তর গণআন্দোলনের দিকে এগোতে হবে। এটা আর ছাত্রদের আন্দোলন নয়, যখন এই আন্দোলনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উস্কানি দিয়ে আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে এই আন্দোলনে নামতে হবে। এরপর সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করব।
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, আমাদের বৈধ পরিচয়পত্র থাকলেও পুলিশ শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করতে দেয়নি। অন্যদিকে বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দিনভর ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলেন। তিনি বলেন, সারাদেশে আমাদের ওপর নৃশংসভাবে হামলা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টর আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।