বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের টাকায় শিক্ষার্থীদের আপ্যায়নকে নিজেদের বলে চালালো ইসরাইলি কোকাকোলার পক্ষ নেওয়া ছাত্রলীগ
ঈদের দিন ঢাকায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিনোদনের পুরো খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করলেও নিজেদের নামে বিনোদনের প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশবিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের মনোরঞ্জনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফারাজি।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের মনোরঞ্জনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফারাজি।
সোমবার (১৭ জুন) ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রীদের আপ্যায়ন করা হয়। এ সময় সহকারী প্রক্টর নিউটন হাওলাদার, মনির হোসেন, কিশোর রায়, মাসুদ রানাসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। খাবার বিতরণে তাদের সঙ্গে ছিলেন জবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উদ্যোগে ঈদের দিন শিক্ষার্থীদের আপ্যায়ন করা হয়েছে বলে ব্যানার পোস্ট দিচ্ছেন। কোন কোন পোস্টে জবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য আপ্যায়নের কোনো ব্যবস্থা করেনি মন্তব্য করে ছাত্রলীগ থেকে সব আয়োজন করা হয়েছে বলা হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. দেড় লাখ টাকার বেশি ব্যয়ে পুরো ব্যয় বহন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে খাদ্য বিতরণে সহযোগিতা করতে বলা হয়। খাবার বিতরণের সময় আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি উপস্থিত ছিল। ক্যাম্পাস পরিদর্শনকারী সকল শিক্ষার্থীকে আপ্যায়ন করা হয়। ছাত্রী হলেও আপ্যায়ন করা হয়েছে। কেউ বিভ্রান্তি ছড়ালে তা বিব্রতকর।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের অন্য শিক্ষার্থীদের ভুল তথ্য দিচ্ছে। তারা বলতে চাইছেন, প্রশাসন আমাদের বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা করেনি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।আমাদের আয়োজনই শুধুমাত্র ছাত্রলীগকে দিয়ে করানো হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা বিবেচনা করে, আমি ব্যক্তিগতভাবে ছাত্রলীগকে দিয়েছিলাম এবং এমনকি আমি উপস্থিতি থেকে রান্নার ব্যবস্থাও করেছিলাম। তারপরও কেন এমন মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বুঝতে পারছি না।
জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে নয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আর্থিক সহায়তায় শিক্ষার্থীদের বিনোদন দিয়েছি। ঢাকায় অবস্থানরত শিক্ষার্থী, হলের ছাত্রছাত্রী, হলের স্টাফ এবং তাদের সন্তানসহ মোট ৩৫০ জনের আপ্যায়ন করা হয়েছে।
দেশব্যাপী বর্জনের মধ্যেই কোকাকোলার পাশে রয়েছে জবি ছাত্রলীগ
দেশব্যাপী বয়কটের মধ্যে ইসরায়েলি পণ্য কোকাকোলার পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগ। ঈদে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিনোদন দিতে ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক এসএম আখতার হোসেন তার সঙ্গে একটি ছবি তোলেন এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এটি নানাভাবে সমালোচনা হচ্ছে।
জবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফেসবুক পোস্টে কোকো কোলার সঙ্গে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ছবি দেখা যায়। আবদুল বারেকের ফেসবুক পোস্টে দেখা যায়, জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজীর গ্রুপের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজ কক্ষে বসে আছেন। সামনে কোকাকোলার প্যাকেট, স্প্রাইটের প্যাকেট । রান্নার প্রস্তুতির ছবিও আছে। সেভাবেই পোস্টটি দেয়া হয়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিনোদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকায় অধ্যয়নরতদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মীকে এমন পোস্ট দিতে দেখা গেছে।
শাখা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাধারণ শিক্ষার্থী জানান, কিছুদিন আগে তারা ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছিল এবং আজ তারা বিনোদনের নামে ইসরায়েলি পণ্য কোকা-কোলা ও স্প্রাইটের ব্র্যান্ডিং করছে। এটা সম্পূর্ণ ভন্ডামী।
উল্লেখ্য, শুধু এই ঘটনা নয়, এই ঘটনা তো দেশের জন্য এবং ইনভারসিটি আর ছাত্রলীগের জন্য কোন ব্যাপারই না । কিন্তু ছাত্রলীগ কেন সব সময় এহেন আচরণে লিপ্ত সেটা নিয়ে একটুখানি আলোচনায় যাচ্ছি। আমার দৃষ্টিতে তাহল,
‘রাজনৈতিক পরিচয়’ ব্যবহারের বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা, বিশেষ করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, এই রাজনৈতিক পরিচয় তাদের আইন, বিধি-বিধান ইত্যাদির ঊর্ধ্বে নিয়ে যায়। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাত্রলীগের সঙ্গে সাধারণ আচরণই প্রমাণ করে এই ধারণা সঠিক।
ছাত্রলীগের আচরণ এত নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে? এর পেছনে আদর্শের অভাব, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, মূল সংগঠনের অবক্ষয়, ব্যাপক দুর্নীতি, কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা, ক্ষমতার অপব্যবহার বা অন্যের ওপর নির্যাতনসহ আরও অনেক কারণ রয়েছে।
কিন্তু আসল সমস্যা হল ‘সেন্স অফ এনটাইটেলমেন্ট’, যা ক্ষমতাসীন দলের অধিকাংশ নেতাকে, বিশেষ করে ছাত্রলীগের নেতাদের গ্রাস করেছে। তারা মনে করেন যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা কার্যত তাদের হাতে এবং তারা ভর্তি, হলের আসন বরাদ্দ, নিয়োগ, পদোন্নতি, নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে সবকিছুতে তাদের ইচ্ছামতো চলবে । যে কাজই হোক না কেন, যদি আর্থিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা ক্ষমতার ভিত্তি মজবুত হয়, তবে তা তাদের মাধ্যমেই হতে হবে। নানাভাবে তারা বিকল্প প্রশাসন তৈরি করেছে। ছাত্রলীগের চাপ ও ক্ষমতার কাছে প্রায়ই অসহায় হয়ে পড়েন উপাচার্যরা। সাধারণ আবাসিক শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সবচেয়ে অন্যায্য বিষয় হলো ছাত্রলীগের সব ধরনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাধ্য করা। কারো ক্লাস মিস হলে সেটাও তখন ঠিক আছে। এখানে ভিন্নমতের কোনো অবকাশই নেই।