যে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান মুখপাত্র, ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ ফ্যাক্ট
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বৃহস্পতিবার নিয়মিত সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশে গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারণা চলছে। এতে অনেকেই অংশ নিচ্ছেন। কোটি কোটি মানুষ এটাকে সমর্থন জানিয়েছে । বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এ সংকটে জড়িত।
অন্যদিকে, ভারত বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক ‘দৃঢ় ও গভীর’ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে দেশটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘দৃঢ় ও বহুমুখী’ বলে বর্ণনা করেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) নিয়মিত সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে ‘ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইন’ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। তবে এই আহ্বান বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য আমদানির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।
ব্রিফিংয়ে, জয়সওয়াল অর্থনীতি, বিনিয়োগ, উন্নয়ন, যোগাযোগ এবং জনগণের মধ্যে বিনিময় সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের বিস্তৃত পরিসরের উল্লেখ করে ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের অনেক ক্ষেত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন “আপনি এই বিষয়ে যে কোনও মানবিক প্রচেষ্টার নাম দিতে পারেন, যা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ,” ।
অংশীদারিত্বের গতির উপর জোর দিয়ে মুখপাত্র বলেন, “এটি দেখায় যে অংশীদারিত্ব কতটা প্রাণবন্ত এবং অব্যাহত থাকবে।”
গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বয়কটের কথা বলে আসছেন বিএনপির তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা।
ফেসবুকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পোস্ট আসছে। এদিকে, নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বয়কটের প্রতি দলের সমর্থন জানিয়ে কাশ্মীরি শাল ছুড়ে ফেলে দেন।
জদিও বিএনপির কতিপয় নেতা পরে দাবি করেন, এ বিষয়ে দলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, স্থায়ী কমিটিতেও কোনো আলোচনা হয়নি। রিজভী সাহেব যে এ কাজ করবেন তা তারা জানত না।
তবে নয়া পল্টনে বিএনপি আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়ে ব্যানারও দেখা গেছে।
বিএনপির এসব কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতারা যদি ঘরে ঘরে গিয়ে কনের ভারতীয় শাড়ি পোড়ান, তাহলে তাদের ভারতীয় পণ্য বয়কট হবে ‘বিশ্বাসযোগ্য’।
২৭শে মার্চ এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে পুড়িয়ে দিয়েছেন। যে নেতারা বলছেন ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন, তাদের স্ত্রীদের কত ভারতীয় শাড়ি? আমি জানি, ঈদের আগে পুত্রবধূরা বিএনপির মন্ত্রীরা ভারত থেকে শাড়ি এনে বিক্রি করতেন তাদের (বিএনপি নেতাদের) স্ত্রীদের কতগুলো শাড়ি ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে না কেন? বিএনপি নেতারা তাদের রান্নায় ব্যবহার করবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক কেন?
বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক নতুন নয়। এমন ডাক এর আগেও বেশ কয়েকবার দেখা গেছে। এই বিরোধীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে।
তবে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এ ধরনের আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের শক্তিশালী একটি অংশ ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রচার শুরু করেছে।
এরকম কিছু গ্রুপে অগণিত সদস্যও রয়েছে।
ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঢাকার গলিতে হ্যান্ড মাইক নিয়ে ভারতীয় পণ্য বয়কটের প্রচারণা চালাচ্ছেন এক যুবক।
ওই যুবক পিপলস রাইটস কাউন্সিল নামে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের কন্টেন্টে ‘ইন্ডিয়া আউট’ এবং ‘বয়কট ইন্ডিয়ান প্রোডাক্ট’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে।
পিপলস রাইটস কাউন্সিল এবং এবি পার্টির মতো কয়েকটি দলের নেতাকর্মীরা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বিভিন্নভাবে ভারতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন।
সর্বশেষ বিরোধী দল বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতাকে প্রচারণায় একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন যে ভারত সম্পর্কে ‘জনগণের ক্ষোভের’ কারণে এটি রাজনৈতিক আলোচনায় এসেছে।
তিনি বলেন, “ভারত আসলে কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই নির্বাচন চালু করেছে যাতে মানুষ ভোট দিতে না পারে বা বঞ্চিত হতে পারে। সেই বঞ্চনা থেকে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জনগণের ক্ষোভ কমানো বিএনপির কাজ নয়।”