আদালতের রায়ে আবরারের হত্যাকারীদের উৎসাহিত করা হয়েছে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার দেশের পক্ষে স্টেটাস দিয়েছিল বলে তাকে ছাত্রলীগ নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল। গোটা জাতি তার হত্যার প্রতিবাদ করেছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ছাত্র রাজনীতিও বন্ধ করে দেয় বুয়েট। ছাত্ররা তাদের সন্ত্রাসের রাজনীতি বন্ধ করতে বারবার আন্দোলন করছে।
কিন্তু আজ দেখলাম আদালত আবরারের খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, আদালতের রায় আবরারের খুনিদের উৎসাহিত করেছে। বাসা থেকে বের হবেন কি না, গোসল করবেন কি না, তাও আদালত সিদ্ধান্তে হতে হবে।তিনি বলেন, দেশে এখন শেখ হাসিনার কথাই আইন তিনি যদি বলেন, কাউকে ১৫ বছরের সাজা দিতে আদালত তাকে সাজা দিয়ে দিবে। তিনি আরও বলেন, দেশে ন্যায় বিচার থাকলে আজকে শেখ হাসিনা কারাগারে থাকতেন, বেগম জিয়া বাইরে থাকতে। আজ নয়াপল্টনে রিকশা শ্রমিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমানের নির্দেশনায় শ্রমিক দল রিকশা শ্রমিকদের সম্মানে ইফতার পার্টির আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ তালুকদার, লেবার পার্টির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, উলামা পার্টির অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার,. .যুবদলের মেহবুব মাসুম শান্ত, ওমর ফারুক কায়সার, জাকির হোসেন, ছাত্রদলের রাজু আহমেদ প্রমুখ।
ইল্লেখ্য, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে বলে রায় দিয়ে দিলো বাংলাদেশের আদালত:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সরওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন। রুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বুয়েটের ভিসি ও রেজিস্ট্রারকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ফলে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতিতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। আদালতে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জগলুল কবির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।
আদালতে শুনানিতে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আইনত রাজনৈতিক সংগঠন নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা তাদের নেই। কোনো প্রতিষ্ঠানকে এভাবে বন্ধ করার কোনো অধিকার বা কর্তৃত্ব তাদের নেই। আদালত শুনানি গ্রহণ করে এ রুল ও স্থগিতাদেশ দেন।
শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, সংবিধানের ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের নোটিশ দেওয়ার কোনো ভিত্তি নেই। সমাবেশ করার অধিকার, রাজনৈতিক দল এবং বাক স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রদত্ত। বুয়েট অধ্যাদেশ, ১৯৬১ রাজনীতির নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কিত। নিষেধ করার ক্ষমতা নেই। তারপরও ছাত্রলীগ নোটিশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে বাধা দেওয়া হয়। এরপর রাজনীতি নিষিদ্ধের নোটিশটি আমাকে দেখানো হলে আমি বলেছিলাম, এটা মৌলিক অধিকার ও বুয়েট অধ্যাদেশের লঙ্ঘন। আদালত রুল জারি করে বুয়েটের প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেন। ফলে বুয়েটে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আর কোনো বাধা রইল না। আদালতে শুনানিকালে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।
১১ অক্টোবর, ২০১৯, বুয়েট ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রহিম বুয়েট কর্তৃপক্ষের জারি করা ‘জরুরী বিজ্ঞপ্তি’র বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় সারারাত ধরে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের কর্মীরা এবং নেতারা নির্দয়ভাবে কষ্ট দিয়ে এবং পিটিয়ে পৈচাসিক কায়দায় হত্যা করে । এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১অক্টোবর, ২০১৯-এ জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বুয়েটের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপর থেকে বুয়েটে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ছিল।
কিন্তু ছাত্রলীগ এটা আদালতের মাধ্যমে আবারও তাদের রাজনীতির সেই পুরানো চেহারা জায়েজ করার চেষ্টা করছে মেধাবীদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এবং আদালত আইনের মার-প্যাচ দেখিযে ছাত্রলীগের পক্ষ নিয়েছে। আর সেই কারণেই রিজভী সাহেব বলেছেন আবরারের রক্তের সাথে গাদ্দারি করেছে আদালত।