December 3, 2024
আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো নাঃ বুয়েট সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ

আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো নাঃ বুয়েট সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ

আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো নাঃ বুয়েট সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ

আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো নাঃ বুয়েট সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ

বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে; গুন্ডা ছাত্রলীগ নির্যাতন করে পৈশাচিক ভাবে হত্যা করার পর থেকেই ছাত্রলীগ সহ সকল রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েটে প্রশাসন। সেভাবেই চলছে অনেক বছর। কিন্তু তারপরও নির্লজ্জভাবে ছাত্রলীগের ক্যাম্পাসে প্রবেশের পায়তারা ঠেকাতে ক্ষেপে উঠেছে মেধাবী শিক্ষার্থীদের  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।

ছাত্র রাজনীতি ছাড়া নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে দৃঢ় সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এ সময় বুয়েট ঘোষণা দেয়, ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত, অশুভ শক্তির কবল থেকে মুক্ত হলে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরে আসবে।

রোববার (৩১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টায় বুয়েট প্রশাসন ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, বারবার প্রতিবাদের পরও ছাত্রলীগের নেতারা অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসের জন্য বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা না রেখেই বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে আনার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। শুধু নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি নিয়ে লাগাতার অসন্তোষ এখন সহিংস আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।

তাই মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। আমরা বুয়েটকে সকল রাজনৈতিক ও নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে মুক্ত রাখার অঙ্গীকার করছি। আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেব না।

ছাত্র রাজনীতি শুরু হলে সবাই ক্ষমতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবে জানিয়ে তারা বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চর্চা, কমিটি দেওয়া, ক্যাম্পাসে শোডাউন, রাজনৈতিক সংগঠনের জনসমাবেশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত রাখার নিয়ম লঙ্ঘন।এ ছাড়া রাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ যেখানে বুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ, সেখানে রাত ৩টায় একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সাংগঠনিক নেতাদের দলেবলে প্রোগ্রাম করা অবশ্যই একটা স্বাভাবিক ঘটনা নয় এবং সাংগঠনিক রাজনীতির প্রভাবে ঘটা ঘটনা।

বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সব সময় চায় একটি নিরাপদ ও রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস, যেখানে সবার নিরাপত্তা, শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ক্ষমতা প্রয়োগের লোভ লালসার শৃঙ্খলে আর জিম্মি হবে না।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদকে হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে বুয়েটের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে বুয়েটের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি মানছে না। এবং ২০২২ সালে, ঢাবি ছাত্রলীগ নেতারা সমাবেশ/মিছিল করে বুয়েটে হামলার হুমকি দেয়।

ছাত্র রাজনীতি না থাকায় ক্যাম্পাসের সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে  উল্লেখ করে তারা বলেন, গত কয়েক বছরে ছাত্র রাজনীতি না থাকলেও সুস্থ নেতৃত্ব ও নৈতিক বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে বিদ্যমান ছিল। এবং এতে ছাত্ররা নেতৃত্ব চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ পায়। প্রতিটি বিভাগের বার্ষিক উৎসব, প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম ও একাডেমিক সংগঠন, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ, বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও আনন্দের সাথে সম্পন্ন হচ্ছে। আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ক্ষমতার মহড়া ছাড়াও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সভা-সেমিনার আয়োজন, জাতীয় সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের আয়োজন, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।  রাজনৈতিক মুক্ত ক্যাম্পাসের জন্যই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহ-শিক্ষামূলক কর্মসূচিতে এবং গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন।

রাজনীতির চর্চা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা গবেষণার দিকে ঝুঁকছে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান বুয়েটে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশের কারণে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণামুখী কাজে মনোনিবেশ করতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার হার বাড়ছে। প্রকৌশল ক্ষেত্র উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্নাতকের শেষ বর্ষে থিসিস কাজ পাঠ্যক্রমের অংশ হলেও দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা গবেষণার কাজে যুক্ত হয়। একটি রাজনৈতিক নিরাপদ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য সারা দেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও প্রশংসিত হয়েছে। তাই রাজনীতিমুক্ত বুয়েটে বিগত ৫ বছরে সব ধরনের সফলতা পেলেও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা কখনোই ক্যাম্পাসকে নিয়ে অপবাদ দেয়াকে যৌক্তিক মনে করে না।

ছাত্ররাজনীতি মানেই স্বাধীনতা বিরোধী বা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা- এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, বুয়েটের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে সৎ সাহসিকতার সঙ্গে দেশবাসীর সামনে এটা স্পষ্টভাবে বলতে চায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সদা জাগ্রত বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি না চাওয়ার মানে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়া নয়। আমরা শুধু চাই ক্ষমতার লোভ ও অপব্যবহার যেন আবার না আসে যে রাজনীতি  আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে রাখে। আমরা সকল শিক্ষার্থী  আমাদের হৃদয়ে আমাদের দেশপ্রেম, স্বাধীনতার চেতনার অনুশীলন লালন করি।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ, ২০২৪ মধ্যরাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকে। বুয়েটের ছাত্র ইমতিয়াজ রাব্বি ছাত্রলীগ নেতাদের ক্যাম্পাসে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর বুয়েটে এমন কর্মকাণ্ডকে নতুন রাজনীতির পায়াতারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে আবারো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X