সরকার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল
’একতরফা ডামি’ নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতা দখল দীর্ঘ করার চেষ্টায় সরকার বেপরোয়া ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারি অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদের জ্বলন্ত দিন। মাতৃভাষার জন্য জীবন বিসর্জন দিয়ে তারা যে আত্মত্যাগের গৌরবময় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় আমরা গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। অর্জিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ২১শে ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবোধ ও অধিকারবোধ পূর্ণতা পায়। সেই চেতনাকে ধ্বংস করে জনগণের কাঁধে একদলীয় শাসনের পাথর বসানো হয়েছে। গোটা জাতিকে দুঃশাসনের জালে আটকে রাখা হয়েছে, গণতন্ত্রকে কবর দেওয়া হয়েছে। জনগণের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ ও অবৈধ ক্ষমতার জোরে সাজানো মিথ্যা মামলায় আনুষ্ঠানিক সাজা দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া হয়। ৭ জানুয়ারির একতরফা ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ক্ষমতা আবারো বাড়ানোর প্রচেষ্টায় অবৈধ সরকার বেপরোয়া ও অত্যাচারী হয়ে উঠেছে।
চলমান ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ একুশের চেতনায় দাঁড়িয়ে আছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ঊনবিংশ শতাব্দীর চেতনায় উদ্বুদ্ধ এদেশের সংগ্রামী জনগণ মৃতপ্রায় গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে আরও জোরদার ও তীব্রতর করবে। ভাষাশহীদদের গৌরবময় অবদানের কারণে আজ সারা বিশ্বে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এটি বিশ্বজুড়ে ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং বহুভাষিকতা প্রচারের একটি দিন। ২১ফেব্রুয়ারী একটি জাতি হিসাবে আমাদের মাতৃভাষার প্রতি আমাদের ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করার একটি গর্বের দিন। চর্চার মাধ্যমে আমাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। যাতে বিশ্বসভায় জাতি হিসেবে আমাদের সম্মান ও মর্যাদা উচ্চ স্থান লাভ করে।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন দলের সদ্য মুক্তি পাওয়া মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে এক ঘণ্টা গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজে অবস্থান করেন তিনি। কারাগার থেকে মুক্তির পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করেছেন। এসময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। মির্জা ফখরুলের অসুস্থতার খোঁজখবরও নেন ম্যাডাম।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গত ২৮ অক্টোবর গুলশানের বাসা থেকে মির্জা ফখরুল ও ২ নভেম্বর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে অসুস্থ মির্জা ফখরুল। গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে যান সেখানে তিনি গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাঃ অধ্যাপক শামসুল আরেফিনকে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সার্টিফিকেট দেন। চিকিৎসকের পরামর্শে গুলশানের বাসায় তার চিকিৎসা চলছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় মহাসচিব অসুস্থ ছিলেন। তিনি প্রায় ৬ কেজি ওজন হ্রাস করেছিলেন এবং বিভিন্ন উপসর্গ ছিল। তিনি একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে যান। এখন তার শারীরিক অবস্থা ভালো। বাড়িতেই তার চিকিৎসা চলছে। বৃহস্পতিবার আবার একই হাসপাতালে টেস্ট করাবেন।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সাধারণ সভা শুরুর আগে কাকরাইলে দুপুর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এরপর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বিজয়নগর জলাশয় ও শান্তিনগর এলাকায়। একপর্যায়ে বেলা ৩টার দিকে বিএনপির সাধারণ সভা বন্ধ হয়ে যায়। ওই সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য নিহত হন। এতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়াও ২০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর মির্জা ফখরুলকে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এরপর প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা ও ভাংচুরের একটি মামলায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার জামিনের আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাসহ ১১টি মামলা হয়েছিল । অন্য মামলায় তিনি জামিন পেলেও প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় জামিন অনেক দিন পিছিয়ে ছিল। অবশেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায়ও জামিন পান তিনি।
১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিনের চিঠি। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।