November 23, 2024
গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের আকুতি ওদের ফিরিয়ে দিন

গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের আকুতি ওদের ফিরিয়ে দিন

গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের আকুতি ওদের ফিরিয়ে দিন

গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের আকুতি ওদের ফিরিয়ে দিন

গুম খুন জেল জুলুম হুলিয়া আর বিরোধী মতকে অন্যায় ভাবে দমনের অগণতান্ত্রিক পন্থা চেপে বসেছে বাংলাদেশ নামক সুন্দর ভূখন্ডে। গণতান্ত্রিক মানবিক সরকার ছাড়া কোনভাবেই এর বিহিত সম্ভব নয়।

এই পরিবারগুলো চায়, এটা কি অন্যায়? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করতে পারছে না, মামলা করলেও নেয় না, মামলা করলেও তদন্ত হয় না। সুস্পষ্ট অভিযোগ করেও কোনো জবাব নেই কেন? কারণ এর সঙ্গে রাষ্ট্র জড়িত।

বৈঠকে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কারো সন্তান, কারো বাবা, কারো স্বামী গুম হয়েছে। স্বজন হারিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন অনেকে। তবুও পথ চেয়ে বসে আছে প্রিয় মানুষটির আশায়। এ সময় স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বাতাস। তারা তাদের স্বজনদের খুঁজে বের করার জন্য সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে আবেদন করেছে।

২৯আগস্ট, ২০২৩, সকাল ১২ টার দিকে, র‌্যাব ইউনিফর্ম এবং সাদা পোশাকে ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বড় নলগ্রাম, গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের মৃত আব্দুর রবের ছোট ছেলে ইলেকট্রিশিয়ান রহমতুল্লাহ (২০) কে তুলে নিয়ে যায়। গত ৫ মাসে র‌্যাব কার্যালয়, বিভিন্ন ডিবি কার্যালয়, বিভিন্ন থানা ও হাসপাতালে ঘুরেও তার সন্ধান পায়নি পরিবার। নিখোঁজ রহমতুল্লাহকে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তার মা মমতাজ বেগম।

সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। এ সময় মা মমতাজ বেগম কেঁদে বলেন, “আমার কলিজার টুকরো রহমতুল্লাহকে ফিরিয়ে দাও। তিনি বললেন, আমি কার সঙ্গে থাকব?আমার শ্বাসপ্রশ্বাস রহমাতুল্লাহ। নিখোঁজ হওয়ার ৮দিন আগে থেকেই প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিল। কিছু খেতে পারছিল না। আমার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল, আমার পাশ থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো, আজও ফিরে এলো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বলে দিন, আমি কোথায় কার কাছে  গেলে আমার সন্তানকে ফিরে পাবো”

এভাবে কাঁদতে কাঁদতে তিনি  বাকরুদ্ধ হয়ে যায় । সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রহমতুল্লাহর বড় বোন রাজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, আমার বাবা ২০১৩ সালের ১৮ এপ্রিল মারা গেছেন। আমি পরিবারের বড় মেয়ে, আমার সৎ ভাই ওবায়দুর বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। তার স্ত্রী সাথী আক্তার, আমার মা মমতাজ বেগম এবং আমাদের ছোট ভাই রহমতুল্লাহ একই বাড়িতে থাকেন। গত ২৯ আগস্ট রাতে আমাদের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়ির প্রধান গেটে ধাক্কা দেয়। বাড়ির দরজা ও প্রধান ফটক খুলে মা বাইরে এলে কয়েকজন ঘরে ঢুকে আমার ভাই রহমতুল্লাহকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়।

কেন নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তারা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে। পরদিন আমার মা মানিকগঞ্জ ও ধামরাইয়ে গেলেও পুলিশ কোনো তথ্য দেয়নি। পরে ৭ অক্টোবর ২০২৩ ধামরাই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজ হওয়ার ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও আমার ভাইয়ের সন্ধান মেলেনি। আমার মা খুব অসুস্থ। আমার ভাই কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন, তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো মামলা হয়নি। তারপরও যদি সে কোনো অন্যায় করে থাকে তাহলে তাকে গ্রেফতার করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া যেত, তাহলে আমরা জানতে পারতাম সে কী অপরাধ করেছে। কিন্তু এখন আমরা কিছুই জানি না।

তিনি বলেন, সারাদেশে আমার ভাইয়ের মতো শত শত মানুষ গুমের শিকার হয়েছে। মায়ের ডাক তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমার ভাইয়ের পাশেও দাঁড়িয়েছে। আমি সবাইকে ফেরত চাই। মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলির সভাপতিত্বে এবং মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা’র পরিচালনায় এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন রহমাতুল্লাহ’র বড় খালা সায়রা খাতুন। অন্যান্য ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঝুমুর আক্তার, বেবি আক্তার, মিনু আক্তার, ইমন ওমর, হ্যাপি আক্তার সুমনি, লামিয়া আক্তার মিম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য মানুষকে গুম করা হয়েছে। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্যই তাদের হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা কাজ করে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে, বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিতে, বাংলাদেশের ব্যাংক লুটপাট এবং কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করতে এসব গুম করা হয়েছে। এসব করা হয়েছে ভিন্ন মতের মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করার জন্য। আমরা যদি গুমের বিচার চাই, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই, তাহলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

যেকোন স্বৈরাচারের পতন  আর জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সঠিক বিচার পাওয়া সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X