নেতাকর্মীদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে কারাগারে ফেলে রাখা হয়েছে: রিজভী
কারাগারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত কয়েক দিনে বিএনপির ১০ জনের বেশি নেতাকর্মী কারাগারে মারা গেছেন। কারাগারে তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তাদের হাত-পা বেঁধে কারাগারের ভেতরে হাসপাতালে ফেলে রাখা হয়।
সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহিলা দল আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রধান নেতা জি এম কাদের কত কথা বললেন। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে না। তারা গতবার রাত্রি বেলায় নির্বাচন করেছেন। তারপরে শুধুমাত্র নিজের স্ত্রীর জন্য গোটা দলকে বিক্রি করে দিলেন! সেটা নিয়ে তার দলের লোকেরা প্রতিদিন স্লোগান দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ওবায়দুল কাদের বলছেন এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উদ্ভাবন করছেন।
রিজভী বলেন, কিন্তু ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনিও তো ছাত্রনেতা ছিলেন। আপনাদের নেত্রী বলছিলেন এরশাদের অধীনে নির্বাচন করলে তারা বেঈমান হবে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপনার নেত্রী এরশাদের অধীনে নির্বাচনে গেলেন! তাহলে দেশের তরুণ সমাজ কেন আওয়ামী লীগ করবে ? যারা ভন্ড হতে পারে আওয়ামী লীগ করবে তারা ।
আর মিথ্যাবাদী হলে তারা আওয়ামী লীগ করতে পারে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এক বিবৃতি দিয়েছে। আর আমাদের আইনমন্ত্রী (আনিসুল হক) প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রতিদিন বিএনপি কিভাবে নির্যাতিত হচ্ছে না শুনে তার ঘুম আসে না। সেই আনিসুল হক বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের বক্তব্যে তথ্যের অভাব রয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, এখানে বিচার ও আদালত নিজ গতিতে চলে। আইনমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলতে পারেন বলেই তো আওয়ামী লীগের মন্ত্রী। তিনি সত্য কথা বললে তো আর আওয়ামী লীগ করতেন না। আর সরকারের সঙ্গে কিছু বিষয়ে দ্বিমত থাকার কারণে দেশের প্রধান বিচারপতি নিজের জীবন নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এরপরও আইনমন্ত্রী সাহেব বলবেন, আইন ও বিচার ঠিক মত চলে?
রুহুল কবির রিজভী আরও অভিযোগ করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে।মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা দলের আহ্বায়ক রুমা আক্তার, সদস্য সচিব নাসিমা আক্তার কেয়া প্রমুখ।
এমন ডান্ডাবেড়ির ঘটনা ঘটলে আমরা বর্বর জাতিতে পরিণত হতে পারিঃ হাইকোর্টের মন্তব্য ।
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ডাণ্ডাবেড়ির পরানো অবস্থায় পটুয়াখালীর ছাত্রদল নেতা নাজমুল মৃধার বাবার জানাজায় অংশ নেয়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে বলেছেন, একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে আমরা অসভ্য জাতিতে পরিণত হতে পারি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কায়সার কামাল এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় গত বছরের ২০ ডিসেম্বর পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার দুপুর ১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাবার জানাজায় যোগ দিতে নাজমুলকে প্যারোলে মুক্তি দেন আদালত। প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর নাজমুল তার বাবার জানাজায় অংশ নেন। দাফন সম্পন্ন হওয়ার আগেই তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর বিএনপির ২৪ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে দলটির দাবি।
এই কারাগারে বন্দী নেতাকর্মীদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে কারাগারে বা হাসপাতালে মারা যাচ্ছেন।
গুরুতর অসুস্থ হলেও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দাঙ্গায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
পরিবারের দাবি, গ্রেফতারের আগে নিহত নেতারা সবাই সুস্থ ছিলেন। স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, কারাগারে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন বিএনপি নেতারা।
কারাগারে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না নেতাদের। সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। অনেক সময় শেষ মুহূর্তে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়।
২৬শে ডিসেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে মুগদা থানা শ্রমিক দলের নেতা অসুস্থ হয়ে পড়লে মো: ফজলুর রহমান কাজলকে ব্যান্ডেজ পরা রাজধানীর হার্ট ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ অবস্থায় গত ২৮ ডিসেম্বর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।