আওয়ামী লীগের জয়ে ভোটে শতাংশের খেলা
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টির বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার সময় বলেন, ভোটার উপস্থিতি ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ।
তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সিইসির ঘোষণার পর বলেন, “ভোটার ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। আমি নিজে কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি।”
রোববার ভোট গ্রহণকালে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম দুপুরে ব্রিফিংয়ে এসে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান। তবে ভোট শেষ হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল দাবি করেন, ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা প্রাথমিক হিসাব। পরে কমবেশি হতে পারে।’ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৯৮টি আসনে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ইসি সচিব বলেন, ভোট পড়েছে ২৭. ১৫ শতাংশ, তাহলে এক ঘণ্টায় সাড়ে ১৪ শতাংশ ভোট হলো কীভাবে? জবাবে তিনি বলেন, “দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ছিল। সচিব বললেন দুপুর আড়াইটা মানে , বিকেল তিনটে না।”
কমিশন ৪০ শতাংশ করেছে এটা ম্যাজিক: এম সাখাওয়াত হোসেন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ব্যাখ্যায় আরও বলেন, “ঢাকার পাঁচ-দশটি কেন্দ্রে গিয়ে ভোটের চিত্র বোঝা যাবে না। শহর ও গ্রামাঞ্চলে ভোটের চিত্র ভিন্ন। আর গতকাল (রোববার) যখন আমি বলেছিলাম, ৪০ শতাংশ। ড্যাশবোর্ডে সম্পূর্ণ তথ্য আসেনি। আংশিকভাবে যা এসেছে, সেখান থেকে মনে হচ্ছে ৪০ শতাংশ। সব ফলাফল ঘোষণা হলেই চূড়ান্ত শতাংশ গণনা করা যাবে।”
তিনি বলেন, কারো কোন সন্দেহ, সংশয় থাকলে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, আর যদি মনে করেন অতিরঞ্জিত হয়েছে, তাহলে আপনাকে মোস্ট ওয়েলকাম, কে চ্যালেঞ্জ করবেন? আমাদের অসততা, আপনি যদি মনে করেন, তাহলে যাচাই করে দেখতে পারেন। ”
নির্বাচন কমিশনের ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, ২২৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। জাতীয় পার্টি জিতেছে ১১টি আসনে। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকা প্রতীক নিয়ে একটি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ, আইএনইউ) নৌকা প্রতীক নিয়ে একটি আসনে জয়ী হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি আসনে জয়ী হয়েছে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঘড়ি প্রতীক নিয়ে ৬১টি আসনে জয়ী হয়েছে।
সিইসি জানান, মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৫ লাখ ১ হাজার ৫৮৫ জন, এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪৫ জন। এর শতাংশ ৪১.৮ শতাংশ।
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে মতানৈক্যঃ
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জেএনপি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, “আমি যে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছি সেখানে খুব কম ভোটার দেখেছি। বিশাল লাইনে ভোট দিতে খুব কম জায়গা দেখেছি। আমাদের দেশেও ৯০% ভোটের রেকর্ড আছে। এখন নির্বাচন কমিশন যা বলছে তা মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।”
তিনি বলেন, তবে কত ভোট বৈধ বা গ্রহণযোগ্য হবে সে বিষয়ে কোনো আইন বা নিয়ম নেই। শূন্য ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারেন।”
তার মতে, “বিএনপির বয়কট এবং নির্বাচনে কী হবে তা নিয়ে জনগণের পূর্ব ধারণার কারণে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম।”
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি নিজে ভোট দিয়েছি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর দেখেছি। আমি নিজেই বলেছি ৩০-৩৫ শতাংশের বেশি ভোট হবে না। একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে এবং আমরা দেখলাম। সেই অ্যাপে ২৮ শতাংশ ভোট। এরপর যা হল, নির্বাচন কমিশন জাদুকরী ভাবে ৪০ শতাংশ করল! হতে পারে, আমার হিসাব ভুল। কিন্তু আমি যা দেখলাম তাতে ২৮ ও ২৮ শতাংশই সঠিক ছিল। এখন বলছি এটা হবে না। নির্বাচন কমিশন যা বলবে তাই হবে।। এটাই আমাদের মেনে নিতে হবে। কেউ চ্যালেঞ্জ করলে হয়তো আবার জরিপ করা হবে।”
এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, কে কী বলল, সেটা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। দেশের জনগণের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য কিনা সেটা এখন কে মাপবে? এটা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য!”
এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বৈধতা নির্ভর করে না ভোটের সংখ্যার ওপর। নির্বাচন কমিশন আগেই বলেছে, পাঁচ শতাংশ ভোট পড়লেও নির্বাচন বৈধ। আর জনগণের ধারণার কোনো শেষ নেই। তুলনা করুন কীভাবে আগের নির্বাচনে ভোট দেওয়া হয়েছিল। ৮০% ভোটের সাথে তুলনা করুন।”