ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন আ: লীগ
বিএনপি বিহীন নিরামিষ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসার প্রতিযোগিতায় নেমেছে আওয়ামী লীগ এবং সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে এক লক্ষ টাকা এভাবে ৭৫ হাজার ৫০ হাজার ২৫ হাজার টাকা। যে বেশি ভোটার নিয়ে আসতে পারবে আওয়ামী লীগের সেই কর্মীকে এভাবে টাকা প্রদান করা হবে ।
বি.বাড়িয়ার আখাউড়ায়। লাখ টাকা পুরস্কার। লটারি নয়, ভোটকেন্দ্রে বেশি ভোটার উপস্থিত থাকলে পুরস্কার দেওয়া হবে। আর এ পুরস্কার পেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আলীগের নির্বাচনের জন্য গঠিত ওয়ার্ড কমিটির নেতারা।
আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, আইন-বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তাকে বিজয়ী করতে কসবা ও আখাউড়া দুই উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। হেভিওয়েট প্রার্থী আনিসুল হক নিজেই ভোটের মাঠে ব্যস্ত। তিনি ১৯ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা থেকে আখাউড়ায় এসে প্রচারণা শুরু করেন। ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ শেষে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। ২৮ ডিসেম্বর ভোটের দিন পর্যন্ত তিনি আবার এলাকায় আসবেন।
২ প্রতিযোগী আছে. তাদের একজন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাহীন খান (আম) এবং আরেকজন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ জাফরুল কাদ্দুস (ফুল মালা)। জাফরুলকে কয়েকদিন আগে খাদেরা এলাকায় প্রচারণায় দেখা গেলেও শাহীন এলাকায় নেই। জাফরুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাটা গ্রামে। এ কারণে ওই আসনের ওই দুই উপজেলায় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত। ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে ডোর টু ডোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু আখাউড়ায় ব্যতিক্রম। সেখানে ওয়ার্ড কমিটির জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। যে ওয়ার্ড কমিটি তার কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ভোটার আনতে পাবে সে পুরস্কার পাবে। প্রথম পুরস্কার ১ লাখ টাকা। এভাবে ২য় পুরস্কার ৭৫ হাজার এবং তৃতীয় পুরস্কার ৫০ হাজার ঘোষণা করা হয়েছে। জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল ৪/৫ দিন আগে দলীয় নেতাকর্মী ও ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে এ পুরস্কার ঘোষণা করেন।
পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মো. বাবুল মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পৌরসভার প্রতিটি ইউনিয়ন ও ৯টি ওয়ার্ডের জন্য মেয়র এ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। পুরো থানা ও পৌরসভার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্তর্ভুক্ত নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক বিশাল বৈঠকে তিনি এ ঘোষণা দেন। যারা সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে তারাই পুরস্কার পাবে। ১ম পুরস্কার ১ লাখ, ২য় পুরস্কার ৭৫ হাজার এবং তৃতীয় পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা। এতে সাড়া পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ঘরে ঘরে কাজ করছি। কোন ত্রুটি আছে? যারা ঘরে ঘরে গিয়ে বেশি ভোটার আনতে পারবেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে। তাছাড়া দলমত নির্বিশেষে সবাই বলছে ভোট দিতে আসবে। আইনমন্ত্রী একজন ভালো মানুষ, একজন সৎ মানুষ। এ কারণে মানুষ তাকে ভোট দিতে আগ্রহী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্ড কমিটির এক নেতা বলেন, এই ঘোষণার পর কীভাবে ভোটারদের বাড়ি থেকে আনা যায় তা নিয়ে কাজ করছি। ভোটাররা সাড়া দিচ্ছেন। তবে আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফা কাজল বিষয়টি মানেননি। বলেছেন- আমরা তো তেমন কিছু করিনি।
তবে নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন আরেকটি উপজেলা কসবায় ভোটারদের আনার জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রাশেদুল কাউসার ভূঁইয়া জীবন বলেন- আমরা সবাইকে ডাকছি। এখানে জনগণ ইতিমধ্যেই আনিসুল হককে ভোট দিতে স্বতঃস্ফূর্ত। আমরা আয়োজন করছি, ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিতে বলছি। কাজ করছেন ওয়ার্ড নেতারা, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।
সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা কসবা ও আখাউড়া নিয়ে এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৫৯০ জন। এর মধ্যে আখাউড়া উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ২০৪ জন। কসবা উপজেলায় ভোট ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৮৬ জন।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ভোটের খেলা বলে মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিবেচনা করলেও এটি কোনো নির্বাচন নয়। কারণ, নির্বাচনের যে সংজ্ঞা, নির্বাচনের ব্যাকরণ- থেকে নির্বাচন করার যে সুযোগ রয়েছে, তা এই নির্বাচনে নেই। নির্বাচন করতে হলে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকতে হবে।
ডাঃ বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা এখন ভয়াবহ সাংবিধানিক সংকটে আছি। মূলত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে ফিরিয়ে আনা নির্বাচনী ব্যবস্থা অসাংবিধানিক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দশম ও একাদশ নির্বাচন না হওয়ায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করা হয় এবং গণভোট না করেই সংশোধনী পাস করা হয়। তাই বর্তমান সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একইভাবে আইন লঙ্ঘন করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করায় কমিশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি না থাকলে আওয়ামী লীগ চাইলে সব আসনে জয়লাভ করতে পারে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
তারা আসন ভাগাভাগি করে কিছু আসন অন্যদের দিতে পারে । তারা তাদের অনুগত দলগুলোকে কিছু আসন দিতে চায়। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলের মহাসচিব তার পোস্টারে লিখেছেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের মনোনীত ও সমর্থিত।
সুতরাং এই নির্বাচন হলে বৈধতা দূর হবে না।