প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে নৌকার প্রার্থীর গোপন বৈঠক, ম্যাজিস্ট্রেট দেখার পর পণ্ড
নৌকার প্রার্থী বর্তমানএমপি প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের আয়োজন করেন। সেখানে হঠাৎ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত হাজির হয়। এ ঘটনায় প্রিজাইডিং অফিসাররা ক্ষিপ্ত হয়ে পালাতে শুরু করেন। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা শহরের একটি অভিজাত হোটেলে এ ঘটনা ঘটে।
ওই সংসদ সদস্য কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুল।
সরেজমিনে হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, দেবিদ্বার উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে হোটেলের চতুর্থ তলায় কলেজ শিক্ষকদের (প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে তালিকাভুক্ত) নিয়ে বর্ষবরণ সভার আয়োজন করা হয়। যেখানে শুধু এমপি আশীর্বাদপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে যারা আবেদন করেছেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ায় গোপন বৈঠকে আসেননি কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল।
ম্যাজিস্ট্রেটের আগমনের খবর পেয়ে ছুটে আসেন দেবিদ্বার আলহাজ্ব জোবাইদা খাতুন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক নূর মোহাম্মদ বাবু। তিনিও সংগঠকদের একজন। তিনি প্রথমে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি আবার বলেন, তিনি দেবিদ্বার উপজেলার কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতা। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি তার রাজনৈতিক দলের পরিচয়ও দেন। ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকায় অনুষ্ঠান আর শুরু হয়নি। পরে একে একে সবাই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সমাবেশে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের অনেকেই তালিকাভুক্ত। এখানে শুধু এমপির ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এমপি সাহেবের আসার কথা ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে আয়োজকরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এমপি স্যার (রাজী মোহাম্মদ ফখরুল) অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি।
অনুষ্ঠানের আয়োজক সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল সমর্থিত নেত্রী কুমিল্লা উত্তর জেলা সৈনিক লীগের আহ্বায়ক ও দেবিদ্বার আলহাজ্ব জোবাইদা খাতুন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক নূর মোহাম্মদ বাবু বলেন, আমরা কলেজ শিক্ষকদের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি এখানে কোনো রাজনৈতিক সমস্যা নেই। রাজনৈতিক ইস্যু নয়, কেন উপজেলার সব কলেজের শিক্ষকদের আনা হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি চলে যান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার অতীশ সরকার বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর আয়োজকরা আমাদের জানান, এটি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি। তবে আমরা তালিকা চেয়েছি। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বেশি করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গঠিত নির্বাচনী তদন্ত কমিটি ২১১ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আমলে নিয়ে এ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ বা চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ৯১ জন। আবার তাদের মধ্যে ৫২ জন বর্তমান সংসদ সদস্য।
১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ দিনে ৩৬টি স্থানে হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায় হামলা হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের ওপর।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ (রাজির-সদর আসন) আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান নৌকার বাইরে গেলে কেউ কিছু বললে গলা কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নির্বাচনী তদন্ত কমিটি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে।
জামালপুর-৫ (সদর) আসনে সরকারি ভাতাভোগীরা নৌকা প্রার্থীর সভায় অংশ না নিলে নির্বাচনের পর ভাতার কার্ড বাতিলের হুঁশিয়ারি দিলে গতকাল আওয়ামী লীগ নেতা হাতেম আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন তদন্ত কমিটি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী আচরণবিধি মানা হচ্ছে কি না তা দেখতে প্রায় ৮০০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এখন মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া ‘প্রাক-নির্বাচন অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে প্রতিটি আসনে নির্বাচনী তদন্ত কমিটি রয়েছে। তারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও তদন্ত করতে পারে। কিন্তু তারা নিজেরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। কমিটিগুলো ইসির কাছে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারে। কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দলকে ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা বা প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে।