November 21, 2024
গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাত থকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট: সিপিডি

গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাত থকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট: সিপিডি

গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাত থকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট: সিপিডি

গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাত থকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট: সিপিডি

ঢাকা: ২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১৯ টি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে ২৪ টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি জানিয়েছে।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় সিপিডির কার্যালয়ে এ তথ্য জানান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে ১৫ বছর ধরে শুধু  গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই হিসাব দিয়েছে সংস্থাটি।

২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। গত ১৫ বছরে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ২৪টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারিতে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এই অ-কাজ যেভাবে হয়েছেঃ

  • রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপ নিয়ে গেছে ৪ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।
  • জনতা, প্রাইম, যমুনা, শাহজালাল ও প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ গ্রুপ নিয়ে গেছে ১ হাজার ১৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
  • ২০১৫ সালে বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ঘটনায় ৬০টি মামলা করেছে ১২০ জনের বিরুদ্ধে।
  • এননটেক্স জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট মূলধনের ২৫ শতাংশ।
  • থার্মেক্স গ্রুপ ২০১৬ সালে এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ৮১৬ কোটি টাকা ঋণ নেয়, যদিও জনতা ব্যাংকে ওই কোম্পানির ঋণ সীমা ছিল ২৬৪ কোটি টাকা।
  • ২০২০ সালে জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ সীমা লঙ্ঘন করে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ ১ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালে গ্লোবাল ট্রেডিং ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ নেয়।
  • এবি ব্যাংকে ১৬৫ কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের ঘটনায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করে দুদক মামলা করেছে।
  • ২০২১ সালে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদার ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম করেন। এ ঘটনায় দুদক ৩৭টি মামলা করেছে তার বিরুদ্ধে।
  • এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ২০১৬ সালে ৭০১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয় অনিয়মের মাধ্যমে।
  • ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে এস আলম গ্রুপ বেনামি কোম্পানির মাধ্যমে। এ বিষয়ে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ঋণ অনিয়মের অনুসন্ধানের জন্য উচ্চ আদালতে পিটিশন দাখিল করেন এক আইনজীবী।
  • ইসলামী ব্যাংকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে অপরিচিত ৯ টি কোম্পানিকে নিয়ম লঙ্ঘন করে ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার ‍দেওয়া হয়। মিথ্যা তথ্যে রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিকে এই ঋণ দেওয়া হয়।
  • এছাড়াও ভুয়া কোম্পানিকে ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকার ঋণ দেয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ভুয়া দলিলের মাধ্যমে ঋণ, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসহ নানা ধরনের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকে কেলেঙ্কারি বা অনিয়ম হয় যা সরকারি সূত্রে পাওয়া যায় না। তারা প্রেসে আসে। গণমাধ্যম কর্মীরা তাদের সরকারী সূত্র থেকে যতটুকুন  আনতে পারেন। এগুলো সংকলন করে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৪টি ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এসব ঘটনায়ই চুরি হয়েছে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে কী হতে পারে হিসাব করে দেখতে পারেন। আপনি কি আমাদের রাজস্ব ঘাটতি গণনা করতে পারেন? সামাজিক নিরাপত্তায় কত টাকা ব্যয় হচ্ছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কত ব্যয় হচ্ছে। এই পরিমাণ টাকা  দিয়ে আমরা কি করতে পারি?

তিনি আরও বলেন, এ পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও অপচয় করা হচ্ছে; ব্যাংকে থাকা টাকা জনগণের টাকা, কীভাবে খরচ হচ্ছে তা ভাবার বিষয়। সে প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং খাতে বিধিবিধান বাস্তবায়ন ও সংস্কার করা জরুরি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতি নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যা নির্বাচনের পরও কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নীতিনির্ধারকদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায় থেকে পদক্ষেপ প্রয়োজন। উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি দমনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন, যাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন, সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X