প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক বক্তব্যঃ সংসদ সদস্য জাফরকে আ:লীগ থেকে অব্যাহতি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘অসম্মানজনক’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া, পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) জাফর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অসম্মানজনক বক্তব্য দেওয়া এবং বেপরোয়া আচরণ করায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম এমপিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কেন তাকে স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না, আগামী সাত দিনের মধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। সাত দিনের মধ্যে কোনো জবাব না দিলে তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ করা হবে।
জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অন্যায় করেছেন দাবি করে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রাখেন তাকে। এ বিষয়ে এমপি জাফরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মনোনয়ন না পেয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় পেকুয়ায় আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাফর আলম ‘আমি একবার মনোনয়ন পেয়েছি। কিন্তু আমি শতবার মৃত্যুর মুখে আপনার জন্য গিয়েছি। আমি আপনার জন্য আমার জীবনে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি। আমি কক্সবাজারে এক মিটিংয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ করেছি। আপনাদের থ্রি স্টার হোটেলে রেখেছি। মাতারবাড়িতে ৪০ হাজার মানুষকে একদিনের খাবার দিয়ে এক হাজার ট্রাক গাড়ি দিয়ে আমি জনসভাকে সফল করেছি। আর আপনি (শেখ হাসিনা) সেখানে ঘোষণা করলেন আশেক উল্লাহ রফিক এমপি প্রার্থী।’
তিনি বলেন, ‘শোনেন নেত্রী, আল্লাহ উপরে। আমি দোষ করলে আল্লাহ আমার বিচার করবে। কিন্তু আমি মনে করেছি এটা আমার প্রতি অবিচার হয়েছে। আমার মতো একজন সহজ-সরল কর্মীকে, আমাকে বারবার ঠকিয়ে আরেকজনের কাঁধে নৌকা দিয়ে আমার কাছ থেকে নৌকা কেড়ে নিয়েছিলেন। সেদিনও আমি হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে ভোট দিতে না পেরে নেতাকর্মীরা চোখের জল ফেলে চলে গেছে। সেদিনও আমি আপনার কথা শুনেছি।’
এমপি জাফর আলম বলেন, ‘সুতরাং এখন আপনি বলেছেন, সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র ভোট করতে পারবেন। আমি স্বতন্ত্র ভোট করছি। এখানে যদি আমি কারো কোনো ধরনের অশুভ পাঁয়তারা দেখি… আমরা চকরিয়ার মানুষ, শহীদ আব্দুল হামিদের চকরিয়া, আবুল কালমের চকরিয়া-পেকুয়া, এটা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চকরিয়া। এখানে কোনো অন্যায় আমরা বরদাস্ত করব না, করব না, করব না।’
এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন— আমার চেয়ে নৌকাকে ভালোবাসে এমন কে আছে? দিনে নৌকা রাতে বিএনপি, কার টেলিফোন রিসিভ করে, কার জায়গা দখল করে। সব আমার কাছে খবর আছে। আমাকে পেকুয়ার ভোট দেবেন কি দেবেন না সেটি আপনাদের ব্যাপার। চাঁদাবাজি, দখলবাজি এগুলা চলবে না… চলবে না, চলবে না… সোজা কথা।’
মঙ্গলবার বিকেলে পেকুয়ায় নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনকালে জাফর আলম বক্তব্য দেন। এরপর দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কথা বলেন তিনি। ওই বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে দলের কয়েকজন নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসম্মানজনক মন্তব্য করার অভিযোগ তোলেন। তবে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কোনো অসম্মানজনক বক্তব্য দেননি বলে দাবি করেন এই সংসদ সদস্য। আবেগে আপ্লুত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে কিছু কথা বলেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সংসদ সদস্য জাফর আলম। তার প্রতীক ট্রাক। সেখানে নৌকার মনোনয়ন পান সালাহউদ্দিন আহমেদ। কিন্তু খেলাপি হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়। পরে নির্বাচন কমিশন ও হাইকোর্টে আপিল করলেও তিনি প্রার্থিতা ফেরত পাননি।
চকরিয়া আ.লীগের ‘ঐক্য’ সভায় এমপি জাফরের আচরণবিধি লঙ্ঘন
ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও এমপি জাফর আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে বক্তব্য নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি বলেন, একটি মহল তার বক্তব্যকে বিকৃত করার চেষ্টা করছে। পুরো বক্তৃতা শুনলেই বোঝা যাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্যের কথা তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছেন। এসময় দলের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মনোনয়ন না পাওয়ার বেদনার কথা জানান তিনি। একটি নির্দিষ্ট অংশ তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করতে দেখে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। এটা তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।